ইনসাইড আর্টিকেল

ভালো থাকার চাবিকাঠি আমাদের হাতেই


প্রকাশ: 15/03/2022


Thumbnail

বর্তমান সময়ে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যতটা প্রয়োজন, ঠিক ততটা গুরুত্বপূর্ণ মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটা৷ মানসিক সুস্থতার বিষয়ে অনেক সময় আমরা অবহেলা করি। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার মতোই, মানসিকভাবে সুস্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।  বেসরকারি এক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন আত্মহননে প্রাণ যাচ্ছে  গড়ে ৩৯ জনের। এদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের,  তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা এই পরিস্থিতির একটি অন্যতম কারণ। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা আমাদের মনের অসুখ বুঝতে পারি না। শারীরিক অসুস্থতা চোখে দেখা গেলেও, মানসিক অসুস্থতা দেখতে পাওয়া যায় না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বুঝতে পারি না, কিংবা অবহেলা করে বসি।

আমাদের ভালো থাকার চাবিকাঠি অবশ্যই আমাদের হাতেই। সুস্থ, সচেতন,  ফিট থাকতে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। মানসিক অবসাদ,  রোগ যেন বাসা না বাঁধে তা নিয়ে আমাদেরই সচেতন হতে হবে। কর্মব্যস্ত জীবনে বাড়তি কাজের চাপে আমাদের অনেকেরই সময় হয় না মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করার। আবার, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা কেন্দ্রিক বিভিন্ন ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু এই মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা নিশ্চিতকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  করোনাকালীন গৃহবন্দী সময়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনের নানাবিধ ব্যাঘাত ঘটে৷ অর্থনৈতিক,  সামাজিক, শারীরিক নানা প্রতিকূলতার জন্য তৈরি হয়েছে নানা মানসিক জটিলতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা পরিস্থিতিতে তৈরি মানুষের মানসিক অসুস্থতা,  স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও কাটতে সময় লাগবে। এইক্ষেত্রে নিজেদের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে।  

যেভাবে মানসিক ভাবে সুস্থ থাকবেন :

১. বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন- শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার পূর্বশর্ত হলো সঠিক সময়ে বিশ্রাম নেওয়া, কাজের ফাঁকে বা শেষে এবং রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো। সাধারণ মানুষের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য,  জৈবিক সব কার্যকলাপ সঠিক ভাবে চালানোর জন্য প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি। আমাদের মস্তিষ্কে থাকা নানা ধরণের রাসায়নিক পদার্থ আমাদের মেজাজ, স্মৃতি, আবেগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ঘুম এসব কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে বিশাল ভূমিকা পালন করে। যদি পরিপূর্ণ ঘুম না হয়,  তাহলে ব্রেনের অনেক অংশ সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে না। এজন্যই সুন্দর ঘুমের কোনো বিকল্প নাই।

২. উন্নত খাদ্যাভ্যাস-  সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য যে কেবল শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, মানসিক স্বাস্থ্য সুন্দর রাখতেও খাদ্যের ভূমিকা আছে। আয়রন, ভিটামিট-১২ ইত্যাদি নানা খাদ্য উপাদানই মানুষের হরমোনাল  ব্যালেন্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যার উপর আপনার মন মেজাজ ভালো বা খারাপ থাকা নির্ভর করে কিছু অংশে। তাছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বা মাদকদ্রব্য শরীরে নানা ধরণের হরমোনাল ইমব্যালেন্স ঘটাতে ভূমিকা রাখে। অনেকে বিষাদ কাটাতে মাদক দ্রব্যের শরণাপন্ন হয়। এতে করে শরীরের থায়ামিন কমে স্মৃতি বিভ্রম, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এমনি মৃত্যু অবদি ঘটতে পারে। অপুষ্টিকর খাবার বা মাদক দ্রব্য বিষাদ কাটানোর আপাত উপায় মনে হলেও এটি বিষাদ বাড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করতে বিশাল ভূমিকা রাখে।

৩. পরিচ্ছন্নতা ও শরীরচর্চা- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে শরীর ও মনে ভালো প্রভাব পরে। এতে শরীর যেমন ভালো থাকে। মনও স্থির থাকে। নিজেকে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তার স্থান দেয়।  নিজের বাসস্থান, ব্যবহার করা জিনিসপত্র, নিজের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  তাই চেষ্টা করতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকার। পরিপাটি করে ঘর সাজানো, গাছ লাগানো,  বাগান পরিষ্কার ইত্যাদি আমাদের ভালো হরমোনগুলো নিঃসরণের সাহায্য করে। শারীরিক সুস্থতার জন্য আমরা ব্যায়াম করি, তেমন মানসিক সুস্থতার জন্যও এটি কার্যকর। তাছাড়া যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে মনকে স্থির ও সুস্থ রাখার প্র্যাকটিস করা সম্ভব।

৪. ভালো লাগার কাজ করুন- যা করতে ভালো লাগে তা করার মধ্য দিয়ে মন ভালো রাখা একটি সহজ এবং এদিন উপায়। সিনেমা দেখে, গান শুনে/গেয়ে, রান্না করে, ছবি এঁকে নানা ভাবেই নিজের মন ভালো করা যায়। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। পরিবার,  বন্ধুবান্ধব,  আত্মীয় পরিজন সকলের সাথে মিশার,  কথা বলার চেষ্টা করুন। তাদের জীবন সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করুন। এতে একাকীত্ব যেমন কাটে, তেমনি ভালো থাকার অনুশীলন করা যায়। যা করতে ভালো লাগে, তা করার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের মনের ভালো না লাগার কারণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে ভালো থাকার অনুশীলন করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা অন্যের বাধ্যগত হয়ে নিজের খুশিকে দমিয়ে রাখেন, তাদের মধ্যে খিটখিটে মেজাজ ও অসুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। তাই নিজের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

৫. দুশ্চিন্তা দূরে রাখার চেষ্টা- ভবিষ্যৎ নিয়ে কিংবা বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নিয়ে আমরা এত চিন্তিত হয়ে পড়ি যে, জীবনের বাকি সব স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে ফেলি! ভালো মন্দ, সঠিক ভুল ভাবতে ভাবতে অনেক সময় আমরা আসল ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে দূরে চলে যায়৷ আমাদের ভাবনা নেতিবাচক নানা সম্ভাবনাকে ঘিরে নতুন নতুন করে আশংকাজনক ভাবনার জন্ম দেয় যাকে আমরা সাধারণ ভাষায় "দুশ্চিন্তা" বলে থাকি। কিন্তু এতে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতি তো হয়ই বরং আমাদের মন খারাপের প্রভাব আমাদের পারিপার্শ্বিক মানুষজনদের মধ্যেও নানা প্রভাব বিস্তার করে। তাই যথাসম্ভব অনিশ্চিত চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে নিজেদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৬.  পেশাদার সাহায্য- যদি আপনি মানসিক ভাবে খারাপ আছেন বোধ করেন তাহলে সাহায্য নিন। নিজের মধ্যে রাখতে না পারলে নিজের মনের কথা বিশ্বস্ত কাউকে গিয়ে বলুন। হতে পারে পরিবারের কেউ কিংবা বন্ধু। নিজের মধ্যে চেপে রাখার মধ্যে যেমন কোনো কৃতিত্ব নেই তেমনি তা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। জরুরি মনে হলে কাউন্সিলিং কিংবা মনোবিদের পরামর্শ নিতে পারেন। এতে যেমন মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হবে তেমন ভালো থাকাটাও।

দেশে প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার হার বেড়েই চলেছে। এই হার খুব একটা কম না। তাই, নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থতা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি, যত্ন নিন আপনার ভালোবাসার, কাছের মানুষদেরও। ব্যস্ততা শেষে তাদের কথা শুনুন, ভালোবাসুন, তাদের টিকে থাকা কতটা সুন্দর তা প্রশংসা করুন। নিজের কাজ, জীবন, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি গুরুত্ব দিন প্রয়োজনীয়  সম্পর্ক এবং মানুষদের যত্নে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭