ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

‘আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চাই না’


প্রকাশ: 12/03/2022


Thumbnail

ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে অনেক কিছুই দেখেছে ইউক্রেনীয় জনগণ। বন্ধু বন্ধু বলে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে দেওয়া ইইউ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনা দিয়ে কিংবা ভারী কোন সরঞ্জাম দিয়ে ইউক্রেনীয়দের সাহায্য তো করেইনি বরং রাশিয়ার হামলা ঠেকাতে ন্যাটোর সদস্য করা কিংবা ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করা, ইউক্রেনের কোন চাহিদাই শেষ পর্যন্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়নি পশ্চিমারা। আর তাই তো দিন শেষে নিজেদের যুদ্ধ এখন তাই নিজেদেরই করে যেতে হচ্ছে ইউক্রেনবাসীদের। 

তবে কথার ফুলঝুরিতে থেমে নেই পশ্চিমা বিশ্ব। রাশিয়ার নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর বিধিনিষেধ এবং দেশটির বিভিন্ন রপ্তানিকারক পণ্যর উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারা যেনো ইউক্রেনীয় বাসীদের সামনে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার’ ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। যাতে লাভের লাভ থেকে যুদ্ধটাই দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে ইউক্রেনের। 

রাশিয়ার উপর যতই বিধিনিষেধ নিয়ে হুঙ্কার করুক না কেনো পশ্চিমারা বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো আদতে রাশিয়ার উপর তাদের অর্থনীতি অনেকাংশেই নির্ভর। ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে তেল-গ্যাসের প্রাচুর্য। ইউরোপের মোট গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ, তেলের ২৭ এবং কয়লার প্রায় ৪৬ শতাংশ এক রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। আর তাই মুখে ইউরোপের দেশগুলো যে যাই বলুক আর যত বিধিনিষেধ আরোপ করুক রাশিয়ার মূলধনের উপর আধতে হাত দেওয়ার সাহস নেই কোন দেশেরই। আর তাই তো যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হওয়া ইইউয়ের জরুরি বৈঠকে কোন দেশই রাশিয়ার তেল-গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে একমত তো হতেই পারেনি বরং কোন কোন দেশ এই মুহূর্তে ইউরোপে রাশিয়ার জ্বালানী সরবরাহের ব্যাপারে যাতে কোন বাঁধার সম্মুখীন না হয় সে বিষয়ে অনেক বেশি চিন্তিত দেখা গেছে। কারণ ইতিমধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ইউরোপে জ্বালানী সরবরাহ বন্ধের হুমকি ইউরোপের দেশগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তথা ন্যাটোর এমন গা ছাড়া ভাব ইউক্রেনীয় রাজনৈতিকদের যেনো আরো বেশি অস্থির করে তুলেছে। যেই ন্যাটোতে যোগদান নিয়েই আসলে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের এই যুদ্ধ সেই ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং রাশিয়ার দেওয়া চাহিদা মেনে নেওয়ার বিষয়ে আভাস কিন্তু দিন শেষে রাশিয়াকে এই যুদ্ধের আসল বিজয়ী হিসেবে দিন দিন সামনে নিয়ে আসছে। 

তবে এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানে উৎসাহ, রাশিয়ার সাথে বিরোধ এই সব কিছুর পিছনে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই কলকাঠি নাড়িয়ে গেছে। যদিও যুদ্ধের শুরুর পর থেকে শুধু বিধিনিষেধ দিয়েই পুরো ঘটনা প্রবাহ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে দেশটি। যুদ্ধর পর থেকে ইউক্রেনের উপর ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণার ব্যাপারে দ্বিমত, ইউক্রেনে সেনা পাঠানো নিয়ে সরাসরি মানা করে দেওয়া, দেশটির প্রেসিডেন্টকে সুরক্ষার নামে যুদ্ধর মাঝ থেকে ইউক্রেন থেকে বের করে নিয়ে আসার প্রস্তাব যেনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো একবার নির্মম স্বার্থবাদী দেশ হিসেবে আবারো বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। 

এত কিছুর পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করে চললেও নিজেদের সেনাদের ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানোর ক্ষেত্রে আবারো মানা করে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কিকে। এর কারণ হিসেবে তিনি তৃতীয় যুদ্ধে বেঁধে যাওয়ার কথা উল্লেখ্য করেন। নিজের এক টুইট বার্তায় বাইডেন বলেন, “পরিষ্কার করে বলতে চাই আমরা ন্যাটো অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চিতে আমরা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করব। আমরা ইউক্রেনে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করব না। ন্যাটো ও রাশিয়া মুখোমুখি অবস্থান নিলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।“ 

বাইডেন আরও জানান, রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি লড়তে মার্কিন সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এবং নতুন করে রাশিয়ার অ্যালকোহল, সি ফুড ও হীরা আমদানি নিষিদ্ধের পথে হাঠছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সাথে প্রয়োজনে রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি বন্ধের পর স্বাভাবিক বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়ে রাশিয়াকে চাপে ফেলা হবে বলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে আশ্বস্ত করেছেন বাইডেন। 

আদতে বাইডেন কি নিজেকেই আরেকবার আশ্বস্ত করলেন? গ্রাম-গঞ্জে একটা কথার খুব প্রচলন আছে, ‘খাবারের আগে যাও, মারামারির পরে’। আমেরিকা সহ সমগ্র ইউরোপ খুব ভালো করেই জানে আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে যাওয়া মানেই নিজেদের ঘাড়ে যুদ্ধকে সরাসরি টেনে আনা। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে পরমাণু শক্তিধর এবং দ্বিতীয় সামরিক শক্তিধর দেশটিকে নাড়া দেওয়া মানে নিজ দেশের জনগণের উপর এক সাক্ষাৎ জাহান্নাম নামিয়ে আনা। আর তাইতো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটিও সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে শুধু অর্থনৈতিক যুদ্ধের পথটিই বেছে নিয়েছে নিজের সবচেয়ে বড় শত্রুকে ঘায়েল করতে। আর তাই তো মুখ ফুটে বার বারই একটা কথা বিশ্বকে স্মরণ তিনি করিয়ে চলেছেন ‘আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চাই না’।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭