ইনসাইড পলিটিক্স

এইচ টি ইমামের শূন্য পদে কে?


প্রকাশ: 04/03/2022


Thumbnail

এইচ টি ইমাম মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হলো। এই এক বছরেও এইচ টি ইমামের শূন্য পদ পূরণ হয়নি। এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগ এবং সরকারে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবেও ছিলেন। এ দু’টি দায়িত্বের একটিও এখন পর্যন্ত কাউকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব কাউকে না দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ারম্যান পদ খুব শীঘ্রই কাউকে দেয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানাচ্ছে। কারণ, এই পদটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা কো-চেয়ারম্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। 

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে। সেই ক্ষমতায় আসার সময় আওয়ামী লীগ প্রথম নির্বাচন পরিচালনার জন্য কো-চেয়ারম্যান পদটি চালু করে এবং সেই পদের দায়িত্ব দেওয়া হয় শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে। এই পদের বৈশিষ্ট্য হলো এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন, যার নির্বাচন আইনকানুন এবং প্রশাসন সম্বন্ধে ভালো দক্ষতা এবং জ্ঞান থাকতে হবে। যিনি প্রশাসনে সকলের কাছে আস্থাভাজন এবং সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হবেন। যিনি নির্বাচন করবেন না, আবার দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে তার। নির্বাচন পরিচালনায় কো-চেয়ারম্যান মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নির্বাচনে যেন আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী কোনো দুর্ভোগের শিকার না হয়, সেটি দেখভাল করেন। নির্বাচনের আগে এই কো-চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং নির্বাচন পরিচালনার কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শক্রমে দলের নির্বাচনী ইশতেহারসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন এবং এই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই তারা একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রচার করে। মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে যে পরামর্শগুলো দেন, সে পরামর্শগুলো বাস্তবায়ন করাই কো-চেয়ারের অন্যতম কাজ। আর এটি একটি সার্বক্ষণিক দায়িত্ব।

শাহ এম এস কিবরিয়া ১৯৯৬ সালে এই দায়িত্ব অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালেও তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের বিপর্যয়ের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শাহ এম এস কিবরিয়া মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ারম্যান হিসেবে এইচ টি ইমামকে দায়িত্ব দেন। এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এইচ টি ইমামের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত দৃশ্যমান। এই সময়ে প্রশাসনের সঙ্গে নানারকম দেনদরবার করা, নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম গুলোকে নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করা, আইনকানুন অনুযায়ী সবকিছু হচ্ছে কি না ইত্যাদি তদারকি করার কারণে তিনি আলোচিত হয়ে উঠেছিলেন এবং দলের মধ্যে অন্যতম ক্ষমতাবান ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর এখন এই পদে কে আসবেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বলছেন, এই পদটি মূলত একজন সিনিয়র আমলাকে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগে এরকম বেশ কয়েকজন সিনিয়র আমলা রয়েছেন। কিন্তু তারা এই দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবেন, সেটিও একটি প্রশ্ন বটে। কারণ, এটি একদিকে যেমন প্রশাসনের সঙ্গেও তাদেরকে যোগাযোগ রাখতে হয়, অন্যদিকে একইভাবে রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠতা থাকতে হয়। এ দু’য়ের সমন্বয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলেই আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করেন। আওয়ামী লীগে বর্তমান সময়ে সিনিয়র আমলাদের মধ্যে রয়েছেন ড. মশিউর রহমান। তিনি এই নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ারম্যান হবেন, এমনটি কেউ মনে করেন না। সাবেক সংস্থাপন (জনপ্রশাসন) সচিব রশিদুল আলম দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচন পরিচালনা কার্যক্রমের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত। তিনি নির্বাচন পরিচালনা কো-চেয়ারম্যান হতে পারেন, এমন একটি গুঞ্জন রয়েছে। নাকি আওয়ামী লীগ সভাপতি নতুন কাউকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিবেন, সেটি এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭