ইনসাইড গ্রাউন্ড

বিসিবি'র কাছে কি অপরিহার্য সাকিব?


প্রকাশ: 11/03/2022


Thumbnail

সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন ভালো খেলােয়াড় এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি অনেকদিন যাবত বাংলাদেশ দলকে তার পারফরমেন্স দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার বেশ কিছু কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) যেমন বিরক্ত করেছে, ঠিক তেমনি দেশের মানুষকেও বিরক্ত করেছে। সম্প্রতি সাকিব আলোচনায় এসেছিলেন শারীরিক ও মানসিক অবসাদের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে না চেয়ে। এরপর বিসিবি তার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তেও আসে। সাকিবকে তারা ক্রিকেটের সব ফরমেট থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্রামে পাঠায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল এবার তারা সাকিবের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্তে যাচ্ছেন। কিন্তু গতকালই সেই সব আলোচনায় জল ঢেলে দেওয়া হলো। দেখা গেলো বোর্ডের নতুন চুক্তিতে সাকিব আছেন তিন ফরম্যাটেই। এতে করে জনমনে একটি প্রশ্নই বার বার ঘুরে ফিরে আসছে। সেটি হলো বোর্ডের কাছে কি অপরিহার্য সাকিব আল হাসান?

শেষ চার-পাঁচ বছরে সিরিজের আগে যেতে না চাওয়া, বিশেষ করে টেস্ট খেলতে অনীহা নিয়ে কম কথা হয়নি। শুরু ২০১৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে, এরপর ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে যাননি তিনি। ২০২১ সালে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে বাংলাদেশ দল খেলেছে ৪৬টি ম্যাচ। যার মধ্যে সাকিব খেলেছেন ৩৩টি। কখনও ইনজুরি, কখনও বা ছুটি নিয়ে ১৩টি ম্যাচ খেলেননি এই অলরাউন্ডার। থাই ইনজুরির কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট খেলেননি সাকিব। এপ্রিলে শ্রীলংকার মাঠে দুটি টেস্ট থেকে ছুটি নিয়ে আইপিএল খেলেছিলেন। বিশ্বকাপ পরবর্তী চোটের কারণে নভেম্বরে খেলতে পারেননি পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট। গত বছর ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ১২ ম্যাচ খেললেও তিনটি ম্যাচে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। চোট থেকে পুরোপুরি ফিট না হওয়ায় মার্চে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ছুটি নিয়ে পরিবারকে সময় দিতে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ২০২১ সালে ২৭ ম্যাচ খেললেও সাকিব মিস করেছিলেন ৬টি। যার তিনটি ছিল নিউজিল্যান্ড সফরে; আর বাকি তিনটি দেশের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে।

ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, সাকিবের ধারাবাহিকতার অভাব থাকার সত্ত্বেও কোন আশায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) তাকে তিন ফরমেটের চুক্তিতে রাখলো এটি বোধগম্য নয়। যেখানে তার খেলার প্রতি কোনো মনোযোগ নেই। বিশেষ করে টেস্ট খেলার প্রতি তো নয়ই। সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। খেলার চেয়ে ব্যবসার প্রতি মনোযোগ বেশি সাকিবের। আর বিজ্ঞাপন তো করছেই। তার মধ্যে এতোটাই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাব চলে এসেছে যে, সে এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। সে নিজেকে অপরিহার্য মনে করছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আর মনে করবে নাই বা কোনো? তাকে মনে করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বোর্ড দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, তাকে তিন ফরমেটের চুক্তিতেই রাখার হয়েছে। এর ফলে অনেক ভালো ক্রিকেটারের কপালও পুড়েছে। 

ক্রিকেটপ্রেমীরা বলছেন, সাকিব আল হাসান আমাদের কাছে একটি আবেগের নাম। তাকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু তার আগে আমরা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভালোবাসি। তার কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষতি হোক সেটা আমরা চাই না। দেশের মানুষ সাকিবকে আগে যে ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করতো, এখন তা আর হচ্ছে না। এর কারণ সাকিব নিজেই। সে দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু সাকিবের নিষেধাজ্ঞার সময়ও দেশের মানুষ তার পাশেই ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সাকিবের প্রতি সেই সম্মানটা আর থাকছে না। তাই এই বিষয়ে বিসিবি'রও ভাবা উচিৎ। সাকিবকে অপরিহার্য করে ফেলা উচিৎ নয়। কারণ আর দুই-তিন বছর পরে সাকিব না থাকলে তখন তো নতুনদের দিয়েই চালাতে হবে। তাহলে আগেই কেন নতুনদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না এই প্রশ্ন সবার মনে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭