বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপে বসেছে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বলেছেন, যুদ্ধসহ যেকোনো সংকট মোকাবেলায় ঢাকার পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশ কার সাথে যুদ্ধ করবে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য লাগবে। আর ৭১ সালে আমরা যখন যুদ্ধে ছিলাম, তখন যুক্তরাষ্ট্র কোথায় ছিল? তখন তো আমাদের পাশে থাকেনি। বরং শত্রু পক্ষকে সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ, র্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক আবদুল মান্নান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।
অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আমরা যুদ্ধে বিশ্বাস করি না, শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ। আমাদের সেইভাবে সহায়তা করলেই আমরা খুশি। গত ৫০ বছরে কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের যে সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে বজায় রাখতে হবে। পেছনের দিকে ফিরে না তাকিয়ে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হউক, সেটাই চাই।
র্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইস্যুতে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, এ সংলাপের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র্যাবের উপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। কেননা, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে। এ ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সকল দেশেরই বাংলাদেশকে নিয়ে আগ্রহ আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিও একটি আগ্রহের বিষয়। গতকাল প্রকাশিত হাঙ্গার ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার থেকে ভালো। এই হিসাব কিন্তু আমরা করি নাই। এটি জাতিসংঘ করে, বিশ্ব ব্যাংক করে, আইএমএফসহ যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক-গুলো করে। বর্তমান বাংলাদেশ আর ৫০ বছর আগের বাংলাদেশ তো এক না। তবে বঙ্গবন্ধু বলে গেছে, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। আমরা এটিই মানি।
মানবাধিকার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন কিছু করে নাই, যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করার কে? তাদের নিজের দেশেই তো অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে। আমার বলার উদ্দেশ্য এটি নয় যে, আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন চাই কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চাই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের দিকে তাকানো উচিত।