ইনসাইড বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নিয়ে চীনের আগ্রাসী প্রস্তাব


প্রকাশ: 26/02/2022


Thumbnail

জনসংখ্যার বিচারেই শুধু নয়, অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবেও চীন বিশ্বের শক্তিধর একটি দেশ। এখন বিশ্বজুড়ে মোড়লিপনার শক্তি বা সামর্থ্য দুটিই রয়েছে দেশটির। বিশেষ করে টাকা থাকলে তা গোপন করা যায়ও না। চীন এখন বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গেই টেক্কা এবং টক্কর দেওয়ার শক্তি রাখে। কি অর্থনৈতিক, কি ব্যবসা-বাণিজ্য, কি সমর শক্তি, কোনোদিক থেকেই চীন পিছিয়ে নেই। এই অবস্থায় চীন তার নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব রাখতে চায়। কারো ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার হিসেবে নয়, শেখ হাসিনার সরকারের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারিত হয় দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই। শেখ হাসিনার সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিকটতর হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভারতের প্রভাব এখন অনস্বীকার্য। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও মানতে হবে যে, মাঠে একা ভারত নেই, চীনও রয়েছে। সেও বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ক্রমেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে চীনা অর্থায়ন নিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও দক্ষতার সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের ব্যবস্থাপনা করছে বাংলাদেশ। চীন বাংলাদেশকে সব সময়ই বিভিন্ন ধরনের সাশ্রয়ী ঋণের প্রস্তাব দিয়েই আসছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন পর্যন্ত বলেছেন, বাংলাদেশের কাছে টাকার বস্তা নিয়ে এসেছে চীন। তাদের ঋণের প্রস্তাব আক্রমণাত্মক ও সাশ্রয়ী। এরই ধরাবাহিকতায় চীন এবার বাংলাদেশকে তাদের আরও একটি আক্রমণাত্মক ও আগ্রাসী প্রস্তাব দিয়েছে। তারা এবার চট্টগ্রাম নগরীতে নিজস্ব অর্থায়নে মেট্রোরেল বানিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সমুদ্র উপকূলে ৬০ বর্গকিলোমিটার জায়গায় বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে। 

যদিও এই স্মার্ট সিটিতে বাংলাদেশের অংশ কতটুকু থাকবে আর চীনের কতটুকু থাকবে, তা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার জন্য কোনো ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। সাগর থেকে জমি পুনরুদ্ধার করে এই শহর গড়ে তোলা হবে। চীনের এই প্রস্তাব ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোর সুপারিশ করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যে রূপরেখা উপস্থাপন করেছে, তাতে বলা হয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এই প্রকল্প ১ দশমিক ১ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন নিজস্ব অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) কাজে লাগিয়ে বিশ্বের প্রায় ৭৫টি দেশে বিনিয়োগ করছে। প্রভাব ও প্রতিপত্তি বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব সুফল আদায় করতে চাইবে। কিন্তু ভূরাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা ও বাংলাদেশ যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রেখেই সব সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ২৭টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়। এসব প্রকল্পে ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয় চীন। তিস্তা নদী খনন, নদীর দুই পাড়ে তীর রক্ষাকাজ, চর খনন, স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ এবং বাড়িঘর রক্ষায় সামনের দিনগুলোয় আরো বেশি অর্থায়নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। তবে এরই মধ্যে বেশকিছু প্রকল্প থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে বাংলাদেশে চীনের এই আগ্রাসী প্রস্তাব এলো। এখন প্রশ্ন হলো এই লোভনীয় প্রস্তাব বাংলাদেশ কি ফেলতে পারবে?

দেখা গেছে, চীনা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশ। কূটনীতির পরিভাষায় চীনের এ নীতিকে বলা হচ্ছে ‘ডেট ট্র্যাপ ডিপ্লোমেসি’। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে চীনের এ ঋণ ফাঁদ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। চীনা অর্থে ও কারিগরি সহায়তায় শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু তার নির্মাণ খরচ বাড়তে বাড়তে এমন এক অবস্থায় দাঁড়ায় যে ঋণের সুদ গুনতেই শ্রীলঙ্কার প্রাণ যাওয়ার জোগাড়। ভাবা হয়েছিল এই বন্দর থেকে অনেক আয় হবে। অথচ কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল খুব সামান্যসংখ্যক বাণিজ্যিক জাহাজই এই বন্দরে এসে ভিড়ছে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই শ্রীলঙ্কা ১৫ হাজার একর জায়গাসহ সেই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে ইজারা দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের একটি বন্দরও চীনের কাছে ৪০ বছরের জন্য একই কারণে লিজ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ যদিও দক্ষতার সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের ব্যবস্থাপনা করছে, তারপরও বাংলাদেশের উচিৎ চোখ কান খোলা রেখে চীনের প্রস্তাবে রাজি হওয়া। কারণ দেশের মানুষ অবশ্যই চাইবে না যে, নিজের দেশের কোনো কিছু ব্যবহারের জন্য বিদেশীদের টাকা দিতে। সেহেতু নিজের স্বার্থ ঠিক রেখেই বাংলাদেশ চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার জন্য চীনের যে প্রস্তাব, সেটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭