ইনসাইড পলিটিক্স

নোয়াখালী আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কোন দিকে?


প্রকাশ: 15/03/2022


Thumbnail

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু এখন নোয়াখালী আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলসহ নেতাদের বিভিন্ন মেরুকরণ। দলের নেতারা একে অপরকে আক্রমণ করে বাক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। কোন্দল দেখা দিয়েছে জেলা পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তার ছোটভাই  বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নোয়াখালী-৪ আসনের সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর করা এক ভিডিও বার্তা জেলা আওয়ামী লীগের চলমান দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

গত বৃহস্পতিবার একরামুল করিম চৌধুরী ফেসবুক লাইভে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ঘৃণিত লোক বলে সম্বোধন করেছেন। ফেসবুকে ইতোমধ্যে ভিডিওটি ভাইরাল এবং ওই মন্তব্যের পর ওবায়দুল কাদের ও  একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা পক্ষে-বিপক্ষে সভা-সমাবেশ করছেন। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিরোধ জেলা আওয়ামী লীগের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনের টানা তিন মেয়াদের সাংসদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘ ১৭ বছর দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর পদ হারান তিনি। ওই দিন কেন্দ্র থেকে জেলা আওয়ামী লীগের ৮৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। যেখানে একরামুলকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে একরামুল মন্তব্য করেন, ‘ওবায়দুল কাদের নোয়াখালীর সবচেয়ে ঘৃণিত লোক এবং তিনি আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি করে যাচ্ছেন।’ একরামুলের এই মন্তব্যের পর ইতোমধ্যে তাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে নোয়াখালীতে। তবে এখানেও ছিল অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলসহ নেতাদের বিভিন্ন মেরুকরণের নমুনা। ওই মানববন্ধনে জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। যদিও ওই সময় তারা দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। সক্রিয় দু’টি পক্ষের মধ্যে একটির নেতৃত্বে রয়েছেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এ দু’টি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে এবং পক্ষ-বিপক্ষে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসব সংঘর্ষে কোম্পানীগঞ্জে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও একজন শ্রমিক লীগ নেতা নিহত হন। এ ছাড়া কাদের মির্জার অনুসারীদের হামলার শিকার হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ অনেকে। সভা-সমাবেশ ও ফেসবুক লাইভে কাদের মির্জার ধারাবাহিক বক্তৃতার একপর্যায়ে সাংসদ একরামুল ওবায়দুল কাদেরকে ‘রাজাকার পরিবারের সন্তান’ বলে মন্তব্য করেন। তবে একরামুল করিম চৌধুরী দীর্ঘদিনের রাগ–ক্ষোভ থেকেই এমনসব মন্তব্য করেছেন বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা। থেকে থেকে এসব বিরোধের জেরে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই নেতার দ্বন্দ্বের বলি আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও কর্মসূচি নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে। খুব শিগগির এর অবসান করা না হলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ব্যপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭