ইনসাইড বাংলাদেশ

যে কারণে আমলারা সম্পদের হিসাব দিতে রাজি নয়


প্রকাশ: 06/03/2022


Thumbnail

গত বছরের জুনে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের পর 'সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯' এর সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দিতে সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। ২০২১ সালে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বাকিরা তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সফর করেছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গিয়ে তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন যে দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। এরপর পরই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু করেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৯ সালের এই আইনটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার কথা কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেননি। এমনকি সম্পদের হিসাব জমা দেওয়া নিয়েও তাদের মধ্যে রয়েছে অনীহা। বেশিরভাগ আমলাই তাদের সম্পদের হিসাব দিতে রাজিও নন।

শুরু থেকেই আমলারা সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিষয়টির বিরোধিতা করছে। বেশিরভাগ কর্মকতারাই বলছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আমরা প্রতিবছরই আয়কর জমা দিই। সেখানেই সবার সম্পদের তথ্য থাকে। সুতরাং আলাদা করে হিসাব দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। তবুও প্রত্যেক দপ্তর সংস্থার প্রধান চাইলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সম্পদের হিসাব দিতে বাধ্য। কিন্তু শীর্ষ কর্মকর্তারাই এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেন না। ফলে কেউই হিসাব দিতে আগ্রহী হন না। কিন্তু চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পর পর ডিসেম্বরে বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমলাদের পক্ষ বলা হচ্ছে যে, এই আইনের মাধ্যমে এক ধরনের অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ রয়েছে। কারণ সরকারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কাজেই তাদেরকে যখন প্রচ্ছন্নভাবে দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করা হয় তখন প্রশাসনের স্বাভাবিক কাজের গতি নষ্ট হয়ে যায়। আর এই অজুহাত দিয়েই তারা এখন সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশনা থেকে পার পেতে চাইছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক আমলাদের বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে সেসব ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। এর ফলে যদি তারা সম্পদের হিসাব দিতে যায়, তাহলে তাদের নিজেদের হিসাবের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সম্পদের হিসাবও দিতে হবে। যেটা দিতে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন আমলারা। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনীহার কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এই বিধি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগও রয়েছে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে অন্ধকারেই রয়েছে সরকার। প্রশাসনের একদম উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্নপদের কর্মচারীরাও সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিচ্ছেন না। ফলে বিধান থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আচরণ বিধিমালা মূলত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকারি চাকরি করলে অবশ্যই সরকারের এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা উচিৎ। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ারও পরামর্শ বিশ্লেষকদের।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭