ইনসাইড হেলথ

খাদ্যে ভেজাল ও এর প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি?


প্রকাশ: 24/02/2022


Thumbnail

দেশে আজ বিভিন্ন ডিজেনারেটিভ রোগ মহামারি আকার ধারন করেছে। যে রোগগুলো আগে ছিলোনা এখন হচ্ছে, নিত্য নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে দিনে দিনে আমাদের দেহ বিভিন্ন রোগের আবাসম্থলে পরিণত হচ্ছে অথচ ৪০-৫০ বছর আগেও এতো রোগের ছড়াছড়ি ছিলোনা। হাজারো রকমের রোগের প্রধান কারণ হলো ভেজাল খাদ্য। আজ ভেজাল খাদ্যের কারণে আমরা জাতীয় জীবনে অপুরনীয় ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছি। সময় এখন ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করার। খাদ্যে ভেজালকারীদের কঠোর শান্তির আওতায় আনতে হবে। খাদ্যে ভেজালকারী ও তার পণ্যকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ভেজালকারীর দোকানের পন্য আমরা কিনবো না। ভেজালকারীদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখবোনা। আসুন আমরা ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।

বিশ্বাস ঘাতকতার শাস্তি কি হবে?

খাদ্যে ভেজাল। আমাদের দেশের আদি সমস্যাগুলোর অন্যতম একটি। নীতি- নৈতিকতা, বোধ বিবেচনা, বিবেককে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কিছু মানুষ এই অন্যায় কাজটি করেই যাচ্ছে৷ তারা হয়তো ভাবছে খাবারে অল্প কিছু ভেজাল দেয়া এতে আর এমন কি হবে। কিন্তু তারা জানেন (হয়তো জানে না) যে একটি জাতি এবং এর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তারা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে ঠেলে দিচ্ছেন৷ তথ্যসূত্রঃ মানবকন্ঠ, ২১ মে, ১৯।

কী খেয়ে থাকা যাবে নিরাপদ! ভেজাল আতঙ্ক।

মাছেও ফরমালিন, দুধেও ফরমালিন। শাক-শবজি, ফল-ফলাদি সব কিছুতেই ফরমালিন মেশানো এখন ব্যবসা বাণিজ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা "খাদ্য" খেতে বসলেই মনে প্রশ্ন জাগে কী খাচ্ছি? খাবারের নামে ভেজালের বিষ নয়তো? এমন সন্দেহ, প্রশ্ন আর উদ্বেগ- আতঙ্কের মধ্যেই চলছে সবার খাওয়া-দাওয়া। খাদ্য পণ্যে বেশুমার ভেজালের পরিণতিতে শরীরে বাসা বাঁধছে জটিল রোগবালাই; অকাল মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। এছাড়া বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম নেওয়া, অন্বত্ব, ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, কিডনী এবং লিভারের জটিলতাসহ ১৫টি কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ভেজাল খাদ্যভোগী লোকজন। বাজারের ফল ফলাদি পর্যন্ত বিষে ভরা। প্রাকৃতিক শাক- সজির নামে সরাসরি কীটনাশক সেবনেরই নজির সৃষ্টি হয়েছে। তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিনঃ ২০ মে, ২০১৮।

ভেজালকারীরা মানুষকে তিলে তিলে মারছে

গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, যারা খদ্যে বিষ প্রয়োগ করে লাখ লাখ মানুষকে তিলে তিলে মারছে, আবার নকল ওষুধ প্রস্তুত করে পয়েজনিংয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে তারা উভয়ই হত্যাকারী। তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৬ জুন, ২০১৯।

মহামান্য হাইকোর্ট এক রিট আবেদনে গত ১২ মে, ২০১৯ বলেছেন; খাদ্যে ভেজালের কারণে দেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে বিএসটিআই মান পরীক্ষায় নিয়মান প্রমানিত হওয়ায় ৫২টি প্রতিষ্ঠানের খাদ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট আরও পর্যবেক্ষণ দেন খাদ্যে ভেজাল ও নিয়মানের পণ্য এবং খাবারের কারণে এ দেশ বসবাসের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যুদ্ধ ঘোষণার আহুন জানিয়েছেন। তথ্যসূত্রঃ দৈনিক মানবকন্ঠঃ ১৯ মে, ২০১৯।

ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে

প্রতিদিন আমরা কি খাচ্ছি? এসব খাবার নিরাপদ তো? খাদ্য গ্রহনকালে এমন নানা প্রশ্ন হরহামেশা আমাদের মনে ভিড় করে৷ বাড়িতে অথবা বাইরে, একজন মানুষ যেখানেই খাদ্য গ্রহন করুক না কেন, খাদ্য গ্রহনকালে তার চেতনার ভেতরে অবাঞ্চিত চিন্তী চলে আসে। এ সত্য এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। তথ্যসূত্রঃ দৈনিক মানবকন্ঠঃ ২৪ মে, ২০১৯)

নিষিদ্ধ ৫২ খাদ্যপণ্য বিক্রি চলছেই

বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় ভেজাল ও নিয়মানের প্রমানিত হওয়া ৫২ খাদ্য পণ্য প্রত্যাহারে হাইকোর্টের নির্দেশের পরও এখনো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানকে বাজার থেকে পণ্য সরাতে ৩/৪ দিনের সময় বেঁধে দিলেও এ নিয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। তথ্যসূত্রঃ দৈনিক মানবকন্ঠঃ ১৫ মে, ২০১৯।

৪১০ টন মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর দুই কোটি টাকা জরিমানা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার দুটি হিমাগারে গতকাল সোমবার অভিযান চালিয়ে ৪১০ টন মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর জব্দ করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলোঃ ৩০ এপ্রিল, ১৯।

তরল দুধে ক্ষতিকর উপাদান

বাজারে ১০টি দুধের নমুনার সব কটিতে দ্বিতীয় দফার পরীক্ষাতেও ত্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিকেল রিসার্স সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আব ম ফারুক ও তার সহ গবেষকরা জানিয়েছেন প্রথম দফায় তারা দুধে তিনটি ত্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন দ্বিতীয় দফায় মিলেছে চারটি। সাতটি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের নমুনা এবং খোলা দুধের তিনটি নমুনা একই জায়গা থেকে সংগ্রহ করে গবেষক দলের সদস্যরা দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা করে ১০টি নমুনার সবকটিতে ত্যান্টিবায়োটিক পেয়েছেন। তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিনঃ ১৫ জুলাই, ২০১৯।

৭১ ভোগ্যপণ্যের ৫৯টিই মানহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা।

# হলুদের গুড়ায় কাপড়ের রং দুধে আ্যান্টিবায়োটিক। তেলে ক্ষতিকর রাসায়নিক।
# পরীক্ষায় পাস্তুরিত তরল দুধের ৭টি নমুনাতেই আ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে।
# হলুদের দুটি নমুনা ছাড়া বাকি সব পণ্যেই ভেজাল অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে।

তেল, দুধ, মসলাসহ আট ধরনের ভোগ্যপণ্যের ৭১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে। পরীক্ষায় ৬৯টি পণ্যই মানোতরীর্ণ হতে পারেনি। পণ্যগ্তলোর বেশ কয়েকটিতে জ্যান্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে; ষা দীর্ঘ মেয়াদে নানা ধরনের জটিল রোগের কারণ হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি লেকচার থিয়েটারে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খাদ্যের গুণগত মান নিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মাসি অনুষদের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পণ্যগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে৷

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এবং বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক আব ম ফারুক। লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় এমন ঘির ৮টি, ফুট দড্রিংকসের ১১টি, শুকনা মরিচের গুঁড়ার ৮টি, পাম তেলের ১০টি, সরিষার তেলের ৮টি, সয়াবিন তেলের ৮টি, পাস্ভুরিত তরল দুধের ৭টি এবং অপাস্তুরিত তরল দুধের ৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডম জ্যান্ড টেষ্টিং ইনষ্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মানদন্ড অনুযায়ী পণ্যগুলো পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় হলুদের দুটি নমুনা ছাড়া বাকি সব পণ্যেই ভেজাল বা তিক সানি পাওয়া যেছে। এর মধ্যে পার্ভুরিত তরল দুধের ৭টি নমুনাতেই মানবদেহে ব্যবহার করা হয় এমন ত্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়।

আব ম ফারুক বলেন, ত্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের একটি নিয়ম আছে। মানবদেহে ব্যবহার করা হয় এমন জ্যান্টিবায়োটিক পশুর শরীরে ব্যবহার করার যায়না। কিন্তু খামারগুলোতে সেটি করা হচ্ছে৷ এছাড়া গরুর খাবারেও ত্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। এতে দুধ ও মাংসে এ্যান্টিবায়োটিক থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এই এ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত দুধ ও মাংস খেলে মানুষের শরীরে আর প্রয়োজনের সময় এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। পরীক্ষার সংগে সংশ্লিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিষ্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ বলেন, হলুদের গুড়ায় কাপড়ের রং পাওয়া গেছে। এই রং লিভার, কিডনীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, দীর্ঘ মেয়াদে ক্যান্সার হতে পারে। এমন রং যুক্ত খাবার খেলে শিশুদের হাপানি হয়।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি অনুষদের ডিন এস এম আবদুর রহমানও বক্তব্য দেন৷ তিনি বলেন, খাবার মানহীন হলে পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। এছাড়া বিষাক্ত রাসায়নিকও পাওয়া যাচ্ছে৷ নিশ্চয়ই এ বিষয়ে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলোঃ ২৬ জুন, ২০১৯। আজ জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন, কিভাবে আমরা ভেজালমুক্ত, বিষমুক্ত খাবার পেতে পারি? আসলেই কি সুখাদ্য পাওয়া সম্ভব?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭