ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ঝুঁকিতে আব্রামোভিচের সম্পদ, যুক্তরাজ্যেই আটকা পড়ছে অনেক


প্রকাশ: 12/03/2022


Thumbnail

রাশিয়ার ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ। ফুটবল ক্লাব চেলসির মালিকানায় রয়েছেন তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে ঝুঁকিতে পড়েছে আব্রামোভিচের সম্পদ। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপরে এরই মধ্যে নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর ফলে দেশটির অর্থনৈতিকভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর আঁচ লেগেছে আব্রামোভিচের সম্পদের ওপরও। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই চেলসির মালিকানা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন আব্রামোভিচ। দেনা মাফ করে দিয়ে প্রিমিয়ার লিগের এ ফুটবল ক্লাবটি বিক্রিও করে দিতে চেয়েছিলেন রাশিয়ার এই ধনকুবের। তবে যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘কাছের লোক’ আব্রামোভিচের যুক্তরাজ্যে যত সম্পদ আছে, সব জব্দ করার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে চেলসির ওপর এটি একটি বড় ধাক্কা হিসেবেই এসেছে। যুক্তরাজ্যে আব্রামোভিচের সম্পদের তালিকাটা অবশ্য শুধু লন্ডনের এ ক্লাবেই সীমাবদ্ধ নয়। তার বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর তাই মোটা অঙ্কের ক্ষতিই হতে চলেছে চেলসি মালিকের।

বলা হয়, পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ততা আব্রামোভিচেরই। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে এক সাংসদ প্রথম বলেছিলেন, চেলসি ছাড়াও যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদ বেশ কম দামেই বিক্রি করে দিচ্ছেন আব্রামোভিচ। চেলসিকে ৪ বিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি করা হবে বলেও মনে করা হচ্ছিল।  

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চেলসি ছাড়া এভরাজ ও নরিলস্ক নিকেল নামের দুটি স্টিল কোম্পানির মালিকানা আছে আব্রামোভিচের। দুটি কোম্পানিই লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে আব্রামোভিচ এভরাজের কোনো শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না। গত বৃহস্পতিবার সকালেই এর শেয়ারের মূল্য প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে। এরপর ‘কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত’ শেয়ারটির বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২১ সালের শেষে এভরাজে আব্রামোভিচের ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন পাউন্ড সমমূল্যের শেয়ার ছিল, গত বুধবার সন্ধ্যায় সেটি দাঁড়িয়েছে ৩২০ মিলিয়ন পাউন্ডে। গত বৃহস্পতিবার নরিলস্ক নিকেলের শেয়ার কেনাবেচাও বন্ধ করে দিয়েছে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ।

এ ছাড়া আব্রামোভিচ সেন্ট্রাল লন্ডনের কেনসিংটন প্যালেস গার্ডেনসে ১৫ বেডরুমের একটা ম্যানশনের মালিক। সেটি ২০০৯ সালে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা। টেমস নদী দেখা যায়, এমন একটা চেলসি পেন্টহাউসও আছে তাঁর। ২০১৮ সালে আব্রামোভিচ এটি কিনতে ২২ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেছিলেন। অবশ্য আব্রামোভিচের এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার তালিকায় থাকলেও যুক্তরাজ্য সরকার ছুঁতে পারবে না ব্রিটিশ রাজপরিবারের মালিকানাধীন ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগর উপকূলে থাকা তাঁর বিলাসবহুল ভিলাকে। শাতো দো লা ক্রো নামের ওই ভিলার মূল্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরো।

ফোর্বসের অনুমান অনুযায়ী, আব্রামোভিচের মোট সম্পদের মূল্য প্রায় ৯.৪ বিলিয়ন পাউন্ড। যুক্তরাজ্য সরকার তাঁকে উল্লেখ করেছে ‘১৯৯০-এর দশক থেকে পুতিনের অধীনে থেকে খ্যাতি অর্জন করা স্বল্পসংখ্যক গোষ্ঠীশাসকদের একজন’ হিসেবে।

যুক্তরাজ্যে এসব সম্পদের বাইরে আব্রামোভিচের অন্য সম্পদও সম্ভবত ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম বড় সুপারইয়ট ১৪০এম সোলারিসের মালিকও আব্রামোভিচ। এ প্রমোদতরিতে প্রায় ৩৬ জনকে আতিথ্য দেওয়া যায়। সুপারইয়টফ্যান ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি মার্কিন ডলার। এ ছাড়া এর চেয়েও বড় ১৬২এম একলিপ্স নামে আরেকটি প্রমোদতরির কথা শোনা যায়, যেটির দাম ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার।

এই প্রমোদতরিগুলো যাতে কোনো দেশের সরকার জব্দ করতে না পারে, সে জন্য গত দুই দিনে সেগুলো নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন আব্রামোভিচ। সোলারিস প্রমোদতরিটি গত মঙ্গলবার বার্সেলোনার বন্দরে ছিল, সেটিতে সংস্কারকাজ চলছিল। কিন্তু জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের ওয়েবসাইট ম্যারিন ট্রাফিকের তথ্য দিয়ে গার্ডিয়ান লিখেছে, বৃহস্পতিবার সকালে সেটি ছিল ইতালির সিসিলির দক্ষিণ উপকূলে। অন্য প্রমোদতরি একলিপ্স ক্যারিবিয়ান দ্বীপ সেন্ট মার্টেন থেকে পূর্ব দিকে যাত্রা করেছে, যাতে দ্রুতই আন্তর্জাতিক নৌসীমায় ঢুকে যেতে পারে। ভেসেলফাইন্ডার ডট কমের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দিনের মধ্যভাগের আগেই একলিপ্স আটলান্টিকের অনেকটা পাড়ি দিয়েছে, ক্যানারি দ্বীপের পশ্চিম দিকে দেখা গেছে সেটিকে। 

দ্রুত যাতায়াতের জন্য চেলসি মালিকের একটি ব্যক্তিগত বিমানও আছে। গত বছর প্রকাশিত ফোর্বস রাশিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৩৫০ ইউএস ডলার খরচ করে একটা বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার কিনেছেন আব্রামোভিচ। এমনিতে যাত্রী পরিবহনে এ বিমান ব্যবহার করা হয়, ৩০০ জন মানুষ নেওয়া যায় এতে। তবে বিলাসবহুল ভ্রমণের জন্য আব্রামোভিচের এ বিমানকে বিশেষ সাজে সাজিয়ে নেওয়া হয়েছে, সক্ষমতা নামিয়ে আনা হয়েছে ৩০ জন যাত্রী ও ২০ জন স্টাফে। ফ্লাইটরাডার২৪-কে সূত্র হিসেবে জানিয়ে গার্ডিয়ান লিখেছে, ৪ মার্চ আব্রামোভিচের সেই বিমান মস্কো থেকে দুবাই গিয়ে আবার ফিরে গেছে মস্কোতে।

ফলে নিষেধাজ্ঞায় আব্রামোভিচের সম্পদ এখন অনেকটাই ঝুঁকিতে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য তার যে সম্পদগুলো রয়েছে সেগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায়। ফলে আব্রামোভিচের এই সম্পদ এখন নিষেধাজ্ঞার খাতায়। কবে এই সম্পদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে তাও তিনি জানেন না। ফলে কার্যত বিপদেই পড়েছেন রোমান আব্রামোভিচ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭