ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি শুরু হয়ে গেল?


প্রকাশ: 25/02/2022


Thumbnail

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে কখন শুরু হতে পারে এবং কি ইস্যুতে শুরু হতে পারে তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ এবং গবেষণা। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়। ১৯৩৯ সালের আগেও এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তৎকালীন বিশ্বে সকল পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ রাষ্ট্রই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দুইটি বিপরীত সামরিক জোটের সৃষ্টি হয়; মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তি। সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং চীন নিয়ে গঠিত হয় মিত্রশক্তি। জার্মানি, জাপান, ইতালি, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া নিয়ে গঠিত হয় অক্ষশক্তি। ইউক্রেনে হামলা করে করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলার যেভাবে প্রতিবেশী দেশগুলো আক্রমণ করে নিজেদের দখলে নিয়েছিল, রাশিয়াও এখন সেই পথেই হাঁটছে কি না। সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্সি যুদ্ধও চালিয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এখন ঠিক যেমনটা দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে, যা এর আগে হয়েছে সিরিয়ায়। আর এই প্রক্সি যুদ্ধ লড়তে লড়তে এক সময় নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধ শুরু করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তিগুলো পরস্পরকে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইউক্রেন সীমান্তে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের আবহ তৈরি হওয়ার সময় থেকেই রাশিয়াকে ইউক্রেন আক্রমণ থেকে বিরত থাকার হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল পৃথিবীর শক্তিশালী ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে হুংকার দিলেও একসময় তাদের যে দর্প ছিল তা এখন অনেকটাই ম্লান। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে পুতিন আগেই ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের আয়োজন করে।

ইউক্রেন ইস্যুতে গোটা বিশ্ব এখন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে বলেই স্পষ্ট হচ্ছে। ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমর্থন জানিয়ে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের (ন্যাটো) ৩০টি দেশ আগে থেকেই রাশিয়ার আক্রমণ রুখতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছিল। কিন্তু উভয়-সঙ্কটে রয়েছে রাশিয়া সীমান্তে থাকা জোটের দেশগুলি। ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত ৩০টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশের অবস্থানই রাশিয়ার কাছাকাছি। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ২০০৪ সালে আমেরিকা এই দেশগুলোকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করে। তবে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের পক্ষে রাশিয়ার বিরোধিতা করা বেশ কঠিন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি সামলাতে রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়াতে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে আমেরিকাসহ ন্যাটোর অন্তর্গত অনেক দেশ রাশিয়ার নিন্দা করলেও, তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়াবে না বলেও জানিয়েছে। তারা ইউক্রেনের অভ্যন্তরে নিজ সামরিক বাহিনী না পাঠালেও, বাইরে থেকে অস্ত্র ও ওষুধের মতো যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করবে। এমনকি ন্যাটো দেশগুলো থেকে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধবিমান ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যও। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য রাশিয়ার ৫টি ব্যাংকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

অন্যদিকে, রাশিয়াকে সমর্থন দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র চীন। গত দুই দশক ধরে রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় রয়েছে। দুই দেশই অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। এমনকি মহাকাশ গবেষণাতেও বহু দিন ধরে জোট বেঁধে কাজ করছে এই চীন-রাশিয়া। এদিকে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সখ্যতার কথা কারও অজানা নয়। সেই বিবেচনায় রাশিয়াকে সমর্থন জানাবে পাকিস্তান সেটা বলাই বাহুল্য। তাই এই সঙ্কটে রাশিয়া সফরে গিয়েছেন ইমরান খান। এদিকে রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে উত্তর কোরিয়াও। পরমাণু চুক্তি নিয়ে আমেরিকা এবং ইরানের দ্বন্দ্ব সারা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানও রাশিয়াকেই সমর্থন করবে বলেই মনে করছে অনেক দেশ।

বর্তমান বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই চলছে অস্থিরতা। অনেক জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ সহিংস পরিস্থিতি। একের পর এক পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। কাশ্মীর ইস্যুতে আবার সীমান্তে গোলাগুলি শুরু করেছে ভারত-পাকিস্তান। পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা সামরিক ঘাঁটি আবার নতুন করে চালু করছে রাশিয়া। আর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও জঙ্গিবাদ দমনের প্রশ্নে ক্রমেই বিভক্ত হচ্ছে দুই বৈশ্বিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এই সাম্প্রতিক অবস্থানগুলো ক্রমেই ঘনীভূত করছে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা। রাশিয়াকে বারবার সতর্ক করেছিলো আমেরিকা। কিন্তু যুদ্ধ যখন শুরু হয়েই গেছে তখন আমেরিকা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ফলে, বর্তমান এই রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে তাই এমন প্রশ্নই উঠেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি শুরু হয়ে গেল?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭