ইনসাইড বাংলাদেশ

স্বৈরাচার এরশাদের ক্ষমতা দখলের দিন আজ


প্রকাশ: 24/03/2022


Thumbnail

আজ ২৪ মার্চ। স্বৈরাচার এরশাদের ক্ষমতা দখলের দিন। ১৯৮২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ক্ষমতা দখলের পরে তিনি দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। দীর্ঘ ৯ বছর এই স্বৈরশাসক ক্ষমতার মসনদে আসীন ছিলেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর, এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ পায়। ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন শুরু করেন। ঐ দিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। 

ক্ষমতা দখলের পর এরশাদ সরকার দেশের রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে গণবিরোধী ধারা প্রবর্তন করে। রাজনৈতিক নেতারাও ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হন। এরশাদের প্রায় ৯ বছরের শাসনামলেই দেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়। ক্ষমতা দখল করে যে সামরিক আইন জারি করেন তিনি সেখানে আকারে-ইঙ্গিতে কেউ তার সামরিক শাসনের সমালোচনা বা বিরোধিতা করলে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

সামরিক শাসক স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে ছাত্ররা প্রথম থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এরশাদের ক্ষমতা দখলের প্রথম দিন থেকেই বিক্ষোভ মিছিল করেন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কলাভবনে পোস্টার লাগাতে গিয়ে এদিন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর তিন নেতা গ্রেফতার হন। সামরিক আদালতে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। সেদিন থেকে ছাত্ররা এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন।

১৯৮২ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতারা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। সাভার সেনানিবাস থেকে মিছিলের খবর শুনে সেনাবাহিনী চলে আসে। স্মৃতিসৌধে ছাত্রদের ওপর চলে নির্যাতন। একই বছরের ৮ নভেম্বর মধুর ক্যান্টিনে ১৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি সুশৃঙ্খলভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। মিছিলের প্রথম ভাগে শতাধিক ছাত্রী ছিল। সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে হাইকোর্টের কাছে মিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ শুরু করে। সাধারণ ছাত্ররাও তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এরপর ছাত্রদের ওপর চলে গুলিবর্ষণ। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল, জাফর, দীপালি সাহা। জয়নালকে গুলিবিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

এরশাদ তার ৯ বছরের শাসনকালে আন্দোলন-সংগ্রাম প্রতিহত করতে কতো মানুষকে যে হত্যা করেছে তার সঠিক হিসাব নেই। তার শাসনকালের পুরো সময়েই (১৯৮২-৯০) বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম-হরতাল-ঘেরাও কর্মসূচিতে গণতন্ত্রকামী ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঢল নেমেছিল।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নুর হোসেন, যার বুকে পিঠে লেখা ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ডা. শামসুল আলম মিলন, কমরেড তাজুল, যুবনেতা টিটো, জেহাদ, সাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন ও ইব্রাহিম সেলিম, ঢাকা পলিটেকনিকের ছাত্র মনিরুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা ময়েজ উদ্দিনসহ অগুণতি মানুষের রক্তের স্রোতে ভিজে গিয়েছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ।

এই ঘটনায় সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এরশাদ হঠানোর আন্দোলনে নেমে পড়ে। এভাবে ঘটনাক্রমিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭