ইনসাইড গ্রাউন্ড

এই সাকিব সেই সাকিব নয়


প্রকাশ: 10/03/2022


Thumbnail

সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোষ্টার বয়। সবাই তাকে এক নামেই চেনে। নিজের খেলা দিয়ে সবাইকে যেনো মাত করে রাখতেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু এখন দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে। সাকিবই যেনো হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের গলার কাঁটা। বিবিসি না পাড়ছে গিলতে, না পাড়ছে উগড়ে দিতে। অনেকে আবার বলছেন, এটা শুধু সাকিবের একার দোষ নয়। সাকিবকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে জন্যই সে আজ মাথায় উঠে নাচছে। খাল কেটে কুমির নিজেই ডেকে এনেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

সাকিব আল হাসান মানেই যেনো রেকর্ডের ঝুলি। কত যে রেকর্ড তার ঝুলিতে, তা বোধহয় সে নিজেও জানেন না। কিন্তু এতো রেকর্ড কখনোই কাজে আসবে না যদি সে দলের হয়ে না খেলে। দল যদি তার কাছ থেকে উপকৃত না হয় তাহলে দলে তার থেকে লাভ কি, এমন প্রশ্নও কেউ কেউ তুলছেন। সাকিব আল হাসান এর আগেও বেশ কয়েকটি সফরের ঠিক আগে আগে ছুটি চেয়েছিলেন। শুরু ২০১৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে, এরপর ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ড সফর, ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে এবং চলতি বছর নিউজিল্যান্ডে দলের সাথে যাননি সাকিব আল হাসান। 

এমন একটা উদাহরণ বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুসও। তিনি বলেছেন, আরও ১৪-১৫ জন ক্রিকেটার আছেন তাদের কাছে বার্তাটা ভালো যাচ্ছে না। আমরাও চাই সিনিয়র ক্রিকেটাররা যাতে আরেকটু দায়িত্বশীল আচরণ করেন। 

এদিকে, সাকিবের এই আচরণ মেনে নিতে পারেননি ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও। তিনি বলেছেন, খেলতে না চাইলে সাকিবকে অনুরোধ করার কিছু নেই। সাকিব যদি খেলতে না চায়, বিসিবি ডোন্ট কেয়ার। কেউ যদি খেলতে না চায় তার জন্য বাংলাদেশ দল বসে থাকবে এটা ভুল চিন্তা। ওকে রিকোয়েস্ট করার কিছুই নেই, ও তো আমাদের এমপ্লয়ি। 

কতটা বিরক্ত হলে একটা বোর্ড তার সেরা খেলােয়ারকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারে তা বোঝাই যাচ্ছে। তার আচরণে অসুন্তষ্ট বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীরাও। বলা চলে এখন সাকিব ইস্যুতে দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা। একদল সাকিবে পক্ষে থাকলেও একদল ঘোর বিরোধী সাকিবের। বিরোধীরা বলছেন, যে ক্রিকেট সাকিবকে সব দিয়েছে সেই ক্রিকেটকে সাকিব পদদলিত করেছে। আজ তার কাছে দেশের ক্রিকেটের জন্য সময় নেই। যেখানে টাকা আছে, সেখানেই সাকিব ছোটে। তার উদাহরণ আমরা দেখেছি আইপিএল এর নিলাম দিয়ে। আইপিএল এর নিলামে তাকে কোনো দল না নেওয়ায় সে এতো মনের দিক থেকে আপসেট ছিল যে, ওই দিন সে বিপিএল এ নিজের দলের প্রাকটিসে পর্যন্ত যাননি। তার মানে টাকাই তার কাছে সব। 

ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, সাকিবের এই অবস্থাকে অধঃপতনই বলা যায়। কারণ আমরা যে সাকিবকে চিনি, এই সাকিব সেই সাকিব নয়। সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। খেলার চেয়ে ব্যবসার প্রতি মনোযোগ বেশি সাকিবে। আর বিজ্ঞাপন তো করছেই। তার মধ্যে এতোটাই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাব চলে এসেছে যে, সে এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। বায়োবাবল ভেঙে চলে যাচ্ছে বিজ্ঞাপন করতে। আবার ফিরে এসে দলে যোগ দিচ্ছে। এমন অবস্থা, যেনো তাকে বলা কেউ নেই। কাউকেই তিনি কেয়ার করেন না। এরই মধ্যে সাকিবকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বিশ্রাম দেওয়া মূলত সাকিবের জন্যই ভালো হলো। সাকিব তো এমনই চেয়েছিল। ফলে সাকিবকে নিয়ে এখনই বিসিবি'র ভাববার সময় এসেছে।

সাকিব যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটে আর সার্ভিস দিতে না পারে, তাহলে তার অবসরে যাওয়া উচিৎ বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। কারণ তার এইরকম ঝুলে থাকা দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়। বিশেষ করে দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য ভালো কিছু নয়। অন্তত সাকিব তার জায়গা ছেড়ে দিলে অন্য কোনো খেলোয়াড় তার জায়গায় দেশকে অনেক দিন সার্ভিস দিতে পারবে। ফলে সাকিবের বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। কারণ দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭