ইনসাইড পলিটিক্স

জিয়াকে নিয়ে গান লিখে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ!


প্রকাশ: 17/03/2022


Thumbnail

এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন আমির হামজা। এই নামটি স্বাধীনতা পুরস্কারের সময় ঘোষিত হওয়ার সাথে সাথে সুধীজনের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সাহিত্যাঙ্গনে প্রায় অপরিচিত একটি ব্যক্তি এরকম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার কিভাবে পেলেন, কি তার যোগ্যতা ইত্যাদি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়। বাংলা ইনসাইডারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হয়। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে যে, আমির হামজা আসলে প্রতিষ্ঠিত কোনো সাহিত্যিক নন। তার কোনো উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাহিত্যকর্মও নেই। কি বিবেচনায় তিনি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তা এক রহস্যময় প্রশ্ন বটে। বরং আমির হামজা সম্বন্ধে খোঁজ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার পেয়েছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। সবচেয়ে বড় তথ্য যে, আমির হামজা মাগুরা এলাকায় বিএনপি'র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিএনপি'র সমর্থক হিসেবে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একাধিক গান গেয়েছেন। 

আমির হামজা আসলে মাগুরা অঞ্চলের একজন স্বভাব কবি মতো। তার একটি বড় যোগ্যতা ছিল, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে গান বানাতে পারতেন। কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মোস্তাফিজুর রহমানের আমন্ত্রণে জিয়াউর রহমান মাগুরা গেলে আমির হামজা তাৎক্ষণিকভাবে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অনেকগুলো গান গেয়ে শোনান এবং এতে জিয়াউর রহমান অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আমির হামজা সম্বন্ধে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে যে, তিনি একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ১৯৭৮ সালে শাহাদাত হোসেন ফকির হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে তাকে অভিযুক্ত করা হয় এবং এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। নিম্ন আদালতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে তখন বেগম খালেদা জিয়া আমির হামজার সম্বন্ধে খোঁজ নেন এবং মাগুরার বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে তার গানের কথা বললে বেগম খালেদা জিয়া সাধারণ ক্ষমার আওতায় তাকে মুক্তি দেন। নয় বছর জেল খাটার পর আমির হামজা কারাগার থেকে মুক্ত হন। তারপর বিএনপি'র সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল।

২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে আমির হামজা মারা যান। প্রশ্ন উঠেছে যে, এরকম একজন ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পদক, তাও আবার সাহিত্যে কিভাবে দেওয়া হলো? গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে স্বাধীনতা পদক নিয়ে নানারকম বিভ্রান্তি হচ্ছেন। বিতর্কিত ব্যক্তিদেরকে স্বাধীনতা পদক দেয়া হচ্ছে। এর আগে শাইখ সিরাজকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছিল। তারপর সেটি বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে আবার দেওয়া হয়। স্বাধীনতা পদকের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার স্বীকৃতি বা তাকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধা হতে হবে। কিন্তু শাইখ সিরাজ এরকম কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গেই জড়িত না থাকার পরও তিনি ওই পুরস্কার পেয়েছিলেন। গত বছরও সাহিত্যে যাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তীতে সেই পুরস্কারটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এবার আমির হামজা কোন যোগ্যতায়, কিভাবে এই পুরস্কার পেলেন তা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

একজন খুনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি যিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন, মাগুরায় বিএনপির প্রভাবশালী মন্ত্রীদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল, সেরকম একটি ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়া হয় কিভাবে সেই প্রশ্ন নিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। একজন ব্যক্তি যদি যোগ্য হন, তাহলে তিনি এই পুরস্কার পেতে পারেন। কিন্তু অযোগ্য ব্যক্তি যখন কোনো রকম কারণ ছাড়াই এরকম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্পর্শকাতর পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হন তখন ঐ কমিটির যোগ্যতা, বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বারবার স্বাধীনতা পুরস্কারকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করা হচ্ছে। এর ফলে এমন একটা পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এখন সত্যি সত্যিই যারা পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য তারাও এই পুরস্কার নিতে কুন্ঠা বোধ করছেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭