ইনসাইড হেলথ

মানসিক চিকিৎসা নেওয়ার মানেই কি সে ‘পাগল’?


প্রকাশ: 28/02/2022


Thumbnail

মিলন সাহেব নামকরা এক অনলাইন পত্রিকার চিফ এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার মনে হচ্ছে তিনি ওসিডি (চিন্তাবাতিক ও বাধ্যতাধর্মী আচরণ শুচিবাই একটি উদ্বেগজনিত রোগ) রোগে ভুগছেন। মাঝে মাঝে ভাবেন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন কাউন্সিলিংয়ের জন্য। পরোক্ষণেই ভাবেন থাক গেলে যদি পাগল হিসেবে সমাজে পরিচিত হয়ে যাই। ভীতি এবং অনেকটা মান-সম্মানের কথা ভেবেই তার ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হয় না। এদিকে রোগটাও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। 

দুই সন্তানের জননী আতিকা বেগম, দুই সন্তান নিয়েই তার সংসার। দীর্ঘদিনের একাকিত্ব জীবন সঙ্গিহীন। স্বামী মারা যাওয়ার দশ বছর সংসারের ভার বহন করে যেন ক্লান্ত একজন। ইদানীং প্রায়ই তিনি অনেক কিছু ভুলে যান, অকারণে সবার সাথে চিৎকার-চেচামেচি করে অকারণেই কাঁদেন। সন্তানরা মায়ের এসব মানসিক কষ্ট দেখে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আতিকা বেগমের একটাই কথা, যদি আসলেই আমি কখনো পাগল হয়ে যাই তবে আমাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মেরে ফেলো তবুও ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেও না। 

বাংলাদেশের মানুষ অন্য সব চিকিৎসা স্বাভাবিকভাবে নিলেও মানসিক চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারে এখনো ভ্রান্ত ধারণা রয়ে গেছে। অনেকেই ভেবে থাকেন একজন মনোরোগ বিষেশজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া মানে পাগল আখ্যায়িত হওয়া। সম্প্রতি ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকেয়েট্রিতে প্রকাশিত ‘কান্ট্রি পেপার অন মেন্টাল হেলথ-বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। প্রতিবেদন অনুসারে, মহামারি করোনার কারণে মানসিক রোগের ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মানে হলো এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেকোনো কারো এ ধরণের সমস্যা হতেই পারে। চিকিৎসা নেয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু না। 

উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যেকেই পান থেকে চুন খসতেই মনরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হচ্ছেন। সামান্য চাকরি চলে গেলে, রেজাল্ট খারাপ হলে, বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর সদ্য মা হওয়া মানুষটির মেজাজ ঠিক করতে এমন কি ব্যবসায় লস কিংবা যেকোনো কারণে মানসিক চিকিৎসার জন্য মনরোগ ডাক্তারের কাছে ছুটে চলে। এবং এতে করে তারা সুফল ও পাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে আত্বহত্যার পরিমান আগের তুলনায় কমেছে। আমাদেরকে অন্য আর দশটা স্বাভাবিক রোগের মতোই ভাবতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা ও একটি স্বাভাবিক বিষয়। শুরুতেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চললে এই বিষয় থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যায়। তবে লোক লজ্জার ভয়ে পাগল খেতাব পাবেন এরকম ভেবে চুপটি করে বসে থাকলে একসময় সত্যিই পাগল হয়ে যেতে পারেন। এবার নিজেই ভাবুন সুস্থ্যতা চাচ্ছেন নাকি সত্যিই ‘পাগল’ খেতাব নিয়ে বেঁচে থাকতে চাচ্ছেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭