ইনসাইড থট

‘সুখী দেশ‘ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ


প্রকাশ: 24/03/2022


Thumbnail

২১ মার্চ ২০২২ সোমবার, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এক ঐতিহাসিক দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কল্যাণে দক্ষিণ এশিয়ায় শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত একমাত্র দেশ, বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করলেন আলোর দিশারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয়তু শেখ হাসিনা। 

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিদ্যুতের আলো এরই মধ্যে চলে গেছে দেশের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে, দ্বীপ ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। বিদ্যুৎবিহীন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই এলাকাগুলোর বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন অন্ধকারে কাটালেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বিদ্যুতের আলোয় তারা আলোকিত। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে যেসব এলাকায় যুগের পর যুগ বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি, এবার বিদ্যুৎ বঞ্চিত সেই এলাকার বাসিন্দাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, কিছু দুর্গম পার্বত্য এলাকা বাদে এরই মধ্যে দেশের ৯৯.৮৫% এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ সুবিধার কারণে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা, কৃষি, দৈনন্দিন কাজে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, হাসি ফুটেছে সকল স্তরের মানুষের মুখে।

সম্প্রতি বিশ্বের ১৪৬ টি দেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি, সামাজিক সমর্থন, স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা, সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা, উদারতা, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক কর্তৃক তৈরি ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস‘ রিপোর্টে বাংলাদেশ সুখী দেশ হিসেবে গত বছরের তুলনায় সাত ধাপ এগিয়ে ৯৪তম অবস্থানে পৌঁছেছে। ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবেশি দেশ ভারতের অবস্থান ১৩৬তম। মানুষের খুশির পরিমাণ মূল্যায়নের সাথে সাথে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করেই তৈরি হয় এই সূচক। এতে আমেরিকা ১৬তম স্থানে রয়েছে,  ব্রিটেন ১৭ নম্বরে রয়েছে। সবচেয়ে অসুখী দেশগুলির তালিকায় রয়েছে লেবানন, ভেনেজুয়েলা ও আফগানিস্তানের নাম (সূত্র: ১৮ মার্চ ২০২২ শুক্রবার দ্য গার্ডিয়ান)।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে  দিবানিশি কাজ করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রতিটি মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন শেখ হাসিনার সরকার। দুস্থ, অসহায় মানুষ ও পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য বর্তমান সরকারের বহুমুখী প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ভিজিএফ, ভিজিডি, দুস্থ ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ও গর্ভবতী মায়েদের ভাতা, অক্ষম মা ও তালাকপ্রাপ্তদের জন্য ভাতা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি ইত্যাদি। সম্প্রতি ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের  মাধ্যমে টিসিবি থেকে ন্যায্যমূল্যে খাবার বিতরণ করছে এবং ষাটোর্ধ্ব সকল নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।

শিক্ষা একটি নাগরিক অধিকার। এই অধিকার প্রদানে শেখ হাসিনার সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো-শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই শতভাগ ছাত্রছাত্রীকে বিনামূল্যে বই বিতরণ। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় শতভাগে উন্নিত হয়েছে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে "শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট”। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েরা টিউশন ফি ছাড়া পড়াশোনা করতে পারছে। মেয়েদের স্কুলে যেতে উৎসাহিত করতে বৃত্তির প্রবর্তন করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকার ঘোষণা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার (School Feeding) প্রদান করা হবে এবং শিক্ষার্থীরা স্কুলের পোশাক তৈরি করার জন্য এককালীন ২০০ টাকা অনুদান পাবে।

বিশ্বের ২য় সুখী দেশ ডেনমার্ক এর মত বাংলাদেশও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ৭০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৫০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। 

অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৪৩তম, আর ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বের ৩৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সরকারি-বেসরকারী চাকুরীজীবী সহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ার কা্রণেই রিক্সাওয়ালা, দিনমজুরসহ সকল স্তরের  মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে। দিনমজুরেরা দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরেও তাঁদের বৃদ্ধ মা-বাবা, স্নেহের সন্তানের জন্য দেশি-বিদেশি নানাপ্রকার সুস্বাদু ফলসহ নানা বিলাসী দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করার সক্ষমতা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ক্রয় করে বিধায়ই দেশি-বিদেশি ফলসমূহ শহরের অভিজাত এলাকার কাঁচঘেরা দোকান ছাড়াও রাজধানীর অলিগলিতে, গ্রামের হাট-বাজারে রিক্সা-ভ্যানেও বিক্রয় হচ্ছে, যা চোখে পরার মত। 

বিশ্বের ৫ম সুখী দেশ নেদারল্যান্ডস এর অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তিও কৃষি। শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনায় কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত অবকাঠামো নির্মাণে কৃষিজমি কমতে থাকা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। একটা সময় ছিলো,  খাদ্য আমদানি করতে হতো। খাদ্যের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হতো।  কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশে একটা নীরব কৃষি বিল্পব ঘটিয়েছে। সেই বিল্পবের ফলে দেশের সব খাদ্য সংকট দুর করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে সংসম্পুর্ণ। প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর অধিক ফলনের ধান জাত আবিষ্কারে  সফলতার জন্য তিনজন কৃষি বিজ্ঞানীসহ মোট ৭ জন কৃষিবিদ একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। 

২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটকালে ‘ডব্লিউএফপি’ অনুমান করে বলেছে, করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে শুধু শিল্প নয়, কৃষিতেও উৎপাদন কম হবে, ফলে বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। বাংলাদেশে কৃষির ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে, ডব্লিউএফপিএর ভবিষ্যত বানী ভুল প্রমাণিত করে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, ‘করোনা ও বন্যা যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে খাদ্য সংকট হবে না’। 

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নগর ও গ্রামের বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হায়েনারা পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই ব্যতিক্রমধর্মী ধারণা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনমনে ব্যাপক সাড়া জাগায়। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এর অর্থ হল গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া। উন্নত জীবনব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকার সন্ধানে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করার নামে গ্রামের মানুষ আর বড়  শহরে ভিড় করবে না। দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎ। আধুনিক শিক্ষায় আলোকিত হবে প্রতিটি গ্রাম। অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা পৌঁছে যাবে প্রতিটি গ্রামে। আমার গ্রাম হবে আমার শহর। প্রতিটি গ্রামেই আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি হাতের নাগালে। সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিস্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সবকিছুই রয়েছে গ্রামে।

একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ১০০ বছর মেয়াদী ডেল্টা পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক উন্নিত হয়েছে। মাথাপিছু আয়, কৃষি, শিক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ,  সকল সূচকের ভিত্তিতে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্কের ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’ ই সাক্ষ্য দেয় যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘সুখী দেশ‘ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭