ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মারিউপোল যেনো এক মৃত নগরী


প্রকাশ: 11/03/2022


Thumbnail

ইউক্রেনের অন্যতম বৃহৎ শহর মারিউপোল। প্রায় ৫ লাখ জনসংখ্যার দক্ষিণের বন্দরনগরী এই শহরটি ছিলো ইউক্রেনের অন্যতম আমদানি-রপ্তানির প্রবেশ পথ। দেশি-বিদেশিদের পদচারণায় সব সময় মুখরিত এই বন্দর শহরটি এখন প্রায় মৃত। বন্দর নগরী হওয়ায় ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর থেকে রুশ সেনাবাহিনীর প্রধান টার্গেটগুলোর একটিতে পরিণত হয় মারিউপোল। মুহুর্মুহু গোলা আর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে শহরটি জুড়ে এক হাহাকার আর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

রাশিয়ার আক্রমণের ভয়াবহতায় শহর ছেড়ে পালিয়েছে বাসিন্দারা। যদিও যুদ্ধপরিস্থিতির কারণে অনেকেই আটকা পড়েছেন শহরে। তবে এটি যেনো রুশ মিসাইলের সামনে স্বেচ্ছায় নিজেকে সমর্পণেরই নামান্তর। যদিও যুদ্ধ শুরুর পর রুশ বাহিনী বেশ ক'বার শহরটিতে ‘মানবিক করিডর’ চালুর ঘোষণা দিয়েছিলো কিন্তু দুই পক্ষের অবিশ্বাস আর সিদ্ধান্তহীনতায় বেশিদূর আগাতে পারেনি এই মহৎ উদ্যোগটি। মানবিক করিডর পুরোপুরি ভাবে চালু করা সম্ভব হলে শহরটির বহু বাসিন্দা ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে অন্তত জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরতে পারতো। 

মারিউপোলের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে শহরটির মেয়র বলেছেন, রাশিয়ার হামলায় শহরে ঠিক কত মানুষ মারা গেছেন, তা তিনি জানেন না। তবে মারিউপোলের সড়কে সড়কে পড়ে আছে শত শত মরদেহ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সড়ক থেকে এক হাজার ২০৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ডেপুটি মেয়র সেরহি ওরলোভ বিবিসিকে বলেছেন, ‘এগুলো কেবল সেসব মরদেহ; যেগুলো আমরা সড়ক থেকে উদ্ধার করেছি।’ তিনি বলেন, শহরের বাইরে কবরস্থানে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় ৪৭ জনকে গণকবর দেওয়া হয়েছে। তাদের সবার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। শহর থেকে লোকজনকে সরানো অথবা সহায়তার আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়নি। বুধবার অন্তত ১০০ মানুষ ব্যক্তিগত যানবাহনে করে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা যেতে পারেননি। রাশিয়ার সৈন্যরা শহরের তল্লাশি চৌকিতে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করায় তাদের গাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছে। রুশ সৈন্যরা সরাসরি তাদের গাড়িতে নয়, গাড়ির চারপাশে গুলি চালানো শুরু করায় তারা ফিরেছে।

রুশ সেনাবাহিনীর অভিযানে শহরটি যখন পুরোপুরি অবরুদ্ধ তখন শহর জুড়ে তৈরি হয়েছে চরম আকারের খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট। শহরটিতে খাদ্য ও পানির সরবরাহ বিপজ্জনক মাত্রায় ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস। যুদ্ধের কারণে কাজ না থাকা এবং বাহিরে বের হতে না পারার কারণে অনেক পরিবারের কাছেই থাকা খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। কিছু কিছু জায়গায় খাবারে এমন সংকট তৈরি হয়েছে যে, মানুষ খাবারের লোভে একে অপরের উপর হামলা শুরু করেছে। এমনকি শহরটি বিভিন্ন জায়গায় সবজি বিক্রির কালো বাজার পর্যন্ত তৈরি হয়েছে যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার বিক্রি হচ্ছে বেশ উচ্চ মূল্য। তবে সেখানে মাংস অথবা মাংস জাতীয় খাবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। 

শহরজুড়ে ওষুধের সরবরাহ দ্রুত কমে যাচ্ছে বলে রেডক্রস জানিয়েছে, শহরের ফার্মেসিগুলো চার থেকে পাঁচদিন আগে লুট করা হয়েছে। তবে কিছু হাসপাতাল এখন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর্দ্রতা এবং ঠাণ্ডার কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। লোকজন বিভিন্ন ধরনের ওষুধের চাহিদা জানাচ্ছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও ক্যানসার রোগীদের ওষুধ। কিন্তু শহরে এসব আর খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় নেই।

রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ১৫ দিনে মারিউপোলের মত ইউক্রেনের বেশিরভাগ শহর একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাজধানী কিয়েভের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেশী এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ২০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। 

এদিকে, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মাঝে কিছুটা নরমভাব লক্ষ্য করা গেছে। যদিও তুরস্কের উদ্যোগে প্রথমবারের মত দেশটির শহর আনতালিয়া বসে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক। যদিও কোন প্রকার অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয় বৈঠকটি। এমনকি এই যুদ্ধ কবে নাগাদ শেষ হবে এবং এর পরিণতি কী হতে পারে, সে ব্যাপারে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। তবে যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ববাসীর কাছে বৈঠকটি বেশ গুরুত্বর সাথে দেখা হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত আগ্রাসী শক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করবে তার দেশ। রাশিয়ার কাছে কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করা হবে না বলে হুংকার দিয়েছেন তিনি। 

তবে কুলেবারের এই হুঙ্কার ভালুকের পাঞ্জা থেকে কিভাবে ইউক্রেনকে শেষ রক্ষা করতে পারে সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছে বিশ্বের প্রতিটি চোখ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭