ইনসাইড থট

আসুন বিশ্বকে ভাগ না করি


প্রকাশ: 06/03/2022


Thumbnail

প্রশ্নটি ইউক্রেনকে সমর্থন করা বা সমর্থন না করা নয়। এটি "আপনি হয় আমাদের সাথে বা তাদের সাথে" সে প্রশ্নও নয়। আমরা এও বিশ্বাস করি একজনের/একদলের দ্বারা কোন ভুল কাজ করা অন্যদের দ্বারা একই কাজ করাকে সমর্থন বা ন্যায্যতা দেয় না। কিন্তু আমরা বিস্মিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ করছি পশ্চিমের দ্বৈত নৈতিকতাকে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং ধ্বংসযজ্ঞ আর ঐক্যবদ্ধ পশ্চিমের দ্রুত অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নিষেধাজ্ঞা দেখে আমাকে ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া এবং সিরিয়ার পাশাপাশি যুগোস্লাভিয়ায় কী হয়েছিল তা মনে করিয়ে দেয়। ন্যাটো ও পশ্চিমা দেশগুলো মিথ্যা অজুহাতে এবং জাতিসংঘের অনুমোদনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। সেসব দেশ গুলো কল্পনার বাইরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, জনাকীর্ণ শহর বা গ্রামাঞ্চল কিছুই বাদ যায়নি। কার্পেট বোমা এবং মাদার অফ অল বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। আফগানিস্তানে অক্সিজেন চোষা বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। ইরাকে ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম বোমা (DU) অস্ত্র ব্যাবহার করা হয়েছিল। সেখানকার টিভি স্টেশনগুলোয় ন্যাটো এবং পশ্চিমাদেশ বোমাবর্ষণ করে। ন্যাটো যুগোস্লাভিয়াতে টিভি স্টেশন বোমা দিয়ে ধ্বংস করে। ইসরাইল প্রায় প্রতিদিনই একই কাজ করছে, গাজায় ধ্বংসাত্মক বোমা হামলা ছাড়াও আলজ্জজিরা এবং রয়টার্স ভবনে বোমাবর্ষণ করেছে। তারা এখনও প্রায় প্রতিনিয়ত দামেস্কের স্থানগুলি ধ্বংস করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে। ধ্বংস হওয়া ওই সব দেশে পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর নিষেধাজ্ঞায় কারনে প্রতিদিনই আরও বেশি প্রাণহানি ঘটছে। পশ্চিমারা সিদ্ধান্তকারী, বিচারক এবং জল্লাদ হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসী হত্যার অজুহাত দিয়ে এখনও তাদের ড্রোন দিয়ে যেখানে তাদের ইচ্ছায় নিরপরাধ মানুষকেও হত্যা করছে। লক্ষ লক্ষ সিরিয়ান মানুষ হয় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত (৫.৫ মিলিয়ন) বা উদ্বাস্তু (৬ মিলিয়ন) অন্যান্য দেশে, ভিড়ের তাঁবুতে অমানবিক পরিস্থিতি বসবাস করছে। গত অক্টোবরে আমি সিরিয়ায় যাই সেই সমস্ত ভুক্তভোগী মানুষের জন্য জাতিসংঘের ভবিষ্যত স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা ব্যবস্থার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। দেখলাম অসহায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে সেখানে জাতিসংঘের পুনরুদ্ধার এবং একটি স্থিতিস্থাপক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষমতা খুবই কম।

তাই আমরা সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, দুঃখিত এবং ইউক্রেনে যা হচ্ছে তা সমর্থন করি না। রাশিয়া যখন সিরিয়ার কিছু অংশে বোমাবর্ষণ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, অনেককে হত্যা করে তখন পশ্চিমা দেশ গুলো কেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি, পশ্চিমা এখন যা করছে! এটি কি এখন তাদের মত দেখতে বা তাদের কাছাকাছি দরজার একটি ইউরোপীয় দেশে ঘটছে তাই বলে? বিদ্রুপ হল পোল্যান্ড, ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা এশীয় এবং আফ্রিকান লোকদেরকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বা তাদের সাথে ভিন্ন আচরণ করছে। পশ্চিমা লোকেরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আর যুদ্ধ এবং ধ্বংসলীলা দেখেনি এবং এটি ভুলে গেছে। ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া তাদের থেকে অনেক দূরে, তাই মনে হয় ঐ সব দেশে ঘটা নিষ্ঠুরতা এবং ধ্বংস তাদের কাছে কোন ব্যাপার না। অনেকেই প্রশ্ন করছেন ইউক্রেনের কাছ থেকে শেখার পরে, যখন সব মিটমাট হয়ে যাবে আমরা কি ভবিষ্যতে আমাদের আওয়াজ তুলব এবং তিনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী যা বলেছে ফিলিস্তিনে কি ঘটছে তা সমর্থন করব? ভবিষ্যৎ যুদ্ধের হস্তক্ষেপ ন্যাটো বা অন্য কারো দ্বারা হলে প্রতিবাদ করবো? যুদ্ধ ধ্বংস আর হত্যা ঘটায় - সে কালো, বাদামী হলুদ বা সাদা হতে পারে কিন্তু রক্তের রঙ সবার জন্য লাল। ইউক্রেনকে সমর্থন করার সময় আসুন অন্যান্য যুদ্ধ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ তুলি। আসুন দ্বৈত নৈতিকতাকে নয় একটা একক নৈতিকতা সমর্থন করি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭