ইনসাইড থট

পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ভূগর্ভস্থ পানির গুরুত্ব


প্রকাশ: 22/03/2022


Thumbnail

আজ বিশ্ব পানি দিবস, যা এই বছর ভূগর্ভস্থ পানির জন্য নিবেদিত। ভূগর্ভস্থ পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, দৃষ্টির বাইরে, কিন্তু প্রায় সর্বত্র আমাদের পায়ের নিচে। এটি বিশ্বব্যাপী খাওয়ার পানির প্রায় অর্ধেক, সেচযুক্ত কৃষির প্রায় শতকরা চল্লিশ ভাগ এবং শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তিন ভাগের এক ভাগ পানি সরবরাহ করে। এটি বাস্তুতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখে, নদীর ভিত্তিপ্রবাহ বজায় রাখে এবং ভূমির ডেবে যাওয়া ও সমুদ্রের পানির অনুপ্রবেশ রোধ করে। আমাদের খাদ্য সরবরাহ, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং স্যানিটেশন সবকিছু নির্ভর করে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি: অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা (Groundwater t Making Invisible Visible)। 
 
ভূগর্ভস্থ পানি জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং প্রায়শই নিরাপদ পানির সুযোগবিহীন লোকদের জন্য এটি একটি সমাধান। এতসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পরিসংখ্যান সত্ত্বেও, অদৃশ্য ভূগর্ভস্থ পানি বেশিরভাগ মানুষের দৃষ্টি এবং চিন্তা-চেতনার বাইরে রয়েছে। পানির ঘাটতি বৃদ্ধি এবং মানুষের কর্মকান্ড (জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিসহ) এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূপৃষ্ঠের পানির প্রাপ্যতা হ্রাসের সাথে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা ও চাপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেক অংশে গুরুতর অবক্ষয় এবং দূষণ সমস্যা দেখা দিয়েছে। অদৃশ্য ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদের উপর আলোকপাত করা, জ্ঞান বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

নিরাপদ পানির উৎস হচ্ছে ভূ-উপরিস্থ মিঠা পানি এবং ভূগর্ভস্থ পানি। নদীমাতৃক এদেশে রয়েছে অসংখ্য নদী, খাল, বিল, হাওর, জলাশয়। এদেশের ভূমি গঠন থেকে সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষি, যোগাযোগ-সব কিছুই প্রধানত নদীনির্ভর। নদী হচ্ছে আমাদের দেশের প্রাণ। নদীর সঙ্গেই আবর্তিত এই ভূখন্ডের সভ্যতার ইতিহাস। নদীর তীরে তীরে মানুষের বসতি, কৃষির পত্তন, গ্রাম, নগর, বন্দর, সম্পদ, সম্মৃদ্ধি, শিল্প-সাহিত্য, ধর্ম-কর্ম সব কিছুর বিকাশ। বাংলাদেশের নদ-নদীর সংখ্যা অগনিত হলেও কোনটাই বিচ্ছিন্ন নয়। একে অন্যের সাথে প্রাকৃতিক নিয়মে সুশৃঙ্খলভাবে সংযোজিত। 

পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা এবং খাবার পানি সরবরাহ, নৌ চলাচল, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশে রয়েছে ছোট বড় ৪০৫টি নদী। এর মধ্যে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৭টি। ৫৪টি ভারতের এবং ৩টি মিয়ানমারের সাথে সংশ্লিষ্ট। দেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমী নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের নদীসমূহ শুস্ক বালুচরে পরিণত হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। দখল, ভরাট, আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন এবং দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য এবং জীববৈচিত্র শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকা মারাত্বক হুমকির সম্মুখীন। দেশের নদীগুলোর প্রায় প্রতিটিরই একই দশা। তিস্তার পানি প্রবাহ ব্যাপকহারে কমে গেছে। পদ্মা, তিস্তা এখন মৃতপ্রায়, যমুনায় পড়েছে চর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতক্ষ্যা ও কর্ণফুলী দখল, ভরাট ও দূষণের ভারে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। 

বছরে ১.২- ২.৪ বিলিয়ন টন পলি নদীবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। পলি পড়ে নদীগুলোর তলদেশ ক্রমন্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও নদীগুলো দখল, ভরাট ও দূষণের শিকার। ফলে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে, নৌ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে এবং নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ভাটির দেশ হিসাবে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় আমাদের দেশে পানি সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে এবং খাবার পানি, নৌ চলাচল, সেচ ব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য হুমকীর মুখে পড়ছে। উত্তরাঞ্চলের নদীসমূহ শুস্ক বালুচরে পরিণত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে ভারতের একতরফা পদ্মার পানি প্রত্যাহারের ফলে বরেন্দ্র এলাকায় মরুকরণ প্রক্রিয়া তরান্বিত হচ্ছে। নদীতে পানি কমে যাওয়া বা না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি নির্বিচারে উত্তোলন এবং শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদী, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির ¯তর প্রতিনিয়ত নিচে নেমে যাচ্ছে। খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের ফলে ভূ’উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানি সংকট তীব্রতর হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। 

সীমিত আয়তনের জনবহুল এদেশে ব্যাপক জনগোষ্টির খাদ্য সংকুলান করতে সীমিত আবাদী জমির উপর চাপ বাড়ছে। জমির অতিকর্ষণে ভূমি ক্ষয় হচ্ছে। টপসয়েলের আস্তরণ কমে যাচ্ছে। একই জমি বারবার চাষ করার ফলে মাটির গুণগতমানের নেতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে এবং অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশী ফলনের জন্য উচ্চ ফলনশীল শস্যবীজ রোপন করা হচ্ছে যাতে প্রচুর সার, কীটনাশক ও সেচের প্রয়োজন। শুষ্ক মৌসুমে ইরি চাষের জন্য প্রচুর সেচের প্রয়োজন হয়। এতে ১২০০ থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। সেচের পানি ভূগর্ভস্থ ও ভূউপরিস্থ দুই উৎস থেকেই আসে। শিল্প বর্জ্য ও পৌরবর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় বিভিন্ন পানি প্রবাহে ফেলার ফলে এবং জমি ধৌত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অন্য জমিতে ও পানিপ্রবাহে গিয়ে পড়ছে। ফলে মাটি ও পানি দূষিত হয়ে জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, মাছের খাদ্য নষ্ট হচ্ছে এবং মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে। 

উজানে বাঁধ নির্মাণসহ পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত পলি সাগরে যেতে বাধাগ্রস্থ হয়ে নদীর তলদেশে জমা হচ্ছে। এছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে রাস্তাঘাট ও সেতু। যমুনা, মেঘনা-গোমতি, কর্ণফুলি নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে উজানে চর পড়ছে, ভাটিতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। পদ্মা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুও একই ধরনের প্রভাব ফেলবে। মেঘনা নদীর ওপর শরীয়তপুর-চাঁদপুর এবং গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ২৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দেশের বড় বড় নদীতে পিলার বিশিষ্ট সেতু নির্মাণ করা হলে তা শুধুমাত্র নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্থ ও হ্রাস এবং চর পড়াকে তরান্বিত করবে না। তা জীববৈচিত্র্যকেও হুমকীর মুখে ফেলবে। দেশের নদীগুলো প্রচুর পরিমানে পলি বহন করায় এসব নদীতে পিলারসমৃদ্ধ ব্রীজের স্থলে ঝুলন্ত ব্রীজ বা টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নদী নব্যতা হারিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে আর যেটুকু বাকি আছে তাও বন্ধ হওয়ার পথে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা চারদিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত। প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ এধরনের শহর পৃথিবীতে বিরল। দূষণ, দখল, ভরাটের ফলে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো আজ মৃত প্রায় এবং এগুলোর অস্তিত্ব হুমকীর সম্মুখীন। অন্য দিকে এ শহরের প্রায় ৭০% নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে ভরাট করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে পাল্লা দিয়ে চলছে ভরাট কার্যক্রম। ভরাটের এ গতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ শতভাগ নিম্নাঞ্চল হারিয়ে যাবে।

নদীমাতৃক এদেশে খাবার পানি সরবরাহ, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে ভূ’উপরিস্থ পানি ব্যবহার করাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর এর তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়া এবং দখল-ভরাটে সংকুচিত হয়ে পানি ধারন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে ও শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও অপরিশোধিত শিল্প, পয়ঃ, কঠিন ও নৌযানের বর্জ্য দ্বারা নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর এর পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনপুযোগী হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে খাবার পানি সরবরাহ, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে ভূগর্ভস্থ পানিই একমাত্র অবলম্বন। ভূগর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় উত্তোলনের ফলে পানির স্তর উদ্বেগজনক হারে নেমে যাচ্ছে। যা অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনবে।

ঢাকা ওয়াসার তথ্য মতে দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ২৬০ কোটি লিটার। ঢাকা মহানগরীতে মৌসুমভেদে চাহিদা ২১০ থেকে ২৪৫ কোটি লিটার। বর্তমানে ৬৬ ভাগ ভূগর্ভস্থ আর ৩৪ ভাগ ভূউপরিস্থ উৎস থেকে পানি আসছে। ২০২৪ সালে চাহিদার ৩০ ভাগ ভূগর্ভস্থ আর ৭০ ভাগ ভূ’উপরিস্থ উৎস থেকে আসবে। ওয়াসার পানি ৯০ শতাংশ পানের উপযুক্ত। 

ওয়াসার তথ্যের সাথে মাঠপর্যায়ে বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই। ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ২৬০ কোটি লিটারের মধ্যে ৪৫ কোটি লিটার যশলদিয়া পানি শোধনাগার এবং ১৫ কোটি লিটার সাভারের ভাকুর্তায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন থেকে। কিন্তু যশলদিয়া থেকে মাত্র ১৫-১৮ কোটি লিটার এবং ভাকুর্তা থেকে মাত্র ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সক্ষমতার চেয়ে ৪০ কোটি লিটার কম উৎপাদন করা হচ্ছে। যার প্রতিফলন দেখা যচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় পানি অভাবে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ। যশলদিয়া থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হলে অনেকগুলো গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করার কথা। যশলদিয়া থেকে পর্যাপ্ত ভূউপরিস্থ পানি প্রাপ্তির ফলে কোনো গভীর নলকূপ থেকেই পানি উত্তোলন বন্ধ করা হয়নি। 

দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকাতেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভীতিকর গতিতে নেমে যাচ্ছে। পানির স্তর প্রতি বছর ১০ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে ১৯৭০ সালে ৪৯টি গভীরনলকূপ ছিল। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষিত পানি ব্যবহারের অনপুযোগী হওয়ায় ওয়াসা সুপেয় পানির চাহিদার শতকরা ৭৮ ভাগ ৯০০টিরও বেশি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৪০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে ২৫০০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নদীর পানি দূষিত হওয়ার অজুহাতে ওয়াসা একের পর এক গভীর নলকূপ বসিয়ে যাচ্ছে। অথচ নদীগুলো দূষণের জন্য ওয়াসা সরাসরি দায়ী। পয়ঃবর্জ্য পরিশোধেনের দায়িত্ব ওয়াসার। নদীর পানি দূষণরোধে ২০০৯ সাল থেকে ১৩ বছরের অধিক সময়ে ওয়াসা একটিও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। 

আগে একটি গভীর নলকূপ থেকে ১০-১২ বছর পানি উত্তোলন সম্ভব হতো। এখন ২-৩ বছর মাত্র। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অনেকগুলো গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন করা সম্ভব হবে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়া, অনেকগুলো গভীর নলকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত ভূ’উপরিস্থ পানি সংস্থানের অভাব, ঢাকার চার পাশের নদীগুলো দূষণ অব্যাহত থাকলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ঢাকায় খাবার পানি তীব্র সংকট দেখা দিবে, নগরবাসী পানির জন্য হাহাকার করবে। 

বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ঘাটতির অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে ভূ’উপরিস্থ পানির মাধ্যমে পরিচালিত সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠির খাদ্য চাহিদা পূরণে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। ১৯৮০-৮১ সালে ২০,৯০০টি অগভীর নলকূপ এবং ২০১৭-১৮ সালে ১৩,৫৫,৮৫২টি অগভীর নলকূপ, ৩৭,৫৩৮টি গভীর নলকূপ, এবং ১,৮১,৪৬৯টি অগভীর পাম্পের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মোট চাষকৃত জমির প্রায় ৭৫ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি এবং বাকি ২৫ শতাংশ ভূ’উপরিস্থ পানির দ্বারা সেচ করা হয়। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে প্রায় ৪ লাখ অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে। অতিমাএায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, বাড়ছে ঝুঁকি। উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে লবন পানির অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে। ভূগর্ভে কৃএিম রিচার্জ এবং কৃষি কাজে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ পানি আরও জটিল হয়ে উঠবে। এই মূল্যবান সম্পদকে টেকসইভাবে পরিচালনা করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানি দৃষ্টির বাইরে হতে পারে, কিন্তু এটি মনের বাইরে থাকা উচিত নয়।

পানি সাশ্রয় করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব এবং পানি সাশ্রয়ের অনেক উপায় রয়েছে। গোসলখানায় দীর্ঘক্ষণ ঝর্না ব্যহার না করা, দাঁত ব্রাশ ও সেভিং করার সময় কল ছেড়ে না রাখা বরং মগ বা গ্লাসে পানি ব্যবহার করা। অল্প জামাকাপড় না ধুয়ে বেশি করে জামাকাপড় এক সংগে ধোয়া। কম পানি ব্যবহার লাগে এমন দেশীয় গাছ লাগানো। সব সময় মনে রাখতে হবে এক ফোঁটা পানিও মূল্যবান। আসুন প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পানি সাশ্রয় ও সংরক্ষণ করি।


সুপারিশ

* ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা এবং অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
* খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা। 
* ভূউপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানি সংকট মোকাবেলায় প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষে গবেষণা জোরদার এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা।
* সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়া এবং অবৈধ দখলদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। সি এস দাগ ধরে নদীর সীমানা নির্ধারণ করা এবং নতুন করে কোন স্থাপনা যাতে গড়ে না উঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
* শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য, পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা।
* ঢাকার আশেপাশের নদীসহ অন্যান্য সকল নদী ও জলাশয় দখল, ভরাট ও দূষণ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
* নদী দূষণমুক্ত করা। নদীর পানি কৃষি ও শিল্পে এবং পরিশোধন করে খাবার পানি হিসাবে ব্যবহার করা।
* নদীর প্রবাহ ও নাব্যতা যথাযথ রাখার লক্ষ্যে নদীতে পিলারসমৃদ্ধ ব্রীজের পরিবর্তে ঝুলন্ত ব্রীজ বা টানেল নির্মাণ করা।
* নিরাপদ পানি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।
* শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত পানি পুনর্ব্যবহার করা।
* ভূগর্ভে কৃএিম রিচার্জ করা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায়।
* কৃষি কাজে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭