ইনসাইড থট

স্বাধীন দেশের ছেচল্লিশ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/12/2017


Thumbnail

স্বাধীনতার অর্জনের পর আমাদের ৪৬ বছর পার হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়কালে আমরা দেশ হিসেবে একটা ভালো অবস্থানে উঠে আসতে পেরেছি, যদিও আমাদের আকাঙ্ক্ষার জয়গাতে এখনো পৌঁছাতে পারিনি। তারপরও আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে, শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে, কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, ভৌত ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে একটা অগ্রসর অবস্থানে আমরা পৌঁছেছি। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব যে খারাপ, তা বলা যাবে না। একই কথা খাটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। আমাদের স্বাস্থ্যচিত্র আরও ভালো হতে পারতো, তবে যেটুকু হয়েছে, তা দিয়ে আমরা মা ও নবজাতক শিশুর মৃত্যু অনেকটাই কমিয়ে আনতে পেরেছি, পোলিওসহ কিছু রোগ নিমূর্ল করতে পেরেছি।

যা পারিনি, তাঁর মধ্যে আছে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমানো, উন্নয়নের সুফল সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া; শিক্ষাকে সর্বজনীয় করা; দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণে রাখা; সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা; সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল কর। আমাদের রাজনীতিকে গণতন্ত্রের আদর্শে সঞ্জীবিত করতে পারিনি, জীবনের সকল ক্ষেত্রে সুনীতি চর্চাকে পরিব্যপ্ত করতে পারিনি এবং মানব পাচার রোধ নিশ্চিত করতে পারিনি। এখনো ক্রয় ফায়ারে মানুষ মরছে, মানুষ গুম হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ মানবাধিকারের বিষয়ে রাষ্ট্র সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি। আমরা সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলিকে সুরক্ষা দিতে ব্যার্থ হয়েছি। আমাদের এই ৪৬ বছরের ইতিহাসের অনেকগুলো বছর কেটেছে ফিরে আসা পাকিস্তান আদর্শবাদের অপচ্ছায়ার নিচে।

এতগুলি অনর্জন অথবা ব্যর্থতা আমাদের অর্জনগুলিকে নস্যাৎ না করে দিলেও ম্লান করছে। কিন্তু তারপরও আমি আশাবাদী আমরা কষ্টে-সৃষ্টে নানা বন্ধুর পথ, চোরাবালি-কানাগলি পার হয়ে যে অর্জনের মহাসড়কে পাটা রাখতে পেরেছি, তাতে এই অর্জন/ব্যর্থতাগুলি কাটিয়ে ওঠা আমাদের পক্ষে মোটেও অসম্ভব নয়। কীভাবে সম্ভব তা আমরা, বিশেষ করে আমাদের তরুণেরা, জানে। তবে সেসব নিয়ে আলোচনার আগে অর্জনের পথে বাধাগুলিকে আমরা শনাক্ত করতে পারি।

প্রধান বাধাটি হচ্ছে আমাদের অবাক জনসংখ্যা। পৃথিবীতে বাংলাদেশ সবচেয়ে জনবহুল দেশ। অনেক পশ্চিমা দেশ আমাদের ৫-৬ ভাগের একভাগ জনসংখ্যা নিয়ে অনেক বড় বড় সমস্যায় ভোগে। চারজন মানুষের জন্য তৈরি ঘরে আমরা চল্লিশজন থাকছি, তাতে যেসব সমস্যা হয়, সেসব বাংলাদেশের কপালে জুটেছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কথা এখন শুনিনা। সরকার বোঝহয় এক্ষেত্রে ‘যা হবার তাই হবে’ নীতিটা নিয়েছে। আমরা সবাই বিদ্যুৎ না পেলে, পানি না পেলে সরকার দুষি। কিন্তু ভেবে দেখিনা বিশাল এক অবাস্তব জনসংখ্যার সব দাবি পূরণ করার ক্ষমতাটা কোনো সরকারের থাকার কথা নয়।

আমাদের রোগাক্রান্ত রাজনীতি যে দেশের রাজনীতিতে কেনাবেচার বিষয়টি প্রধান হয়, ক্ষমতা উপভোগের বিষয়টি মুখ্য হয়, যে দেশের বড় কোনো দল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে র চেতনায়র বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সেদেশে উন্নয়ন-সহযোগী, নৈতিক মূল্যবোধ মন্ডিত, জনকল্যাণমুখী রাজনীতি হয় না। সংঘর্ষ হয়, সংঘাত হয়, দলাদলি হয়, কিন্তু সকলের সমান উন্নতি হয় না।

একটি বড় বাধা হচ্ছে দুর্নীতির সর্বগামিতা, দুর্নীতি আমাদের সকল মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়, জন্ম দেয় আদর্শহীনতা এবং স্বার্থপরতার। আরেকটি বাধা আমাদের মান ও গুণগত শিক্ষার অভাব। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখন শুধুই পরীক্ষার্থী। তোতা পাখি বাহিনী, এজন্য আমরা সুশিক্ষিত দক্ষ, আত্মপ্রত্যয়ী, কুশলী এবং উদ্ভাবনাময় পেশাদার, শিক্ষক, প্রকৌশলী ইত্যাদি তৈরি করতে পারিনি। এমনকি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যবস্থাপকও। এজন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে আসা প্রায় ৫ লাখ কর্মী আমাদের দেশ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার তাদের দেশগুলিতে নিয়ে যাচ্ছেন।

উগ্রতা, সহিংসতা, অস্থিরতা এসব তো আছেই তার সঙ্গে বড় একটি বাধা হয়ে এসেছে দলে দলে গোষ্ঠিতে গোষ্ঠিতে বৈরীতা। আমাদের মতো বিভাজিত সমাজ পৃথিবীতে আর আছে কিনা জানিনা।

পরিবেশ, পানি-মাটি-অরণ্য-নদী এসব বিষয়ে আমাদের চরম উদাসীনতা এবং এসবকে বিচ্ছিন্ন করে যেসব শক্তি প্রকল্প, মহল অথবা স্বার্থ তাদেরকে অবাধে অপকর্ম করতে দেওয়ার স্বাধীনতা।

বাধা বা সমস্যা আরও আছে। কিন্তু সেগুলো জয় করা যায় যদি আমরা নিচের ছটি বিষয়ও নিশ্চিত করতে পারি।

- শিক্ষার সর্বজনীনতা, সহজলভ্যতা এবং শিক্ষার মানগত উন্নতি নিশ্চিত করা।

- পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা এবং শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।

- নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মক্ষেত্রসহ সমাজের সকলক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করা।

- সুশাসন, সুবিচার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

- পরিবেশ রক্ষা করা

- দুর্নীতি নির্মূল করা।

কারা পারবে এসব নিশ্চিত করতে? আমার প্রজন্ম যে তা পারবে না, আমি নিশ্চিত। কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস, এখন যারা একেবারে তরুণ, স্কুল-কলেজে পড়ছে, তারা পারবে। তারা তৈরি হচ্ছে।

২. আমার এই বিশ্বাসের ভিত্তি গ্রামেগঞ্জে ঘুরে অর্জিত আমার অভিজ্ঞতা। আমার বাস্তবতার জ্ঞান। এরা পারবে কারণ এরা যখন কুঁড়ির কোঠার মাঝামাঝি উঠবে প্রযুক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রযুক্তির নানা অপব্যবহার আমরা দেখছি। এরা দেখবে প্রযুক্তির সুপার-ব্যবহার। এরা অপরিচ্ছন্ন রাজনৈতিকে পরিচ্ছন্ন করবে। এরা দেশকে নতুন করে গড়বে। কারণ এরা একাত্তরকে সত্যিকারভাবে জেনে বেড়ে উঠছে এবং উঠবে। এই তরুণেরা হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করছে। ভিন্ন কোনো পতাকাকে নয়।

একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এটুকুই।

সময় এদের সঙ্গে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স যখন ৭৫ হবে, তখন বাংলাদেশ বলতে এক গর্বিত দেশ বুঝাবে, বিশ্ব যার দিকে তাকিয়ে থাকবে।

এ কোনো স্বপ্ন নয়, এক বাস্তব সম্ভাবনার ছবিমাত্র।


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭