জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী বলে দাবি করে তাদের মধ্যে আত্মত্যাগ করার শিক্ষা থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বা কারাগারের রোজনামচা পড়লে যে শিক্ষা দেখা যায়, সেই আত্মত্যাগ, অর্থাৎ নিজের স্বার্থ না দেখে কেবল মানুষের কল্যাণ কামনা করা। আমি মনে করি এটা এখন অনেকটাই কমে গেছে। কেবলমাত্র একেবারে জনগণের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করা লোকের সংখ্যা কমে গেছে। বরং ব্যবসা-বাণিজ্য, নিজের সুযোগ-সুবিধা, এগুলোকে তাদের এজেন্ডার বাহিরে রাখে এমন রাজনীতিবিদদের সংখ্যা কম।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত নেতৃত্ব, জাতির পিতার আদর্শ, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বসহ ইত্যাদি নানা বিষয়ে জাতির পিতার ‘১০২ তম জন্মবার্ষিকী’তে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, রাজনীতিবিদের যে সকল গুণাবলী থাকা দরকার যেমন লক্ষ নির্দিষ্ট করা, সেই লক্ষের দিকে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাওয়া এবং তাঁর অনুসারী যারা আছে তাদেরকে সেই লক্ষের দিকে যাওয়ার জন্য সাহায্য করা। এগুলো হলো নেতৃত্বের মূল কাজ। কিন্তু সমস্যা হলো যে, এই মূল জায়গাটা যেটাকে আমরা নেতৃত্বের গুণাবলী বলি সেগুলোর তো স্বল্পতা আছেই।
তিনি আরও বলেন, খুব কম নেতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর মতো লক্ষে অবিচল থাকা, দৃঢ় থাকা এবং সেই লক্ষে লড়ে যাওয়া -এগুলো আজকাল খুব কম দেখা যায়। মানবিক যে সকল গুণাবলী থাকা দরকার যেমন মানুষের দুঃখে দুখী হওয়া, দরদ দিয়ে মানুষকে বুঝা এবং মানুষের যে সঙ্কট অবস্থা আছে, সেখান থেকে উত্তরণের জন্য মানুষকে সাহায্য করা। সেগুলো আমি অন্তত জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দেখি। মানবিক গুণাবলীর সাথে সাথে নিঃস্বার্থ হওয়া, নিজের সুবিধা না দেখে রাষ্ট্রের বা জনগণের কল্যাণ দেখা। সেই যে আত্মত্যাগ, এটা কিন্তু অনেক কম আমাদের আজকের রাজনীতিবিদদের মধ্যে।
বঙ্গবন্ধুর মতো নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে কিনা এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা পাওয়া যাবে কিনা এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলনে, এর জন্য আমাদের অনেক অপেক্ষা করতে হয়। ইতিহাসে কতগুলো টার্নিং পয়েন্ট আছে। যেমন- স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধিকার আন্দোলন -এগুলো তো আমাদের এখন আর লাগবে না। এগুলো এক ধরণের নেতৃত্ব তৈরি করে। আমাদের জন্য যেটা দরকার এখন, একজন বিচক্ষণ এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা, যে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। সাম্যের বাংলাদেশ, মানবিক বাংলাদেশ, মিলেমিশে বাংলাদেশ, সবার বাংলাদেশ। আমারা কয়েকজন মিলে রাজনীতি করলাম, নিজেরা সুযোগ-সুবিধা কিছু নিয়ে বড়লোক হলাম, কিছু লোককে বড়লোক হওয়ার সুযোগ করে দিলাম। এটা তো রাজনীতিবিদদের এজেন্ডা হয়, তাহলে মনে করতে হবে বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ তাঁর থেকে আমরা সরে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, তাই আমি মনে করি, রাজনীতি মেধা, দেশপ্রেম ও মানুষের জন্য ভালোবাসা, এই জিনিসগুলো যদি আমরা সংযুক্ত করতে না পারি তাহলে আমাদের যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে, সেটা আমরা টেকসই করতে পারবো না। এজন্য আমাদের মেধাবী, প্রজ্ঞাবান, দেশপ্রেম এবং অন্যের জন্য কাজ করার মানসিকতাসম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম তৈরি করতে হবে, সেক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার কারিকুলাম, লেখাপড়াও পরিবর্তন করার দরকার আছে, যেন মানুষ নিঃস্বার্থভাবে অন্যের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পায়।