ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাশিয়া-ইউক্রেন: সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?


প্রকাশ: 25/02/2022


Thumbnail

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছে রাশিয়া। আর এর মাধ্যমেই ইউরোপের মাটিতে আধুনিক যুগের যুদ্ধের দামামা বাজলো দুই সাবেক সোভিয়েত প্রতিবেশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মাঝে। সামরিক শক্তিতে পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিধর দেশ রাশিয়া। অন্যদিকে, সেই তালিকায় ২২তম দেশ ইউক্রেনের লড়াইটা শুনতেও যেমন অসম তেমনি সত্যিকার অর্থে বেশ অসামাঞ্জস্যও। পারমাণবিক শক্তিধর দেশ রাশিয়া অর্থনীতি, প্রযুক্তিগত এবং সামরিকসহ সবদিক থেকেই প্রতিবেশী ইউক্রেন থেকে যোজন-যোজন এগিয়ে। দুটো দেশের সৈন্য সংখ্যা, যুদ্ধবিমান, রণতরী বা সামরিক সরঞ্জামেও ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে, রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক সক্ষমতার বিস্তর ফারাক। 

১৯১৭ সালে রুশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। পরের বছর গড়ে ওঠে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯২২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংযুক্ত প্রজাতন্ত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি নতুন প্রজাতন্ত্রের জন্ম দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন হলো রাশিয়া। নতুন প্রজাতন্ত্রের একটি এখন পূর্ব ইউরোপের দেশ-ইউক্রেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ইউক্রেন। ইতিহাস বলছে, ইউক্রেন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ।

২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে শুরু হয় ইউক্রেন, ন্যাটোর সাথে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব। রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহীদের সাথে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। যুদ্ধ বন্ধে একটি আন্তর্জাতিক মিনস্ক শান্তিচুক্তি হয়েছিল। যদিও এ চুক্তি কাজে আসেনি। এ কারণে ইউক্রেন ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে চাইছিল। আর ইউক্রেনের এই ন্যাটোতে যোগদান করতে চাওয়ায় দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় কাল হয়েছে। কারণ ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান রাশিয়া তাদের নিজেদের নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। 

প্রতিবছর সামরিক ব্যায়ের নিরিখেও দেশদুটির মাঝে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। সামরিক খাতে রাশিয়া প্রতি বছর ব্যয় করে যেখানে প্রায় ১৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সেখানে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনের সামরিক ব্যয় মাত্র এক হাজার একশো ৮৭ কোটি ডলার। 

সৈন্য সংখ্যার দিক থেকেও দেশ দুটির মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। রাশিয়ার সৈন্য সংখ্যা যেখানে আট লাখ ৫০ হাজার সেখানে ইউক্রেনে সৈন্য সংখ্যা মাত্রা দুই লক্ষ। রাশিয়ার আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আড়াই লাখ, তবে ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র ৫০ হাজার।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেখে নেওয়া যাক যুদ্ধরত দুই প্রতিবেশী শক্তির পার্থক্য, 

সেনাবাহিনী



ট্যাঙ্ক: যুদ্ধ ক্ষেত্রের রাজা হিসেবে পরিচিত ট্যাঙ্ক। অসম্ভব শক্তিশালী সামরিক এই যানটি রাশিয়ার কাছে রয়েছে ১২ হাজার ৪২০টি, ইউক্রেনের ২,৫৯৬টি।

আরমার্ড পার্সোনাল ভেহিক্যাল: যুদ্ধক্ষেত্রের সৈন্য পরিবহণে আরমার্ড পার্সোনাল ভেহিক্যালের গুরুত্ব অপরিসীম। রাশিয়ার কাছে রয়েছে ৩০,১২২টি, ইউক্রেনের ১২,৩০৩টি।

স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি: রাশিয়ার কাছে রয়েছে ৬,৫৭৪টি, ইউক্রেনের আছে ১,০৬৭টি। এছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের ঘুম হারাম করার জন্য ব্যবহৃত হয় মোবাইল রকেট প্রজেক্টর। রাশিয়ার কাছে রয়েছে ৩,৩৯১টি, ইউক্রেনের আছে মাত্র ৪৯০টি। 


বিমানবাহিনী



যুদ্ধক্ষেত্রে বিমান থেকে আক্রমণ পরিচালনা করার ক্ষেত্রেও রাশিয়ার সাথে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে ইউক্রেনের। রাশিয়ার কাছে যুদ্ধ করার উপযুক্ত বিমান রয়েছে ৪ হাজার ১৭৩টি, ইউক্রেনের মাত্র ৩১৮টি।

রাশিয়ার কাছে যেখানে যুদ্ধবিমান রয়েছে ৭৭২টি যেখানে ইউক্রেনে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ৬৯টি। জঙ্গি বিমান বা শুধুমাত্র আক্রমণ পরিচালনা করার জন্য রাশিয়ার কাছে বিমান রয়েছে ৭৩৯টি, ইউক্রেনের মাত্র ২৯টি। 

যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম পরিবহণে ব্যবহৃত পরিবহণ বিমানের দিক থেকেও ইউক্রেন থেকে এগিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী বড় ভাই রাশিয়া। রাশিয়ার কাছে পরিবহণ বিমান রয়েছে রাশিয়ার রয়েছে ৪৪৫টি এবং ইউক্রেনের পরিবহন বিমান মাত্র ৩২টি। 

রাশিয়ার মোট হেলিকপ্টার রয়েছে ১,৫৪৩টি, যেখানে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৫৪৪টি। অন্যদিকে ইউক্রেনের হেলিকপ্টার রয়েছে ১১২টি, অ্যাটাক কপ্টার ৩৪টি।

আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রতিরক্ষাবাহিনীর জুড়ি মেলাভার। দেশটির কাছে রয়েছে এস২০০, এস৩০০, এস৪০০ সহ খুব দ্রুত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এস৫০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। 

ইউক্রেনের ক্ষেত্রে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বেশিরভাগ অস্ত্র সমূহ পুরোতন রাশিয়ান।  
এছাড়া উভয় দেশের কাছে রয়েছে নানামুখী যুদ্ধ ও পর্যবেক্ষণকারী আধুনিক ড্রোণ ব্যবস্থা। 

নৌবাহিনী 



নৌবাহিনীর সক্ষমতার বিচারেও রাশিয়ার প্রতিপক্ষ কেবলই তাদের প্রধান শত্রু আমেরিকা। রাশিয়ার কাছে রয়েছে পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিন থেকে শুরু করে বিমানবাহী রণতরী।    

রাশিয়ার মোট নৌসামরিক যান রয়েছে ৬০৫টি। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের রয়েছে ৩৮টি নৌযান।

রাশিয়ার কাছে একটিমাত্র বিমানবাহী রণতরী থাকলেও ইউক্রেনের কাছে কোন বিমানবাহী রণতরী নেই। যদিও রাশিয়ার বানানো একমাত্র বিমানবাহী রণতরীটি সোভিয়েত আমলে ইউক্রেনের যুদ্ধজাহাজ প্রস্তুতকারী সংস্থা থেকেই তৈরি করা ছিলো। 

এছাড়া, রাশিয়ার ৭০টি সাবমেরিন থাকলেও ইউক্রেনের কোন সাবমেরিন নেই।

রাশিয়ার দখলে রয়েছে ১৫টি ডেস্ট্রয়ার সেখানে ইউক্রেনের একটিও নেই। অন্যদিকে রাশিয়ার ১১টি ফ্রিগেটের বিপরীতে ইউক্রেনের দখলে রয়েছে মাত্র ১টি ফ্রিগেট। 

মাইন ওয়ারফেয়ার নৌযান ইউক্রেনের একটা থাকলেও রাশিয়ার রয়েছে ৪৯টি। রাশিয়ার করভেট রয়েছে ৮৬টি, যেখানে ইউক্রেনের আছে মাত্র একটি। পেট্রোল ভেসেল রাশিয়ার রয়েছে ৫৯টি, ইউক্রেনের রয়েছে ১৩টি।

এছাড়া, রাশিয়ার যেখানে ১,২১৮টি বিমান বন্দর রয়েছে, ইউক্রেনের রয়েছে ১৮৭টি। বাণিজ্যিক জাহাজ রাশিয়ার ২,৮৭৩টি থাকলেও ইউক্রেনের আছে ৪০৯টি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সব সময় বিশ্বাস করেন ইউক্রেন আসলে ‘প্রাচীন রুশ ভূখণ্ড।’ পুতিনের দাবি ১৯৯৭ সালের পর যেসব দেশ ন্যাটোর সদস্য হয়েছে সেসব দেশ থেকে সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি কোনো আক্রমণকারী অস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে না ন্যাটো। মধ্য ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ এবং বাল্টিক সাগরের তীরের দেশগুলো থেকে ন্যাটোর সৈন্যদের সরাতে হবে। আর এই সকল দাবি দাওয়া মিটলেই কেবল ন্যাটোর সাথে শান্তিতে যুক্ত হতে পারে রাশিয়া, তথা ভ্লাদিমির পুতিন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭