ইনসাইড আর্টিকেল

নারী দিবসের ভাবনা: বিবি রাসেল এবং শিরিন সুলতানা


প্রকাশ: 08/03/2022


Thumbnail

জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে ঘোষণার পর ৮ ই মার্চ বিশ্বব্যাপী নারী দিবস হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের অনেক দেশে এই দিন উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি থাকে। মূলত নারীদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় এই দিন পালন করা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের অবস্থান কিংবা অধিকার আদায় কতটুকু হচ্ছে সেই নিয়ে আলোচনায় সঙ্গ হিসেবে বাংলা ইনসাইডার পেয়েছিল বর্তমান বাংলাদেশের দুজ'ন সফল নারী বিবি রাসেল এবং শিরিন সুলতানাকে। তাদের মুখ থেকে জানতে চেয়েছিলো তাদের কাছে নারী দিবসের চিত্র কেমন! 

বিবি রাসেল বর্তমান প্রজন্মের কাছে খুব পরিচিত, আলোচিত একটি নাম। তিনি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে অসাধারণ কাজের নমুনা দাঁড় করিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাংলার তাঁত শিল্পকে নিয়ে গেছেন তিনি বিশ্বদরবারে। এত বছরের কর্মজীবনে তিনি যেমন মুখোমুখি হয়েছেন বাঁধাবিপত্তির, তেমনি, পেয়েছেন হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা। এই সফল ফ্যাশন ডিজাইনার, উদ্যোক্তা থেকে যখন আমরা জানতে চেয়েছিলাম, ৮ মার্চ নিয়ে তাঁর ভাবনা কী? তিনি বলেছিলেন, "আমি ছোট বেলা থেকে আমার মা দাদী, চাচীর সাথে বড় হয়েছি, তাদের ভালোবাসা দেখে, তাদের ভালোবেসেছি। আমি আমার কর্মক্ষেত্রে আমার সাথে যে ক'জন মেয়ে কাজ করে তাদের রোজ দেখি, ভালোবাসি। আমার আশেপাশে চোখে মুখে দীপ্তি, ভরসা, সম্ভাবনা  নিয়ে ঘুরে বেড়ানো প্রতিটা মেয়েকে আমি ভালোবাসি। আমার কাছে প্রতিটা দিনই নারী দিবস। কিন্তু আলাদা করে ৮ ই মার্চ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই দিনটাতে বিশ্বব্যাপী এই সম্ভাবনাময় মুখগুলো, এদের কাজগুলো আলোচিত হয়। সবাই জানে মেয়েরা কতখানি পারে, তাই আমার কাছে এই দিনটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।" 

তিনি বিশ্বাস করেন নারীরা যতটুকু ধারণা রাখে তার থেকেও অধিক হয় তাদের ক্ষমতা। আজকের সমাজের দিকে তাকালে তিনি এগিয়ে আসা নারীদের দেখতে পান। কিছুক্ষেত্রে আজও বৈষম্য আছে, কিন্তু সেই বৈষম্য কাটবে তখনই যখন সবাই এগিয়ে আসবে। তিনি মনে করেন, যদি তিনি একজন নারী হয়ে  জেন্ডার কেন্দ্রিক সকল  ট্যাবু ভেঙে কাজ করতে পারেন এবং জয় করে নিতে পারেন হাজার হাজার মানুষের মন, তাহলে এই বাংলার যেকোনো নারী যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে পারে। বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মই পারবে তাদের সকল বৈষম্য দূর করে সাম্যের সমাজ গড়তে।  তিনি আশাবাদী একদিন সকল বৈষম্য দূর হয়ে ক্ষমতাধারী প্রতিটা নারী তাদের ক্ষমতার সাথে পরিচিত হবে, সম্ভাবনার সাথে পরিচিত হবে এবং গড়ে তুলবে সাম্যের পৃথিবী যেখানে সকল পরিচয়ের থেকে বড় পরিচয় হবে "সকলে মানুষ"। 

কথোপকথনের দ্বিতীয় ভাগে আমরা আলোচনায় পেয়েছিলাম বাংলাদেশের ফ্রি স্টাইল কুস্তির নিরঙ্কুশ অংহকার শিরিন সুলতানাকে। তিনি ২০১২ সালে ইন্দো-বাংলা চ্যাপিয়নশিপে বাংলার পক্ষে স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন। ২০১৬ সালে ১২ তম সাউথ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে রৌপ্য পদক অর্জন করেন। এছাড়াও তাঁর দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং নানা ধরণের অর্জনের সংখ্যাও অনেক বেশি। তার কাছে ৮ ই মার্চের গুরুত্ব কেমন তা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানিয়েছেন, "এই দিন নারীদের মর্যাদা, অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়, পুরো পৃথিবীতে নারীরা কতটা অবদান রাখছেন, কত অসামন্য কাজ দিয়ে নিজেদের প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাচ্ছেন তা সকলে জানতে পারে, তাই এই দিন গুরুত্বপূর্ণ, তাছাড়া অধিকার চর্চা বা নিজেদের দাবী জানানোর জন্য কোনো বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই,  যেখানেই অধিকারে প্রশ্ন উঠবে সেখানেই অধিকার আদায়ের এবং চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।" ব্যক্তিগত জীবনে খেলাধুলার ক্ষেত্রে তিনি দেখেছেন মেয়েদের আজও দূর্বল ভাবা হয়, তিনি জানান, যারা মেয়েদের আজও দূর্বল ভাবে তাদের ধারণা ভুল বরং চারপাশে থাকা প্রতিটা নারীই তাদের জানা শোনা থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাশীল। আজও কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে কিংবা নানা জায়াগায় নারীদের বৈষম্যের শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। একদিন সকল বৈষম্যের শিকল ভাঙবে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে,  সমতা আসবে সকল ক্ষেত্রে এটাই তাঁর কাম্য। তিনি আরো জানান, "আমি বাংলাদেশের সাধারণ ঘরের সাধারণ মেয়ে, এই দেশের প্রতিটা সাধারণ বাঙালি ঘরে ঘরে এমন শক্তিশালী, দৃঢ় মেয়েরা থাকে। আমরাই বাঙালির ছবি।"

বিশ্বের সর্বত্র নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান, শ্রদ্ধা ও সংহতি জ্ঞাপন, নারীর আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবদমন প্রতিহত করা এবং নারীর বিরুদ্ধে নানামুখী আক্রমণ, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে নারীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিবছর আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের একটি করে অফিশিয়াল থিম থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরের অফিশিয়াল থিম জেন্ডার সমতা।  যা আমাদের সফল দুই নারী ব্যক্তিত্বের সাথে আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে উঠে এসেছে বহুবার। পশ্চিমা কিছু দেশে নারীর অধিকার, অংশগ্রহণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অনেকটা অগ্রগতি হলেও উন্নয়নকামী দেশগুলো নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিন্তকরণে এখনো পিছিয়ে। তাই শুধু ৮ মার্চ নয় বরং সারাবছরই এ বিষয়ে আশাবাদী উদ্যোগ গ্রহণ করা কর্তব্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭