ইনসাইড পলিটিক্স

তারেকের লাগাম টেনে ধরবেন খালেদা?


প্রকাশ: 18/03/2022


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম মেয়াদে আবার ছয় মাসের জামিন পেয়েছেন। তবে অন্যান্য বার তিনি যেভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন, এবার তেমনটি হবে না বলেই মনে করছেন বিএনপির নেতারা। তারা মনে করছেন, বেগম জিয়া ঘরোয়াভাবে হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন পরামর্শ দেবেন। বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতার কথা শোনা যাচ্ছে। সরকারও চাইছেন বেগম খালেদা জিয়া আস্তে আস্তে রাজনীতির মাঠে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখা শুরু করুক এবং সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আস্তে আস্তে সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি বিএনপির নেতারাও ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। বিএনপি নেতারাই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, তারা এখন আসলে অভিভাবকহীন। বেগম খালেদা জিয়া যদি রাজনৈতিক বিষয়ে খোঁজ-খবরও রাখেন, তিনি যদি ছোটখাটো ঘরোয়া পরামর্শও দেন তাহলে দল গোছানো অনেক সহজ হবে। বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে বিএনপি নেতাদের মূল প্রত্যাশা হলো তারেক জিয়ার লাগাম টেনে ধরা। তারেক জিয়ার স্বেচ্ছাচারিতা বিএনপিতে এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে কোনো সিনিয়র নেতাই নিজেদের মানসম্মান রক্ষা করে চলতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, প্রতিদিন তারা আতঙ্ক থাকছেন আজকে কে অপমানিত হবেন। তারেক জিয়া প্রতিদিনই দুপুর দুটোর পর থেকে বিভিন্ন নেতাকে ফোন করা শুরু করেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন ইস্যুতে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এটিই এখন বিএনপির জন্য নিয়মে পরিণত হয়েছে।

তারেক জিয়ার রুটিন বিশ্লেষণ করে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, তিনি তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন, বিভিন্ন ছাত্রদলের নেতাদের সাথে কথা বলেন, যুবদলের নেতাদের সাথে কথা বলেন। এরপর তাদের কাছ থেকে সত্য-মিথ্যা যে সমস্ত তথ্যগুলো পান তা যাচাই-বাছাই না করে একটা সিদ্ধান্ত নেন এবং এই সিদ্ধান্তের আলোকে তিনি বিভিন্ন নেতৃবৃন্দকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন। এটি অগ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী বলে বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন। বিএনপির একজন নেতা বলছেন যে, আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তাও একটা কদর ছিল। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে হত। যদিও সিদ্ধান্তগুলো নিতেন বেগম খালেদা জিয়া। তারপরও একটি সাংগঠনিক আবরণ দেওয়ার চেষ্টা ছিল। কিন্তু এখন এসবের তোয়াক্কা করা হয় না। বিএনপিতে একের পর এক যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তা গঠনতন্ত্রবিরোধী এবং স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা বলেছেন যে, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেকোনো বহিষ্কার স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে করতে হবে কিন্তু এখন তারেক জিয়া যেভাবে চাইছেন সেভাবে হচ্ছে। দলের বিভিন্ন কমিটি বা নেতৃবৃন্দের কোনো কার্যক্রম নেই। তাদের একমাত্র কার্যক্রম হলো তারেক জিয়ার কথা অনুযায়ী কাজ করা। এভাবে একটি রাজনৈতিক দল চলতে পারেনা বলেই বিএনপি নেতারা মনে করেন। আর এজন্যই তারা বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে কিছুটা সক্রিয় করতে চাচ্ছেন। আর এ কারণেই সরকারের অভিপ্রায় এবং বিএনপির ইচ্ছা যেন এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে।

সরকার মনে করছে যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনার ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। বিশেষ করে তিনি যেহেতু নির্বাচন করতে পারবেন না, কাজেই তিনি যদি দলের নেতৃত্বকে নির্বাচনমুখী করেন বা নিজেকে জেলের বাইরে রাখার জন্য দলকে নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশ দেন তাহলে সেই নির্দেশ কেউ অমান্য করতে পারবে না। ফলে বিএনপির একটি বড় অংশই শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের মত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর অন্যদিকে বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, বেগম জিয়া যদি কিছুটা সক্রিয় থাকে তাহলে তারেকের এই স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে, তারেক যা খুশি তাই করতে পারবে না। ফলে তারেক জিয়ার যে লাগাম সেটি বেগম খালেদা জিয়াই একমাত্র টেনে ধরতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আর এ কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে যখন বেগম খালেদা জিয়া দুই একজন বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছেন, সাংগঠনিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তা বিএনপিকে ব্যাপকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বেগম জিয়া যদি আরো দৃশ্যমান হন তাহলে সরকার হয়তো খুব একটা আপত্তি করবে না এ ব্যাপারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭