ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

প্রধানমন্ত্রীত্ব হারাচ্ছেন ইমরান খান?


প্রকাশ: 21/03/2022


Thumbnail

এক তীব্র রাজনৈতিক ঝড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। বিরোধীদল গুলোর রাস্তায় কঠোর আন্দোলন এবং দ্বিতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সব কিছু মিলিয়ে যেনো এক দোদুল্যমান শঙ্কায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন। পাকিস্তানের ইতিহাস বলে, কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার পূর্ণ মেয়াদ কখনোই পূরণ করতে পারেনি এবং এবারের অবস্থা অনেকটা সেই দিকেই মোড় নিতে চলেছে। 

যাকে ঘিরে পাকিস্তানে এই রাজনৈতিক সংকট তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের একমাত্র ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের রূপকার তিনি। ক্রিকেট মাঠ ছাড়লেও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি কখনই। আর তাই তো সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে ১৯৯৬ সালে নিজ হাতে গড়া নতুন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নিয়ে আস্তে আস্তে একটা দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর গদিটি ঠিকই দখল করতে সক্ষম হন ইমরান খান। মানুষের আশা ছিলো হয়তো ৯২- এর সেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের মত দেশের অর্থনীতি এবং রাজনীতির একটা পরিবর্তন আসবে ইমরান খানের হাত ধরে। তবে দিন যতই গড়িয়েছে সেই পুরনো রাজনৈতিক চেতনাও যেনো ভর করেছে ইমরান খানের ওপর।

দল ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথে বিপক্ষ রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের ওপর ধর পাকড় ছাড়াও মামলা এবং রাজনৈতিক নিগ্রহের নাম উঠে ইমরানের বিরুদ্ধে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলা ইমরান খানের খুব কাছের মানুষদের বিরুদ্ধেই উঠতে শুরু করে বিশাল অংকের বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ। আর এতেই যেনো তার বিরুদ্ধে আগুনটা লাগে আরো তীব্র করে। 

এতদিন যেখানে বিরোধীদলগুলোই শুধু তার বিরুদ্ধে কথা বলতো সেখানে এখন নিজ দলের ভিতর থেকেই ইমরান খানকে সরে যাওয়ার আবেদন উঠতে শুরু করেছে যা তাকে তীব্রভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির ভেতর ফেলেছে। ইমরান খান আরো বিপাকে পড়ে যান যখন নিজ দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাজিব হারুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পদত্যাগই দেশের চলমান সংকট অবসানের একমাত্র উপায়। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং দলের অন্য কোনো সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সামনে আনা উচিত। ‘এটাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার এবং চলমান সংকট অবসানের একমাত্র উপায়’, বলেন তিনি।

দলের প্রতিষ্ঠাতা এই সদস্য আরো বলেন, ‘দেশ আর অস্থিতিশীলতা জিইয়ে রাখতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অবশ্যই একগুঁয়েমি ত্যাগ করতে হবে এবং দলের ভেতর থেকে অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আনতে হবে।’

এই ঘটনার পর ইমরান খানের পিঠ যেনো আরো দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা। তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো লোকের সংখ্যাও যেনো দিন দিন আরো কমে যাচ্ছে দেশটিতে। এখনত নিজ দল থেকেই পদত্যাগ করার মতো কথা সরাসরি সামনে বেরিয়ে আসছে।  

অন্যদিকে পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের দিন আরো ঘনিয়ে আসছে। এটি হতে যাচ্ছে ইমরান খানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অনাস্থা প্রস্তাব। গত বছর মার্চে বিরোধীদের দাবিতে প্রথমবারের মতো আস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইমরান খান, তবে সেবার খুবই অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। প্রথম আস্থা ভোটের এক বছর না গড়াতেই গত ৮ মার্চ পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি এবং আলোচনার জন্য পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে লিখিত আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ থেকে ৩০ মার্চের মধ্যে জাতীয় পরিষদে হতে পারে এই অনাস্থা ভোট। 

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, ৩৪২ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাব পাসের জন্য ১৭২ ভোট প্রয়োজন। কিন্তু সংসদের নিম্নকক্ষে পিটিআইয়ের আসন রয়েছে মাত্র ১৫৫টি। 

অনাস্থা ভোটে পাস করতে এমনিতেই নিজ দলের আসন সংখ্যাই যেখানে কম সেখানে দলটির জাতীয় পরিষদের বেশ কয়েকজন অসন্তুষ্ট সদস্য বলেছেন, তারা ক্ষমতাসীন দলের সাথে আর থাকবেন না এবং আগামী নির্বাচনে পিটিআইয়ের টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবেন না। এসব ছাড়াও পিটিআইয়ের একজন এমপি দাবি করেছেন, ইতোমধ্যে তিনজন ফেডারেল মন্ত্রী পিটিআই থেকে পদত্যাগও করেছেন।

নিজ ঘরে আগুন লাগার সাথে সাথে আগুন লেগেছে শরিক দলগুলোতেও। পিটিআইয়ের সাথে শরিক অন্য ৪ দলের মাঝে ৩টি দলই এবার মন্ত্রীসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর তার মানে দাঁড়াচ্ছে ইমরান খানের সামনে এখন একরাশ হতাশাই শুধু সঙ্গী। যদিও মন্ত্রীসভা ছাড়ার ঘোষণা দিলেও দল তিনটি এখনও জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। 

বিরোধীদল গুলোর লাগাতার আন্দোলন, দুর্নীতির অভিযোগ, স্বজন প্রীতিসহ পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে জরুরি অর্থনীতির কোনো প্রকার সার্বিক উন্নয়নে ইমরান খানের সরকার গত চার বছরে তেমন কোনো পরিবর্তনই ঘটাতে সক্ষম হয়নি। যে আশা ভরসা নিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের জনগণ ইমরানকে দেশের ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন সে ভরসার জায়গা এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। তার উপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অনেকটা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের মতো করে সবাইকে নাকে দড়ি বেঁধে ঘোরানো যেনো ইমরান খানের জন্য এক কাল রাতে রূপ নিয়েছে। আর এই সব কিছুর শেষ রূপ নিতে যাচ্ছে আসন্ন আস্থা ভোটে। এই ভোটেই নির্ধারণ হয়ে যাবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীতে রূপ নিচ্ছেন কি নিচ্ছেন না। পাকিস্তানের ইতিহাসও বলছে কোনো প্রধানমন্ত্রীই এখন পর্যন্ত পারেনি তার পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করতে। ইমরান খানের ক্ষেত্রেও সেই সত্যিই যেনো আবারো কঠিন সত্যি হিসেবে সামনে আসতে চলেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭