ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার শক্তি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী


প্রকাশ: 09/03/2022


Thumbnail

একটি বিষয়ে আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মূল ক্ষমতা কী? অনেকভাবে বলা চলে। আমি এক ধরনের লোক। আমার নিজস্ব চিন্তাধারা যেটি, স্বাভাবিকভাবেই আমার লেখায় সেই চিন্তাধারাই প্রতিফলিত হবে। সব লেখকেরই তাই হয়। আমি যদিও ওই রকমভাবে প্রতিষ্ঠিত কোনো লেখক নই, মাঝেমধ্যে লিখি। আমি নিজেকে অন্তত ছোট মাপের লেখক হিসেবে দাবি করতে পারি বা মনে করতে পারি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, নেত্রী শেখ হাসিনার আসল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আমি কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের সঙ্গে অনেক দিন থেকেই যুক্ত থাকার বদৌলতে এটি আমি হলফ করে বলতে পারি। যত দিন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দল ক্ষমতায় আছে, তত দিন আমি কোনো পদে থাকি বা না থাকি, কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকব এবং ইতোমধ্যে আমি হাজার হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছি। যখনই আমি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে যাই, আমার অভ্যাসবশত সেখানে একটি ছোটখাটো সভার ব্যবস্থা করি। আমি আগে থেকেই সভা আয়োজনের কথা বলে রাখি। সভায় সর্বোচ্চ ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা থাকেন। তার ওপরের কোনো নেতার থাকাটা পারতপক্ষে আমার পছন্দনীয় নয়। তবু দু-এক সময় এমপি পর্যায়ের লোকেরা এসে গেলে তাদের সম্মান দিতে আমি বাধ্য হই। এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চেনে ‘শেখের বেটি শেখ হাসিনা’ হিসেবে। তাদের অনেক বয়স, অনেক অভিজ্ঞতা। আর তারপর আস্তে আস্তে পরের প্রজন্ম আপা পর্যন্ত ডাকে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সবাই এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাকেই চেনে। তারা মনে করে তিনি দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যখন আলাপ হয় তখন তারা তাদের দোরগোড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হন। এটিই শুধু নয়, রাজনৈতিক বিষয়ে আমি দেখেছি তারা আমাদের যে কারও থেকে বেশি বিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ এবং তাদের কথাবার্তা অত্যন্ত পরিপক্ব। তারা যেমন বলেন, ‘কই নিজের টাকায়ই তো পদ্মা সেতু হচ্ছে’। তারা কিন্তু পত্রিকাও পড়েন না, তবু এসবের খোঁজখবর রাখেন। এই যে মেট্রোরেল হচ্ছে, বিদ্যুতে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে, গ্রামের মহিলা যাদের আগে কিছুই ছিল না তারা এখন লেখাপড়া করে, কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করছে, রোগীকে সেবা দিচ্ছে, অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়নের আসল যে জায়গা সেখানে প্রধানমন্ত্রী যে হাত দিয়েছেন, এটি তাদের কাছে দৃশ্যমান। এর আগে গ্রামের মহিলারা ক্ষুদ্রঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট নিত। মহিলাদের বিনা পয়সায় ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া, নেত্রীর জন্য অত্যন্ত সহজ কাজ ছিল। এর থেকে যদি অর্ধেক টাকাও ফেরত আসত, সেই অর্ধেকের সঙ্গে আরও অর্ধেক যোগ করে আবার ঋণ দেওয়া যেত। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণের অসুবিধা হচ্ছে, সবার স্বামী এক রকম নন। এদের অনেকেই সোজা পথে চলেন না। এটা বলতে কী বোঝায়, আপনারা নিশ্চয় বোঝেন। কেউ ফেনসিডিল খায়, কেউ তাস খেলে, অর্থাৎ এসব নিম্নকাজে ব্যতিব্যস্ত থাকে। তারা জানে তার স্ত্রী ক্ষুদ্রঋণ থেকে কবে টাকা পাবেন। সেদিন স্ত্রীর চুলের ঝুঁটি ধরে টান দিয়ে টাকাকড়ি নিয়ে যায়। আর যখন একজন মহিলা কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করেন, তখন সমাজে তার ক্ষমতায়ন হয়। এ ক্ষমতায়নের ফলে একজন নারী সমাজে সম্মানিত এবং স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হন। স্বামী যত ক্ষমতাবানই হোন না কেন, ওই মহিলার আয় করা টাকা তার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এর ব্যতিক্রম দু-একটি ঘটনা থাকতে পারে, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা কখনো আমার কানে আসেনি। ফলে বোঝা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করা মহিলাদের সমাজ দাম দেয়। এই যে শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করলেন, কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার সময় নারীদের ক্ষমতায়নের ব্যাপারে তিনি এক ধরনের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজটি করেছেন। এখন এই যে শেখ হাসিনা ক্ষমতার কেন্দ্রে, এই যে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ, তাদের সমর্থনে কোনো খাদ নেই। যারা বেশি জ্ঞানী তারা আরও লক্ষ্য করেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক জায়গায় খুনোখুনি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন এটি জাতীয় নির্বাচনের মহড়া। আসলে কিন্তু তা নয়। সারা বিশ্বেই স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোর ফলাফল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলে না। তবে পশ্চিমা বিশ্বে কিছুটা প্রভাব রাখে। এর কারণ হচ্ছে সেখানে গণতন্ত্রের ঝলক আছে, প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি আছে। কিন্তু আমাদের দেশের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে রূপ নেওয়ার কথা ছিল তা এখনো পরিপূর্ণভাবে সম্ভব হয়নি।

দেশের অনেকে গণতন্ত্র নিয়ে অনেক উদাহরণ দেন এবং উদাহরণ দিতে গিয়ে তারাই একেক সময় একেক কথা বলেন। বলতে গিয়ে তাদের এই যে দ্বিচারিতা, আমার মনে হয় অনেক সময় তারা নিজেরাও তা অনুধাবন করতে পারেন না। এখন অনেকেই বলা শুরু করেছেন, নির্বাচন আসলে চালান স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ব্যাংক-কর্মকর্তার মতো সরকারি চাকরিজীবীরা এবং সর্বোচ্চ উচ্চ পর্যায়ে থাকেন জেলা প্রশাসক বা ডিসি। আর মাঝখানে থাকেন রাজনীতিবিদরা। আমিও একবার বক্তৃতায় বলেছিলাম, ‘ডোন্ট ক্রস দ্য রেড লাইন’। সে সময় একটি পত্রিকায় খুব গুরুত্ব দিয়ে এটি ছাপা হয়েছিল এবং আমি যাকে উদ্দেশ্য করে এ কথাটি বলেছিলাম তার জুতসই কারণও ছিল। আমার বলার জন্য নাকি অন্য কারণে জানি না, কদিন পর দেখি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই ব্যক্তির ব্যাপারে একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আমলাদের দিয়ে কীভাবে কাজ আদায় করে নিতে হয়, রাজনীতিবিদদের অনেকেই বিষয়টি অনেক সময় বুঝতে সক্ষম হন না। আবার অনেক সময় আমলারাও রাজনীতিবিদকে দিয়ে কীভাবে দেশের কাজটি করিয়ে নিতে হবে তা অনেক সময় বোঝেন না। এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় যোগ হয়েছে। তা হচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগের ভিতরে সব লোক একরকম নন। ফেরিতে বা নৌকা পারাপারের সময় যেমন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক যাতায়াত করে, আওয়ামী লীগও অনেকটা সে রকম দল। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক এখানে আছে। অর্থাৎ সবাই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার চিন্তাধারার প্রতিফলন অনুযায়ী যেভাবে দেশ পরিচালনা করার কথা, অনেক ক্ষেত্রে ঠিক সেভাবে তাল মিলিয়ে করতে পারছেন না। কিন্তু নেত্রী একটি কাজ করেছেন, দল এবং রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করবেন, মোটামুটিভাবে তাদের একটু আলাদা করেছেন। দু-একটি জায়গায় ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত নেত্রীর বিশেষ প্রয়োজন ছিল বা যোগ্য বলেই এটি হয়েছে। সুতরাং সেখানে দেখা যাচ্ছে যারা দল চালাচ্ছেন তাদের কিন্তু দলে ধীরে ধীরে ক্ষমতায়ন হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আমলাদের অনেক ক্ষেত্রে একই সুরে যে কাজ করা দরকার তা অনেক জায়গায় হচ্ছে না। এও আশা করি ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। এটা ঠিক করার জন্য অন্যতম পদক্ষেপ নেত্রী ইতোমধ্যে নিয়েছেন। তিনি তাঁর দলীয় রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করেছেন এবং একই সঙ্গে যারা আমলাতন্ত্রের ভিতরে ঢুকে গেছেন তাদের দিকেও দ্বিতীয় দৃষ্টিতে নজর রাখছেন।

আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। অনেকে ভাবছেন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে। আমি মনে করি তারা বোকার স্বর্গে আছেন। যে নেত্রীর সঙ্গে এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে, যাঁর সঙ্গে জনগণ আছে পৃথিবীর ইতিহাস বলে তাঁকে ষড়যন্ত্র করে কোনো দিনই ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব নয়। ষড়ষন্ত্র করা এক বিষয়, আর ষড়যন্ত্র করে সাফল্য লাভ করা অন্য বিষয়। তা ছাড়া বুঝতে হবে, আল্লাহ নিজের চাদর দিয়ে তাঁকে রক্ষা করেন। না হলে এই বিএনপির জিয়াউর রহমান থেকে আমাদের হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পর্যন্ত অনেক কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেছেন। একুশে আগস্টের ঘটনা এ দেশের সবাই জানেন। এসব ঘটনা থেকে বেঁচে আসা আল্লাহর রহমত ছাড়া সম্ভব নয়। সুতরাং ওটাতেও গুড়ে বালি। বাংলাদেশে দল তো মাত্র দুটি। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং অন্যটি হচ্ছে অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। সেখানে বিএনপি নাম দেন, আর রহিমুল্লাহ বা কলিমুল্লাহ যা-ই নাম দেন না কেন কিছু আসে যায় না। যারা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে বা তাঁর মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেবে না তারা নির্বাচনের সময় অবশ্যই এক হয়ে যাবে। আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ঠিকই আওয়ামী লীগের বাইরে যে কোনো প্রার্থীকে ভোট দেবে। অনেকে বলেন, অনেকদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে অ্যান্টি ইনকামবেন্ট ফ্যাক্টর কাজ করে। কিন্তু এটি কখন হয়? যখন দেখা যায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিম্নগামী। এটি আমি বিশ্বের ইতিহাস থেকে বলছি। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি- এখানে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, মেট্রোরেল হচ্ছে, গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দেখছে বিদ্যুৎ যায় না। ফলে তারা তো ক্ষমতাসীনদের বিরোধী হবে না। এটি হওয়ার কোনো উপায়ও নেই, আর এটি হবেও না। সুতরাং ওইসব স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই। কারণ শেখ হাসিনার শক্তি এ দেশের আপামর জনগণ। তাদের কাছে শেখ হাসিনার বিকল্প শুধু শেখ হাসিনাই।

লেখক : সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭