ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পতনের মুখে রোমানের স্বপ্নের সাম্রাজ্য


প্রকাশ: 07/03/2022


Thumbnail

রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের প্রেক্ষিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ছে দেশটি। প্রধানত রাশিয়ার অর্থনৈতিক খাতগুলো লক্ষ করে নিষেধাজ্ঞাগুলো শুরু হলেও আস্তে আস্তে দেশটির ধনী শ্রেণির সম্পদ জব্দ বা বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর তাই নতুন কোন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে নিজের বিশাল সম্পদ হাতছাড়া হওয়ার আগেই লন্ডনে থাকা সকল কিছু বিক্রি করার তোড়জোড় শুরু করেছেন রাশিয়ার অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী ও ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচ।

ইতোমধ্যে রোমান আব্রামোভিচ তার লন্ডনে থাকা সম্পত্তি বিক্রি শুরু করছেন, যার মধ্যে রয়েছে ৩ বিলিয়ন পাউন্ডের চেলসি ফুটবল ক্লাব এবং ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি। ইংল্যান্ডের একজন এমপি দাবি করেছেন যে, রাশিয়ান এই ধনকুবের তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা বন্ধ করতে দ্রুত কাজ করছেন।

লেবার পার্টির ক্রিস ব্রায়ান্ট বলেছেন, আইনি পদক্ষেপ এড়াতে আব্রামোভিচ সংসদীয় বিশেষাধিকার ব্যবহার করছেন এবং নিষেধাজ্ঞার ভয়ে তিনি তার বাড়ি ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করছেন।

ফোর্বসের তথ্য অনুসারে আব্রামোভিচের মোট সম্পত্তির মূল্য ১০.৪ বিলিয়ন (১২.৫ বিলিয়ন) ডলার। তিনি ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের কেনসিংটন ম্যানশন, একটি ২২ মিলিয়ন পাউন্ডের পেন্টহাউস এবং ১.২ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি ইয়ট, প্রাইভেট জেট, হেলিকপ্টার এবং সুপারকারের মালিক।

তার সবচেয়ে মূল্যবান ব্রিটিশ সম্পদ হল চেলসি এফসি ফুটবল ক্লাব। এটি ফুটবল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফুটবল ক্লাব। ২০০৩ সালে ক্লাবটির মালিকানার চেয়ারে বসেন রোমান আব্রামোভিচ। তার সময়েই ক্লাবটি তার ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা সময় পার করছে। যার ফলে ক্লাবটির মোট সম্পত্তির পরিমাণ হু হু করে বৃদ্ধি পায় যেটি আব্রামোভিচকে আরো সম্পদশালী করে তুলে।

'রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক' এবং 'দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ততা আছে দাবি করে লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দিয়েছিলেন, কেন আব্রামোভিচের ওপর এখনও কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে না।

এই ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে মন্তব্য করা তার জন্য 'উপযুক্ত' নয়।

পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস এর আগে বলেছিলেন যে তার কাছে অলিগার্চদের একটি 'হিট লিস্ট' রয়েছে যাদের তারা টার্গেট করছে, কিন্তু তিনি কারো নাম প্রকাশ করেননি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়নের ভাষণে জানান, আমেরিকা 'আপনার ইয়ট, আপনার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, আপনার ব্যক্তিগত জেটগুলি দখল করতে আসছে'। তাই ক্রেমলিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা রাশিয়ান বিলিয়নিয়ারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবার হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন।

আব্রামোভিচ কখনই যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেননি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দেশটির নানা সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে আব্রামোভিচ তার ভাগ্যর চাকা ঘুরিয়ে ফেলেন। আব্রামোভিচ ক্রেমলিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তবে তিনি এসব অভিযোগ সব সময় অস্বীকার করে এসেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে আব্রামোভিচ তিনটি বিয়ে করেন যার মাঝে প্রথম দুই স্ত্রীর ঘরে তার সাতটি সন্তান রয়েছে। যার মাঝে বড় সন্তানের নাম আনা। ২৯ বছরের রাশিয়ান এই সুন্দরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক করেন। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কে বসবাস করেন। এছাড়া আরকাদা নামের ২৭ বছরের আব্রামোভিচের অন্য একটি সন্তান তেল, গ্যাস শিল্পে বিনিয়োগ করে শিল্পপতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।



তবে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করার পর সবচেয়ে আলোচনায় আসেন আব্রামোভিচের ২৬ বছরের কন্যা সোফিয়া। যুদ্ধের বিরুদ্ধে তিনি তার ইন্সট্রাগ্রামে ছবি পোষ্ট করে ইতিমধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তাছাড়া আব্রামোভিচের অন্যান্য সন্তানের মাঝে আছেন আরিনা (২০), ইলিয়া (১৮), আ্যারন (১১), লেহ লু (৭)। তবে এদের সম্পর্কে খুব কম তথ্যই গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এই চার জনই নিউইয়র্কে বসবাস করা আব্রামোভিচের তৃতীয় স্ত্রী দাশার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।

আব্রামোভিচের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তেমন তথ্য কারো কাছে না থাকলেও অনেকে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে তিনি বর্তমানে বেলারুশে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মাঝে চলমান যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন বলেও শোনা যায়। পুতিনকে সাহায্যকারী যে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্রিটেনে প্রতিদিনই চাপ বেড়ে চলেছে। আর এর রেশ পড়েছে রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই বিলিয়নিয়ারের কপালে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭