ইনসাইড পলিটিক্স

রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি


প্রকাশ: 11/03/2022


Thumbnail

দেশের বাজার পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠছে দিনের পর দিন। দ্রব্যমূল্যের লাগম টেনে ধরাই যেনো মুশকিল হয়ে গিয়েছে। পেঁয়াজের ঝাঁঝে ক্রেতাদের চোখে পানি আসছে আর সয়াবিন তেলের বাজার চড়া হতে হতে এখন ধরাছোয়ার বাইরে। সব পণ্যের দামেই অস্বস্তি। আর বাজার পরিস্থির এই অস্বস্তি এখন বাজার বা ঘর ছেড়ে রাজপথে। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে রাজপথের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সারাদেশেই সভা-সমাবেশ করছে। বাম দলগুলোও বসে নেই। তারাও এ নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আওয়ামী লীগও অস্বস্তিতে রয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে এখন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।

গত প্রায় দুই বছর ধরে মহামারী করোনোর বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। চলমান গতিশীল অর্থনীতির ওপর বড্ড ধাক্কা নিয়ে আসে এই করোনা মহামারী। করোনার কারণে সব কিছুতেই এক ধরনের স্তবিরতা নেমে এসেছিল। ফলে তার প্রভাব পরে রাজনীতিও। রাজনৈতিক দলগুলো এ সময় তেমন কোনো কর্মসূচি করতে পারছিল না। যাও বা ছিল, তা কেবল ত্রাণ বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সময় গড়িয়ে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ফলে রাজনীতির মাঠও সরগরম হতে শুরু করেছে। করোনার সংক্রমণের পর প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম হতে থাকে। প্রথমবারের দেশে আইন অনুযায়ী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করার উদ্যোগ নেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। আইন অনুযায়ী ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন তিনি। 

সার্চ কমিটিও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন শুরু করে। দেশের সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন পেশাজীবীর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে এবং নাম প্রস্তাবের আহ্বান জানায়। প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন পেশাজীবী এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সার্চ কমিটিকে সহযোগিতা করলেও ব্যতিক্রম ছিল শুরু বিএনপি। যদিও সার্চ কমিটি একাধিক বার তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কিন্তু তারা সে কথায় কর্ণপাত করেননি। বরং এই সার্চ কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার কোনো কিছুর সঙ্গেই তারা থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন। তারা তাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়ে অটল থাকে। যা মূলত দেশের বিদ্যমান সংবিধানের পরিপন্থী। 

নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যু। এর রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড হয়ে উঠেছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটি হলে সেখানে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ থেকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এই ভোটদানে বিরত থাকা নিয়েও রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত। বিএনপি বলছে, দেশবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত জনমত গোটা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার বিষয়ক মূল স্রোতের সঙ্গে মিশে আছে। কিন্তু দেশের ক্ষমতাসীন সরকার তার ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে দেশবাসীর জনমতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদানে বিরত থেকেছে। যা বাংলাদেশের সংবিধান ঘোষিত গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধের নীতিমালা পরিপন্থী। এদিকে আওয়ামী লীগ বলছে নিরপেক্ষ থাকাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। রাজনীতির মাঠে এ নিয়ে এখনও কথা চলছে।

এর মধ্যেই এসেছে নতুন ইস্যু। সেটি হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য কিছুটা দায়ি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কিছুটা দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনীতির মাঠের গরম। এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে করছে বিরোধীদলগুলো। দ্রব্যমূল্য যেন তাদের রাজনীতির খোড়াক জুগিয়েছে। টক অব দ্যা কান্ট্রি এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এই নিয়েই চলছে রাজনীতির মাঠে কাদা ছোড়াছুড়ি। এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

গত কয়েকদিনে দেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কথা পর্যালোচনা করলে তেমনটাই নির্দেশ করে। গতকাল রাজধানীতে এক আলোকচিত্র প্রর্দশনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে উস্কানি দিচ্ছে। তিনি দাবি করে বলেন, করোনা ও যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে জেনেও বিএনপি নেতারা আহাম্মকের মতো কথা বলছেন। একইভাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন বলেন, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী খাদ্য মজুত করে অস্থিতিশীল করতে চায় আর বিএনপি-জামায়াত এই শ্রেণি ব্যবসায়ীদের উস্কে দেয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিমায় সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বহু ধরণের ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখনও কিছু ব্যবসায়ী ষড়যন্ত্রে জড়িত। যারা এই মূল্য বৃদ্ধি করের সরকারকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চায়। জনগণকে বিক্ষুব্ধ করতে চায়।

অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, সরকারের লুটপাট আর দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। সমাজতান্ত্রিক দলের  (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়াতে গরিব মানুষ হাহাকার করছে। কিন্তু এ সরকার বধির, গরিবের হাহাকার সরকারের কানে যায় না। মন্ত্রীরা নানা রকম কথা বলে মানুষের দুঃখ কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।

দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সরকারের দুঃশাসনের প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোট আগামী ২৮ মার্চ সারাদেশে হরতাল কর্মসূচি ঘোষনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সাথে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়ের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম সরকার দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকার পতনে বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করার হুশিয়ারি দেন। সব রাজনৈতিক দলগুলো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় সরব হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। যেনো রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭