আজ ঘুম দিবস। ঘুম প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ঠিকমতো ঘুম না হলে দেখা যায় কোনো কাজেই স্বাভাবিকভাবে মনোযোগ বসানো যায় না। মূলত প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় শুক্রবারে দিবসটি পালন করে ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিনের ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে কমিটি এবং এর মূল উদ্দেশ্য হলো ঘুমের অভাবে হওয়া শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়টি মানুষকে অবহিত করা।
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে একজন মানুষ ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন যার কারণে একটি সুন্দর জীবনও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
"বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখন ঘুমের মহামারি চলছে। এর কারণ হিসেবে তারা আয় নিয়ে উদ্বেগ, ব্লু লাইট এফেক্ট (বাচ্চাদের মোবাইল বা ডিভাইস ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া), পারিবারিক সহিংসতা ও কাজের ক্ষেত্রে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া, মদ্যপান ও ধূমপান বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোর কথা বলছেন।
সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত ঘুমের বিকল্প নেই। কারণ সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে ঘুম। তাই প্রতি রাতে ৬ ঘন্টা অন্তত ঘুমাতে হবে। তবে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা রয়েছে। ঘুমের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কারণ ঘুম আসে না। অনেকেই ঘুমানোর জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। ঘুমের ওষুধের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা কম হলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ঘুম না হলে শরীরের ‘লিভিং অরগানিজমগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। নষ্ট হতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য। বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপ ও হাইপার টেনশন। ঘুম কম হলে হার্টের সমস্যা হতে পারে। ঘুমের সময় হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালি বিশ্রাম পায়। তাই ঘুম কম হলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা বাড়তে থাকে। ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে। পর্যাপ্ত না হলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন রাতে না ঘুমানো বা কম ঘুমানোর ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। শরীরের ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পন্থা। তাই ঘুম কম হলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়। আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’ (Living organisms)। কিন্তু আমরা না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ক্রমশ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের একটি নিউরোট্রান্সমিটার আছে, যা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ওরেক্সিন উৎপাদনের গতি মন্থর হয়ে যায়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাড়তে পারে হজমের সমস্যা। না ঘুমালে শরীরের পাচন ক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসগুলো উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসরণে বাধা পায়।
তাই ঘুম আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দৈহিক প্রায় সব কার্যকলাপই ঘুমের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই কোনও রকম অবহেলা না করে নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। আর ঘুমের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের।
তবে ঘুম নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কোন গবেষণা হয়নি তাই দেশের কি পরিমাণ মানুষ অনিদ্রায় ভুগেন এবং তার কারণ কি সে সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে ঘুমের সমস্যার একটি বড় কারণ হলো যথাযথ 'ঘুমের সংস্কৃতি ' না থাকা অর্থাৎ সময় মতো রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাবার বহুল প্রচলিত অভ্যাস না থাকা। "এখানে বেশির ভাগ মানুষেরই রাতের খাবার খাওয়া ও ঘুমাতে যাবার সময় মেনে চলার অভ্যাস নেই। এটিও ঘুমের সমস্যা তৈরি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ" হিসেবে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই সুস্থ থাকতে হলে পরিমিত ঘুমের বিকল্প নেই।