ইনসাইড থট

আজ কালের আমাদের গর্বের বাংলাদেশ


প্রকাশ: 04/03/2022


Thumbnail

১৯৭২ সাল, আমি তখন ঢাকা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আমি এক জায়গায় বসে বা দাডিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চুপচাপ শান্তভাবে লোকেদের পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি- তারা কি কাপড় বা কি রংয়ের কাপড় পরিধান করে, চলার পথে বা চলার সময় তারা কী করছে, তাদের অভিব্যক্তি কী এবং কীভাবে তারা একে অপরের সাথে এবং পার্শ্ববর্তী পরিবেশে প্রতিক্রিয়া করছে তা নিরবে উপলব্ধ করি। ঢাকায় পড়ার সময়, কলেজের সময় শেষে লোকে ভর্তি বাসে করে পুরান ঢাকা বিমানবন্দরে যেতাম। এয়ারপোর্টের দর্শকদের বারান্দা থেকে আমি দেখতাম প্লেনে নামা ও উঠা লোকজনকে। কাজের জন্য আমাকে প্রতি নিয়ত আমেরিকায় যেত হত। অনেক সময়, আমি নিউইয়র্ক সিটির ৫তম অ্যাভিনিউর রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে লোকদের চলাচল দেখতাম - সেখানে সারা বিশ্বের সমস্ত ধরণের লোকের চলাচলের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ১৯৭২ সালের সময় বাংলাদেশের বেশিরভাগ ফকার ফ্রেন্ডশিপ-৫০ প্লেন ছিল এবং খুব কম আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ঢাকায় আসতো। তখন রাস্তায় দেখা যেত অর্ধ উলঙ্গ শিশু, কারও স্যান্ডেল জুতা পরা যেন একটা বিরাট বিলাসতা ছিল। লাখো মানুষের বলিদান দিয়েই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সব হারানো বাংলাদেশে তখন আনেক গরিব মানুষ ছিল, জাতির পিতা সব ধ্বংসযজ্ঞ কাটিয়ে উঠতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন। পশ্চিমা দেশ গুলো আমাদের বলতো একটি তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ। বাংলাদেশকে এমন দেশ হিসেবে দেখা হতো যেখানে মানুষ ক্ষুধার্ত, ঘূর্ণিঝড় বা বন্যায় মারা যায়।

১৯৭৩ সালে শুরু হয় আমার মেডিকেলের ছাত্রজীবন। ১৯৭৫ সালে সম্পূর্ণ আতঙ্ক এবং দুঃখের সাথে আমরা শুনলাম আমাদের জাতির পিতা এবং তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। নীরবে চোখের জল ফেলছি, আমরা কিছুই করতে পারিনি। তারপর প্রহসনমূলক তথাকথিত হ্যাঁ না ভোট দিয়ে খুনি জিয়া ক্ষমতা দখল করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করতে শুরু করে, রাজাকার ও শান্তিবাহিনীর খুনিদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। বাংলাদেশ বেতার আবারও বাংলাদেশ রেডিও হয়ে গেল। ১৯৭৯ সালে আমি ডাক্তার হলাম, এক বৎসর ইন্টারনশীপ শেষে একটি প্রত্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার পোস্টিং হল। আমি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সেখানের দুর্নীতির গল্প আগেই বলেছি। সেখানে এক বৎসর কাজের পর আমার কাছে দুটি বিকল্প ছিল - হয় দুর্নীতির অংশ হওয়া অথবা দেশ ছেড়ে যাওয়া। আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করি। জিয়া, কালো রে ব্যান সানগ্লাস এবং একটি লাঠি হাতে লোক দেখানো খাল খনন করতে দেশে ভ্রমণ করতেন - খাল খনন ছাড়া (আমি দেখেছি যা এখন পরিত্যক্ত এবং অকেজো), বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য তিনি আর কী করেছেন? এরপর এলেন আরেক স্বৈরাচারী এরশাদ ও তারপর বেগম জিয়া, সেনানিবাসে তৈরি দুই দল। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও পাকিস্তান প্রেমিকদের ক্ষমতায়ন ছাড়া তাদের শাসন আমলে বাংলাদেশের জন মানুষের জীবন-জীবিকার আর কী উন্নতি ঘটেছে? আরপর এলেন সাহশী দূরদর্শী নেত্রী শেখ হাসিনা এবং দেখুন গত দশকে বাংলাদেশ কিভাবে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু চিত্তাকর্ষক এবং গর্ব করার মত কিছু।

দেশ ছেড়ে যাবার পরের সাল থেকে দেশে যা হচ্ছে বা ঘটছে তার সাথে যোগাযোগ রেখেছি। আমি বাংলাদেশে প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার আর ২০১৭ সালে WHO থেকে অবসর নেওয়ার পর, আমি এবং আমার পরিবার বছরে অন্তত একবার বাংলাদেশ সফর করি। আমি যতবার সেখানে যাই, আমি ঢাকার বাইরে, গ্রামীণ জেলায় যাওয়ার চেষ্টা করি। কয়েক বছর আগে আমি আমাদের প্রিয় জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে টঙ্গীপাড়ায় গিয়েছিলাম (আমার ইচ্ছা, অনেক দেশের মতো, এই জায়গাটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হক এবং তাদের দ্বারা পরিচালনা করা যেতে পারে এবং তারা প্রতিদিন গার্ড পরিবর্তনের অনুষ্ঠান করতে পারে। অনেক দেশে তাই দেখেছি। ঢাকায় যেখানে বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল, আমি সেখানেও গিয়েছিলাম। আশ্চর্য কেন এটি সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয় না এবং বছরে শুধু মাএ একদিনের সম্মানের স্থান হয়!!)। বাংলাদেশ প্রতিদিন যে অগ্রগতি করছে তা দেখে আমি বিস্মিত, আবেগপ্রবণ এবং গর্বিত হই। কোনো দেশ আর বলতে পারবে না বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ। আজ তাঁরাই বাংলাদেশেকে উন্নয়নের সমান অংশীদার হিসেবে সম্মান করে। বাংলাদেশের অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে আছে এবং অবকাঠামো উন্নয়নে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ অনেক শক্তিধর দেশের স্বার্থের দেশ হয়ে উঠছে।

কোন দেশের তার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং কিছু মৌলিক নীতি ও অবকাঠামো। উন্নত সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ। আমার মনে আছে, স্বাধীনতার আগে আমি যখন ছোট, আমার বাবা যশোর জেলায় চাকরি করতেন। তখন নানা আর দাদার বাড়ীতে যাবার জন্য আমাদের চাঁদপুর এলাকায় যেতে হত। যশোর থেকে আমদের প্রথমে ট্রেনে গোয়ালন্দোতে গিয়ে স্টিমার (যাকে রকেট বলা হত) ধরতে হত। স্টিমার ঘাটে ফিরার সাথে সাথে একজন ভাড়া করা কুলি একটা বড় বিছানার চাদর নিয়ে ছুটত এবং উপরের ডেকে আমাদের জায়গা রিজার্ভ করত। চাঁদপুর পৌছাতে এটা ছিল সারা রাতের যাত্রা। চাঁদপুর আমাদের নানা বাড়ী। ফরিদগঞ্জ এলাকার কাউনিয়া গ্রামে আমার দাদার বাড়িতে যেতে হলে বর্ষাকালে নৌকায় যেতে হতো। আজ সেখানে যেতে কত সময় লাগবে? কয়েক বছর আগে, ঢাকা থেকে চাঁদপুরে লঞ্চে পৌছে পাকা রাস্তা ব্যবহার করে ভারা করা গাডীতে খুব কম সময়ে কাউনিয়া গ্রামে গিয়ে খুব অবাক ও খুশি হয়েছিলাম। চাঁদপুরকে চিনতে পারছিলাম না, সব কিছু বদলে গেছে, উন্নতির ছোয়া সব যায়গায়। মানুষ আজ সড়কপথে চাঁদপুর যেতে পারে এবং একই দিনে ঢাকায় ফিরে আসতে পারে। বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ দেশ, সবখানে নদী, তাই একের পর এক নজরকাড়া সেতু তৈরি হচ্ছে, সড়ক পথে বরিশাল যাওয়া ছিল স্বপ্ন, আজ তা সম্ভব। পদ্মা সেতু হলে যাতায়াত আরও সহজ হবে। বিশ্বব্যাংকের হুমকিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তা করছে বাংলাদেশ। কুরনোফুলী টানেল আমরা ভাবতেই পারিনি, আজ তা প্রায় শেষের দিকে। মেট্রো রেল এবং ভূগর্ভস্থ রেল এবং হাইওয়ে সিস্টেম যেন কিছুই আজ অসম্ভব না। ঢাকার তৃতীয় বিমানবন্দর টার্মিনাল, চট্টগ্রাম, সিলেট আর নতুন কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নতির পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান চলাচলেও উন্নতি করছে। অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা এবং এর ব্যবহার বাড়ছে, যা অনেকেরই ধারণা ছিল না। আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে আধুনিক বিমান রয়েছে। রেল পরিষেবারও উন্নতি হচ্ছে। বৈদ্যুতিক মেট্রো রেলের পর বাংলাদেশ হাই স্পিড রেলওয়ে ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছে। আগে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভর করতে হতো। সেসব সক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে নতুন সমুদ্র বন্দর তৈরি হচ্ছে। দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আজ সহজেই সড়ক বা রেলপথে চট্টগ্রাম বা মংলা সমুদ্রবন্দরে পণ্য সহজেই আনা যায়। বাংলাদেশের আজ নিজস্ব স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। দেশ এখন 5G সিস্টেম শুরু করছে। ব্রডব্যান্ড সুবিধা সর্বত্র আছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হচ্ছে।

আরও উন্নয়নের জন্য আজ একটি দেশে টেলিফোন, মোবাইল এবং ওয়েব ভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের কোনায় কোনায় মোবাইল নেট কাজের অনুপ্রবেশ এবং ব্যবহার চিত্তাকর্ষক। আজ প্রত্যন্ত গ্রামের একজন কৃষক তাদের মোবাইলের মাধ্যমে আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন। কৃষকরা শহরগুলিতে তাদের পণ্যের দাম খুঁজে পেতে পারে এবং মধ্যম ব্যক্তির দ্বারা প্রতারণা বন্ধ করতে পারে। কয়েক বৎসর আগে যশোর জেলার একটি গ্রামে গিয়েছিলাম। অবাক হয়ে দেখলাম, পাকা রাস্তা, কোন ভাঙ্গা ঘর নেই, প্রায় সবাই তাদের টিনের শেডের ঘরকে কংক্রিটের ঘরে প্রতিস্থাপন করছে। মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ, টিভি, ফ্রিজ আছে। মানুষ খুশি এবং সন্তুষ্ট। বিদ্যুৎ পরিকাঠামো উন্নতির আরেকটি মাপকাঠী। আমার এখনো মনে আছে বিএনপি ও এরশাদের সময়ে বাংলাদেশে যাওয়ার কথা, দীর্ঘ সময়ের লোডশেডিং ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। আজকে আমরা লোডশেডিং দেখি না। বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণদের দেশ। শিক্ষা, বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা এবং চাকরির সম্ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সময়ে শুধু বড় শহরে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমাদের মাত্র কয়েকটি সরকারি মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল। আজ অনেক বেসরকারি ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। মেয়েদের ভর্তি ও লেখাপড়া বেড়েছে এবং তারা ছেলেদের তুলনায় ভালো করছে। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক তরুণ চাকরির বাজারে আসছে। গার্মেন্টস এবং অন্যান্য শিল্প সুবিধা, অর্থনৈতিক অঞ্চল, মেগাপ্রজেক্ট এর মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন ভারী এবং ইলেকট্রনিক শিল্প আসছে, বাংলাদেশ অটোমোবাইল উত্পাদন করছে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম আজকাল কৃষকরা তাদের ফসল কাটার জন্য শ্রমিকের অভাব বোধ করছে। আমার একজন ভাতিজি, যে ম্যানেজারিয়াল, উচ্চ বেতনের চাকরিতে করতো, কিছুদিন আগে সে সময় নিতে এবং তার ছেলের দেখাশোনা করার জন্য পদত্যাগ করেছে। সে আমাকে বলে, “চাচা দুই বছর পর সহজেই আরেকটি চাকরি পাবো”। আমরাদের সময় বাংলাদেশে তা কল্পনাও করা যেত না। উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা প্রতিটি সেক্টরে ভালো চাকরি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে যাচ্ছে। আমাদের ভাল ক্রয় ক্ষমতা সহ একটি ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছ। অনেক বাংলাদেশি যেমন দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, তেমনি বাড়ছে অনেক বিদেশিও কাজের জন্য বাংলাদেশে আসছে।

বাড়ি ও সম্পত্তির বাজারও উন্নত হচ্ছে। অল্পবয়সী দম্পতিদের হয় আজকাল বাড়ি ভাড়া নেওয়ার এবং কেনার ক্ষমতা রয়েছে। একজন অত্যন্ত উচ্চ পুলিশ অফিসার হওয়া সত্তেও আমার বাবার অবসর নেওয়ার বহু বছর পরে ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ করে আমরা আমাদের বাড়ীতে উঠতে পেরেছি। দুর্ভাগ্য আমার বাবা কখনো তার নিজের বাড়িতে থাকার সুযোগ পাননি। তিনি একটি ভাড়া বাড়িতে অবসরের পর অল্প বয়সে মারা যান। আজ সরকার উদ্যোগী হয়ে দরিদ্র মানুষের জন্য ঘর তৈরি করেছে।

স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বাড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ ও সুযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশের ওষুধ তৈরির সক্ষমতা গর্বের বিষয়। বাংলাদেশ জীবন ও জীবিকার ভারসাম্য বজায় রেখে দক্ষতার সাথে কোভিড-১৯ মহামারী পরিচালনা করতে পেরেছে। ১৪০০০ কমিউনিটি হেলথ সেন্টার তার ক্যাচমেন্ট এলাকার লোকের দ্বারে দ্বারে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাচ্ছে। যদিও স্বাস্থ্যসেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করা দরকার। যাতে আমাদের বা বিদেশীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সিঙ্গাপুর, ভারত বা থাইল্যান্ডে ছুটতে না হয়। পানি ও স্যানিটেশনের উন্নতি হয়েছে। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও স্যানিটেশনের উদ্দেশ্যে আজ ঝোপঝাড়ে যেতে হয় না। গ্রামে দাদার রাডীতে আমিও স্যানিটেশনের উদ্দেশ্যে ঝোপঝাড়ে গিয়েছি। আজ সেখানে পাকা পায়খানা আছে। মানুষের মৌলিক চাহিদা এবং তার বিকাশ যেমন আয়, আশ্রয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি এবং স্যানিটেশন আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার বিরল পণ্য নয়। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা এখন প্রশ্ন নয়, মানুষ আর ক্ষুধার্ত থাকে না। এই সেদিন বাংলাদেশ শুধু চাল নয়, শ্রীলঙ্কাকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ধার দিয়েছে। এমনকি ঢাকা শহরেও আপনি আর কোনো অর্ধ-উলঙ্গ বা পাদুকা বিহিন কাউকে দেখতে পাবেন না। মানুষ সাধারণত খুশি। আজ কৃষকের বা ছোট দোকানদার বা রিকশাচালকের ছেলে বা মেয়েও বিসিএস অফিসার হচ্ছে। কোন কিছুই কারো নাগালের বাইরে নয়। এটাই আজকের বাংলাদেশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রবল প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের নিরাপত্তার উন্নতি হয়েছে। আজ বাংলাদেশে সন্ত্রাসী বা ধর্মান্ধদের কোনো স্থান নেই। তবুও, আমাদের এখনও পুরানো, এমনকি ব্রিটিশ আমলের আনেক আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং নীতি রয়েছে, যা আমাদের অগ্রগতিকে আরও বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের সেসব নীতি ও পদ্ধতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। দুর্নীতি আমাদের দেশে একটি ক্যান্সার। এটি কমাতে বা দুর করতে র্যাডিকাল সার্জারি (radical surgery) প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে প্রতিটি সেক্টরে ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বের (Human Resources for management and leadership) মানবিক ক্ষমতারও অভাব রয়েছে। বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরে বিদেশীদের দ্বারা উচ্চ বেতনের ব্যবস্থাপক এবং নেতৃত্বের পদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাহিরে প্রেরণ করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে এই মানবসম্পদ এলাকাকে শক্তিশালী করতে হবে। গবেষণা এবং পেটেন্ট উন্নয়নের জন্য বিশাল বিনিয়োগ প্রয়োজন। পলিসি, অ্যামিনিটিস এবং কম বেতনের কারণে আমরা অত্যন্ত দক্ষ মানবসম্পদও হারাচ্ছি। আমাদের আরও দ্রুত অগ্রগতির জন্য একটি সহায়ক নীতি এবং আইনী কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

যদিও অভ্যন্তরীণ পর্যটন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিদেশী পর্যটকদের স্বাগত জানাতে এবং আকৃষ্ট করতে আমাদের পর্যটন খাতকে আরও উন্নত করতে হবে। তাদের বিনোদন ও উপভোগের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে কারণ আমাদের এই সেক্টরে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশী পর্যটকরা তাদের অর্থের জন্য সেরা আনন্দ আর সেভা কিনতে চান। আমরা যখন বড় হচ্ছিলাম ছুটিতে সফর যাওয়া সপ্নের বাহিরে ছিল। আজ নতুন নতুন পর্যটন রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে, আর বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ সেসব রিসোর্টে ছুটিতে অবস্থান করছে। কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার আগে আমরা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে যেতাম। আজ তরুণরা ফুল নিচ্ছে। ভ্যালেন্টাইন বা বাংলা নববর্ষ দিবসে লাখো মানুষ একে অপরকে ফুল দিচ্ছেন। আমি যখন দেখি মানুষ ফুল কিনছে, আমি খুব আবেগপ্রবণ হই। এটি বাংলাদেশের মানুষের একটি দারুন ক্রয় ক্ষমতা এবং উন্নয়নের চিহ্ন। আমাদের নবী বলেছেন “তোমার এক পয়সা থাকলে খাদ্য কিনবে, আর দুই পয়সা থাকলে ফুলও কিনবে”।

যখন অনেক দেশ আমাদের অগ্রগতি সম্পর্কে আশাবাদী হয়ে উঠছে এবং বাণিজ্য ও উন্নয়নে আমাদের সমান অংশীদার হতে চায়, আমাদের কে সম্মান করে আমাদের সাফল্যকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে, তখনও বাংলাদেশে কিছু সংখ্যক লোক, বিশেষ করে যারা শুধুমাত্র ক্ষমতা দখল করতে এবং রাতারাতি ধনী হতে আগ্রহী, দুর্নীতি এবং আবার হাউয়া ভবনের চর্চা করতে চায় এবং যারা আমাদের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না বা বিশ্বাস করে না তারা এখনও অভিযোগ করছে। আমাদের অগ্রগতি বন্ধ করতে নাশকতার সব উপায় চেষ্টা করছে। আমরা কোথায় ছিলাম এবং এখন কোথায় আছি তা তারা দেখতে পায় না বা দেখতে চায় না। আমাদের অগ্রগতির অংশ হতে তারা যোগ দিতে চায় না। তারা দেখেন গ্লাস সবসময় অর্ধেক খালি আছে। আমি বিশ্বাস করি যদি আমরা অগ্রগতি ও নেতৃত্বের গতি আরও এক দশক ধরে রাখতে পারি তাহলে কেউ বা কোনো দলই আমাদের পিছে ঠেলে দিতে পারবে না। সাধারণ মানুষ আজ প্রগতি দেখেছে এবং অনুভব করছে। তারা শান্তি ও অগ্রগতি চায়, তারা আর হরতাল, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে, রাস্তা অবরোধের রাজনীতি চায় না। তারা শান্তি ও সমৃদ্ধি চায়, তাদের পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে চায়।

২০১৯ সালে পাকিস্তানে কাজের সফরের সময় একজন মন্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন আমি মনে করি বাংলাদেশ এত অল্প সময়ে, বিশেষ করে গত ১০-১২ বছরে এত কিছু অর্জন করতে পেরেছে। আমার উত্তর ছিল, “আমাদের অদম্য, দূরদর্শী, নিবেদিত যিনি তার পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন, সেই নেত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই এটা ঘটছে।” আমাদের এখনও শেখ হাসিনার অন্য বিকল্প নেই। বাংলাদেশ তাকে পেয়ে ভাগ্যবান এবং আগামী বছর গুলোতেও তার প্রয়োজন হবে। তার চলমান নেতৃত্ব বাংলাদেশকে স্থিতিস্থাপক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলবে এবং বিশ্বে আরো সম্মানিত করবে। যার ফলে আমরা অনেক সম্মান ও গর্বের সাথে বাঁচতে পারবো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭