ইসির সাথে সুশীল সমাজের সংলাপের বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন কর্মী, নারীবাদী এবং পরিবেশবাদী খুশি কবির বলেছেন, আমরা যারা উপস্থিত হয়েছিলাম, মোটামুটি সবাই আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। বিশেষ করে বিরাজমান অবস্থা এবং অবস্থার পরিবর্তনের বিষয়ে কি কি করণীয়, এ নিয়েই মূলত আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তবে বলার ক্ষেত্রে সবাই তো আর একরকম বলবে না। একটু ভিন্নতা তো থাকবেই। সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও পরে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররাও কথা বলেছেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। নির্বাচনে মানুষের আস্থা কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, এ নিয়েই মূলত সংলাপটি হয়েছে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক, আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে খুশি কবির বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পাঠকদের জন্য খুশি কবির এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।
খুশি কবির বলেন, মানুষ যখন ভোট দিতে যাবে তাদের নিরাপত্তাসহ নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নির্বাচন কমিশনকে তৈরি করতে হবে। আমরা বলেছি, কমিশন যেন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে। কেননা তারা তো কোনো দলীয় সরকারের অধীনে কাজ করে না। তারা তো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে যে নিয়ম আছে, যে বিধিবিধিগুলো আছে, সেগুলো মেনে যেন কাজ করে। এখন এই আইনগুলো যথেষ্ট কি যথেষ্ট না, এ নিয়েও বিতর্ক আছে। তবে আমার কথা হলো যতটুকু আছে, ততটুকুই যেন পূরণ করে। যা আছে, তা মেনেও যদি নির্বাচনটি হয়, তাহলে আমার মনে হয় নির্বাচন অনেকটাই ঠিকঠাক মতো করা যেতে পারে। এগুলোই আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে জোর দিয়ে বলেছি যে, নির্বাচনে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনে এটি যেহেতু আছে, এটি বন্ধ করতে হবে। এর পাশাপাশি প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া, নির্বাচনী আচরণ ভঙ্গ করলে প্রার্থিতা বাতিল করার সাহসও নির্বাচন কমিশনকে দেখাতে হবে। কোনো জায়গায় সহিংসতা হলে বা পরিস্থিতি তৈরি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার মতো বিষয়গুলোর দিকেও কমিশনকে নজর দিতে হবে। যেমন সুবর্ণচরের ঘটনা, ২০০১ সালের সহিংসতা কিংবা ২০০৮ সালের ঘটনার মতো কোনো ঘটনা যেন আর না ঘটে। নির্বচনী আচরণ ভঙ্গ করলেই সাথে সাথে ইসি’কে একশনে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় প্রশাসনের কি ভূমিকা থাকবে, ওইটাও একটি বড় বিষয়। ডিসিদেরকে দিয়েই নির্বাচন করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এখন ইসিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কাদের দায়িত্ব দিবে। মূল কথা হলো নির্বাচন কমিশন নিজের অস্তিত্ব, স্বকীয়তা বজায় রেখে যেন নির্বাচনটি সঠিক হয়, ওই দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমি আরও বলেছি, নির্বাচন হয় জনগণের জন্য। ফলে জনগণকে যদি নির্বাচনে না আনা যায়, তাদের যদি অংশগ্রহণ না থাকে, তাহলে কিন্তু সুষ্ঠু ভোট হবে না।
খুশি কবির বলেন, বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের কথাও উঠেছে এবং সবাই এই নির্বাচনটিকে মডেল হিসেবে বিবেচনা করতে পরামর্শ দিয়েছে ইসিকে। তবে এ ক্ষেত্রে আমার কথা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের ভোটার ও জনসাধারণ কিন্তু অন্যান্য এলাকার তুলনায় সচেতন। যার কারণে ভোটটি সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করা, নারী ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দলিত, আদিবাসীসহ ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর যারা আছে, তাদেরকেও নির্বাচনের আমেজে সামিল করতে হবে। তা না হলে ভোট কিন্তু সুষ্ঠু হবে না।