ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

পুতিন: স্বৈরাচার না কমিউনিস্ট?


প্রকাশ: 25/02/2022


Thumbnail

ভ্লাদিমির পুতিন, এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত নাম। ইউক্রেন আক্রমণের আগে থেকেই ভ্লাদিমির পুতিনকে মনে করা হতো বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব। তাঁর নেতৃত্বে রাশিয়ার সামরিক পুনর্জাগরণ ঘটেছে। আর এই পুনর্জাগরণের মধ্য দিয়েই প্রশ্ন উঠেছে ভ্লাদিমির পুতিন আসলেই কি? তিনি কি একজন নব্য স্বৈরাচার নাকি কম্যুনিস্ট? ভ্লাদিমির পুতিন ১৯৯৯ সালে থেকে কোনো না কোনোভাবে রাশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রে। কখনো সংবিধানের ফাঁকফোকর দিয়ে তিনি কখনও রাষ্ট্রপতি, কখনো প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২৩ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ পুতিনের হাতেই। আর একক ক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতি যতটা না করতে পেরেছেন, রাশিয়াকে একটি পরাশক্তি হিসেবে তিনি নিঃসন্দেহে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। পুতিন যেমন একদিকে ক্ষমতাকে নিজের কাছে কুক্ষিগত করে রেখেছেন, সে জন্যই তাকে মনে করা হয় নব্য স্বৈরাচার। সেখানে গণতন্ত্রকে সীমিত রেখেছেন। একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীকে হাতে রেখে পুতিন রাশিয়ায় বিরোধী মত দমন করেছেন নতুন করে।

ভ্লাদিমির পুতিনের আসল পরিচয় হলো তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তিনি কেজিবি'র পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একসময়ের গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা কি খুব সঙ্গোপনে আবার রাশিয়াকে কমিউনিস্ট যুগে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন কিনা, সেটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রশ্ন। কারণ, গর্বাচেভের পর রাশিয়ায় যে গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা নীতি চালু হয়, সেই নীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন টুকরো টুকরো হয়ে অনেকগুলো দেশের জন্ম দেয়। আর প্রধান অংশটি রাশিয়া হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করে। রাশিয়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বলা হলেও পুতিন এই রাষ্ট্রকে আবার ঠিক কমিউনিস্ট আদলেই পরিচালনা করছেন। রাশিয়া এখন যেকোনো অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত নয়। বরং নতুন রূপে সেখানে কমিউনিজম ফিরে এসেছে পুতিনের নেতৃত্বে, এমনটি মনে করা হয়। লেলিন, স্ট্যালিন, ব্রেজনেভের সময় যেভাবে একটি দল রাষ্ট্রের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো এবং সরকারই ছিল সর্বেসর্বা, বিরোধী মতকে কঠোরভাবে দমন করা হতো ঠিক তেমনি একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছেন পুতিন বর্তমান রাশিয়ায়।

পুতিনের যে বর্তমান রাশিয়া তা আগেকার কমিউনিস্ট আদলেরই একটি ভিন্ন রূপ। শুধু পার্থক্য এই যে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আগে যে নিয়ন্ত্রণ গুলো ছিল, সেই নিয়ন্ত্রণ গুলোকে শিথিল করা হয়েছে। বিদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ গুলো ছিল, সেই বিধিনিষেধ গুলো এখন আর নেই। কিন্তু আবার অন্যভাবে বিশ্লেষণ করলে পুতিনের নেতৃত্বে একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, যে গোষ্ঠীর হাতে প্রায় সব সম্পদ। রাশিয়ায় বৈষম্য বেড়েছে, গোষ্ঠীতন্ত্র তৈরি হয়েছে এবং মুষ্টিমেয় কিছু লোক ব্যাপক বিত্তের মালিক হয়েছেন। তাই প্রচণ্ড ক্ষমতাধর হলেও তিনি লেলিন বা স্ট্যালিনের মতাদর্শী নন, এটা মনে করেন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বাসী যেকোনো বিশ্লেষকরাই। এখন তিনি যেটি করছেন, সেটি এক ধরনের উগ্রজাতীয়তাবাদ ছাড়া আর কিছু নয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা কাজেই পুতিন রাশিয়ায় যদি আবার সমাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন কিংবা রাশিয়াকে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করান, তবুও তাকে একজন কমিউনিস্ট বলা যাবে না। কারণ, কমিউনিজমের নীতি-আদর্শের থেকে পুতিন আছেন বহুদূরে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭