ইনসাইড পলিটিক্স

ক্ষমতার স্বার্থে দেশের বিরোধিতা করাই কি বিএনপি'র একমাত্র লক্ষ্য?


প্রকাশ: 13/03/2022


Thumbnail

যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশেই বিরোধী দলগুলো সরকারের সমালোচনা করে থাকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটাই স্বাভাবিক। তবে সে সমালোচনা হতে হয় গঠনমূলক, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এবং জনকল্যাণের পক্ষে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে ‘রাজনৈতিক সমালোচনা’ করে, তা কতটা গঠনমূলক, এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে তেমন কথা বলতে দেখা না গেলেও এ বিষয়ে বেশ সরব দেখা যায় রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিকে। তারা গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকারি যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে বিবৃতির মাধ্যমে বা সংবাদ সম্মেলন করে সমালোচনা কিংবা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এমনকি বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হলেও তাদের কোনো উদ্বেগ নেই, বরং ভেতরে ভেতরে খুশি হয় বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়ার প্রেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করা মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। ভারত, চীনসহ ৩৫টি দেশ এই অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি মনে করে দেশবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত জনমত গোটা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার বিষয়ক মূল স্রোতের সঙ্গে মিশে আছে। কিন্তু দেশের ক্ষমতাসীন সরকার তার ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে দেশবাসীর জনমতের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদানে বিরত থেকেছে। যা বাংলাদেশের সংবিধান ঘোষিত গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধের নীতিমালা পরিপন্থী’। তবে বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্যের সাথে কোনোভাবেই একমত হতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, বাংলাদেশ সরকার কোনো যুদ্ধকেই সমর্থন করে না। আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে সরকার মনে করে। বাংলাদেশের এই অবস্থান শান্তির পক্ষে। 

বিএনপির বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা এবারই প্রথম নয়। বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করাই এখন বিএনপির রাজনৈতিক কালচারে পরিণত হয়েছে। সেটা জনগণের পক্ষেই হোক কিংবা বিপক্ষে। কিছু দিন আগে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপ থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে স্তরে বিএনপি বিরোধিতা করেছে। এমনকি শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্য বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহর প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পাওয়ার পর ডা. জাফরুল্লাহকেই বিএনপির কেউ নয় বলে মন্তব্য করছেন দলটির নেতারা। নিজের দলের নেত্রী পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় বললেও সংবিধানের বাইরে গিয়ে এখন বিএনপিই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি তুলছে। দীর্ঘ ১৩ বছরে বিএনপি এরকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যেখানে শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে গেছে বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বিএনপি সরকারের বিভিন্ন কাজের তথ্যনির্ভর সমালোচনার চাইতে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গৃহীত প্রায় সব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার একটি অভ্যাস দলের ভেতর থেকেই রপ্ত করে ফেলেছে। ফলে সমালোচনা ও বিরোধিতা যে দুটো ভিন্ন বিষয় সেটি যেন তাদের কাছে একাকার হয়ে গেছে। বিরোধী দলের সমালোচনার ক্ষেত্রে তথ্য ও যুক্তি জনগণের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা তৈরিতে সাহায্য করে। কিন্তু অন্ধের মতো বিরোধিতা করার ফলে তেমন কিছু অর্জিত যে হয় না, এটি বোধহয় বিএনপি আমলে নিচ্ছে না। এর ফলে বিএনপি জনগণ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭