ইনসাইড থট

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্ট্যান্ডার্ড সার্ভিস!


প্রকাশ: 22/03/2022


Thumbnail

অতিমারীর কারণে আড়াই বছর দেশে যেতে পারিনি। অনেক হাঙ্গামা করে অসুস্থ মাকে দেখতে দেশে যাবার আয়োজন করেছি সাতই মার্চে। একাই যাচ্ছি, পরিবার পরিজন ছাড়া। হাঙ্গামা করতে হয়েছে, কারণ আমি যেদেশে থাকি সেখানে তখন ওমিক্রনের অতিপ্রভাব। দেশটির প্রতি এগারোজনে একজন আক্রান্ত। তাই সবার ছুটি বন্ধ। অতীব প্রয়োজনে বিদেশ গমন করতে হলে ছুটির প্রয়োজনীয়তার সপক্ষে বিভাগীয় প্রধানের চিঠি লাগবে। তারপর প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর অনাপত্তি পত্র। তারপর আমার ক্ষেত্রে  স্বাস্থ্য মহাপরিচালক। এরপর স্বাস্থ্য সচিব। এখানেই শেষ নয়। স্বাস্থ্য সচিবের অনুমতিপত্রটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। সেখান থেকে অনুমোদন মিললে প্লেনের টিকেট কাটা যাবে। ততদিনে টিকেট প্রায় শেষ বা অগ্নিমূল্য।

অসুস্থ মাকে দেখা ছাড়া আরেকটি মিশন হাতে নিয়েছি এবারের ট্যুরে। সেটা হলো, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কিছু নতুন বন্ড কেনা। স্ত্রীর নামে আগে কেনা যৎসামান্য কিছু বন্ড পুনঃ বিনিয়োগ করা। মেয়াদ শেষে পুনঃ বিনিয়োগের জন্য আবার আবেদন করতে হয়। বিদেশে আপনা আপনি পুনঃ বিনিয়োগ হয়ে যায়, আবেদনপত্র জমা দিতে হয় না। আবার ফোনেই বিনিয়োগ বন্ধ করা যায়। যাহোক, নতুন বিনিয়োগ ও পুনঃ বিনিয়োগের নিমিত্তে ব্যাংকটির কল সেন্টারে ফোন দিলাম। উদ্দেশ্য, যে শাখায় যার কাছে কাজ তার সাথে সরাসরি কথা বলা। যাতে আমি যাবার পর যেন কোন বিলম্বিত না হয় বা কেউ যাতে আমাকে ‘হাইকোর্ট’ দেখাতে না পারে। কল সেন্টার থেকে আমাকে যে ফোন নম্বর দেয়া হলো সেটা ওই এলাকার পুরাতন ফরমেট এর নম্বর। ওই এলাকাতেই নিজ নামে একটা ল্যান্ডফোন আছে আমার, যেটির দশ ডিজিটের নতুন নাম্বার আমি মাস ছয়েক আগেই পেয়েছি। কোন কথা না বলে কল সেন্টারের দেয়া নাম্বারে চেষ্টা করলাম। ফলাফল যা হবার তাই- ‘ইউ হ্যাভ ডায়াল ইন দি রঙ নাম্বার’। দ্বিতীয় দিন কল সেন্টারে ফোন করে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, আমাদের ডাটা বেজে এই নাম্বার ছাড়া আর কোন নাম্বার নেই। আবার কয়েকদিন চেষ্টা সেই নাম্বারে। ফলাফল একই। তৃতীয় আরেকদিন কল সেন্টারের শরণাপন্ন হয়ে আমার অসহায়ত্ব প্রকাশ করলাম। তিনিও তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন।

দেশে যাবার দিন ঘনিয়ে এসেছে। হাতে বাকি তিন চার দিন। ইতিমধ্যে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেশে যাবার অনুমোদন মিলেছে। টিকেটও মিলেছে দ্বিগুণ মূল্যে। এবার যেয়ে নতুন বন্ডটা কিনতে পারলে মাসে মাসে কিছু সাশ্রয় হবে। ভবিষ্যতের জন্য একটা সঞ্চয়ও হবে । অগত্যা শরণাপন্ন হলাম সিনিয়র চিকিৎসক ডা জিয়া ভাই এর। উনি ব্যাংকের ওই শাখাটির পাশের একটি ভবনে প্র্যাক্টিস করেন। পরদিন তিনি ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে দিলেন। কথা বললাম ম্যানেজার সাহেবের সাথে। খুলে বললাম আমার উদ্দেশ্য ও বিধেয় এর কথা। স্ত্রীর নামের বন্ড পুনঃ বিনিয়োগ করতে হবে। তিনি যাবেন না। আমি একা যাবো। হাতে সাতটি ওয়ার্কিং ডে। নিজের পাঠানো কিছু রেমিটেন্স অলস পড়ে আছে। ইনভেস্ট করলে কিছু আয় হতো। ম্যানেজার সাহেব সবকিছু নিশ্চিত হয়ে তাঁর একজন সহকারীকে নিযুক্ত করলেন আমাকে বিস্তারিত জানিয়ে ইমেইল করার। রাতেই পেয়ে গেলাম ইমেইল। সে অনুযায়ী কাগজ পত্র প্রস্তুত করে আড়াই বছর পর রওনা দিলাম ঢাকায়। কোভিড পূর্বকালে বছরে একাধিকবার দেশে গিয়েছি। করোনার কারণে এবারই এই দীর্ঘ বিরতিতে দেশযাত্রা।

ব্যাংকের শাখাটিতে যেয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। সব মিলিয়ে বিশটি ফর্ম পূরণ করতে হলো লোকারণ্যে বসে। ফর্ম নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। গত এক যুগে এগুলো হালনাগাদ করা হয়েছে বলে মনে হলো না। লেখার জন্য ফর্মে নির্ধারিত স্থান খুব সীমিত। মানুষ ভেদে ঠিকানা কম বেশি হতে পারে। কিন্তু সবার একাউন্ট নাম্বারের ডিজিট সংখ্যা তো একই। সেটা লেখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই ফর্মে। একই ঠিকানা লিখতে হচ্ছে ফর্মের তিন জায়গায়।ব্যাংকের ডাটা বেজে গ্রাহকের ঠিকানা থাকে। ঠিকানা হালনাগাদ না থাকলে হালনাগাদ করে নেয়া যায়। ফর্মে শুধু একাউন্ট নাম্বার লিখলেই কি যথেষ্ট নয় ? একই ঠিকানা কেন তিন জায়গায় লিখতে হবে?

জনারণ্যে বসে ফর্মের সীমিত জায়গায় অতি সাবধানে গুটি গুটি করে বিস্তারিত লিখতে যেয়ে বিশটি ফর্ম পূরণে তিন ঘণ্টা কাটিয়ে দিলাম। অতঃপর কাউন্টার। মাস্ক পরা কাউন্টার কর্মী বললেন, জনাব এই ফরমটি চার কপি করে লাগবে। সব কটিতেই অরিজিনাল স্বাক্ষর লাগবে। মাথায় হাত আমার। স্বাক্ষর আমার স্ত্রীর। সে তো বিদেশে। দেশে তো আমার স্ত্রী নেই। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাকে তখন পর্যন্ত কেউ বলেনি। না সামনা সামনি, না ফোনে বা মোবাইলে, না ইমেইলে। স্ত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত কিছু ফর্মে স্বাক্ষর করে নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু তাদের চাহিদা মাফিক যথেষ্ট নয়। অগত্যা এ প্রজেক্ট বাতিল।  তাতে ব্যাঙ্ক কর্মীদের ওপর ক্ষোভ হলেও দুঃখ নেই।  কারণ এতে আমার কোন অর্থনৈতিক ক্ষতি নেই। আবার যে কালে আসতে পারবো, সেকালে কাজটি করা যেতে পারে। যেদিন বন্ডগুলোর মেয়াদ শেষ, সেদিন থেকেই বন্ডগুলি পুনঃবিনিয়োগ করা যাবে। কোন লস নেই। লস হবে নতুন বন্ড না করতে পারলে। অলস পড়ে থাকবে ডলার। নিজের ক্ষতি, দেশের ক্ষতি। বললাম, আচ্ছা বাদ দেন পুনঃবিনিয়োগ। নিজ নামে নতুন বিনিয়োগ, এটা করে দেন। মাস্ক পরা স্মার্ট কাউন্টার কর্মী এবার বললেন, জনাব আজি নতুন বিনিয়োগের নতুন ফর্ম রিলিজ হয়েছে। আপনাকে প্রিন্ট করে দেই। বললাম, নতুন ফর্মের নমিনির জায়গায় স্বাক্ষর করার জন্য আমি এখন স্ত্রী পাবো কোথায় ? ক্ষোভ প্রকাশ করলাম। ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করলাম। বিকল্প কোন উপায় এর জন্য ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এর সাথে কথা বলে জানালেন, আমাকে এবার শূন্য হাতেই ফিরতে হবে। ফেরার সময় স্মার্ট কাউন্টার কর্মী দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, ম্যানেজার সাহেব মিটিং এ আছেন। পরে আপনাকে কল করে দুঃখ প্রকাশ করবেন। আজ দু সপ্তাহ হয়ে গেলো তিনি আমাকে কোন কল করেননি। অথচ তিনি আমার দেশ ও বিদেশের মোবাইল নাম্বার জানেন। ইমেইল ঠিকানাও জানেন। মনে হলো গ্রাহককে তোয়াক্কা না করাই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্ট্যান্ডার্ড সার্ভিস।

দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের। প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ সহজতর করুন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করুন। বন্ড পুনঃ বিনিয়োগ করতে আবার আবেদন করতে হবে কেন ? বন্ড প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এটি আপনা আপনি চলতে থাকবে। মেয়াদ শেষে নির্ধারিত হিসাব নম্বরে ইন্টারেস্টের টাকা জমা হবে। মূলধন আপনা আপনি পুনঃ বিনিয়োগে চলে যাবে। কেউ চাইলে পূর্ব  নির্ধারিতভাবে সুদসহ মূলধন পুনঃ বিনিয়োগ হতে পারে। বিদেশের ব্যাংকগুলোতে তাই হয়। ব্যাংকের শাখাগুলোতে প্রবাসীদের জন্য একটা ডেস্ক নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রবাসীরা দেশে যায় স্বল্প সময়ের জন্য। অনেক কাজ থাকে তাদের হাতে সেই স্বল্প সময়ে করার জন্য। দেশের সতেরো ভাগের এক ভাগ লোক প্রবাসী। ব্যাঙ্ক সার্ভিসে এই এক কোটি মানুষের জন্য বিশেষ সার্ভিসের ভাবনা আজ সময়ের দাবি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭