ইনসাইড টক

‘মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নকারীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য বায়ু দূষণ করছে’


প্রকাশ: 24/03/2022


Thumbnail

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেছেন, বায়ু দূষণের ফলে আমাদের পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, জীববৈচিত্রে প্রভাব পড়ছে। বায়ু দূষণের ফলে গাছপালায়, পাতায় ধূলো জমে থাকে, ফলে গাছের সালোকসংশ্লেষণ ব্যহত হয়। এখন মূলত গত কয়েক বছর ধরে বায়ু দূষণের ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখছি। এই বায়ু দূষণেরর উৎসগুলো কী? এখন থেকে আরও পাঁচ বছর আগে উৎস কিন্তু ভিন্ন ছিল, এখন কিন্তু একটু পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেমন প্রধান উৎস ছিলো ইটভাটা, তারপর ছিলো যানবাহনের ধোঁয়া, তারপরে ছিলো উন্নয়ন কর্মকান্ড। তারপরে আমরা যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বর্জ্য পোড়াই। মূলত এই চারটা ছিলো।

বাংলাদেশে গত চার বছর ধরে বায়ু দূষণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। বায়ু দূষণের কারণ, প্রতিকার, সঙ্কটসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। পাঠকদের জন্য প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, এখন গত পাঁচ বছরে কিন্তু এগুলো পরিবর্তন হয়েছে, অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি দূষণ হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে। মেগা প্রজেক্ট, ওয়াসা, ডেসকো, তিতাস ইত্যাদি যে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করে, সিটি কর্পোরেশন এবং উন্নয়ন প্রকল্প -এগুলো এখন প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এগুলোতে সবচেয়ে বেশি দূষণ হয়। আমরা সারা শহর দেখি ধূলাচ্ছান্ন। দ্বিতীয়, ইটভাটার সংখ্যা কমে আসছে। তৃতীয়, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, যানজট বাড়ছে। সেই সাথে পুরনো গাড়ি আরও পুরনো হচ্ছে। এজন্য যানবাহন থেকেও প্রচুর দূষণ হচ্ছে।

কেন এই দূষণ কমছে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দূষণ না কমার মূল কারণ হচ্ছে যেখানে যারা মেগা প্রজেক্টগুলো করে যেমন ওয়াসা, তিতাস, ডেসকো ইত্যাদি যে খোঁড়াখুঁড়ি করে তা কোনরকম নিয়ম মেনে পরিবেশ সংরক্ষণ করে কাজটি করছে না। কিন্তু তা করতে তারা বাধ্য। কেন তারা করছেন না? কারণ তারা সবাই তাদের ইচ্ছামত কাজ করছে, এখানে কোনো জবাবদিহিতা নাই। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে যারা এদেরকে মনিটরিং করবে, মূলত পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটি, যার যেখানে কর্মকাণ্ড তারা সেখানে মনিটরিং করছে না ঠিকমতো। আমাদের যারা মেজর প্রকল্প চালান, যারা দেখেন এই প্রতিষ্ঠানগুলো এরা কিন্তু প্রত্যেকেই বিদেশি বড় বড় প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের দেশে বা অন্য কোনো দেশে এভাবে কর্মকান্ড করতে পারে না কিন্তু এখানে করছে। তারচেয়েও দুঃখজনক হলো, এইসব প্রকল্পে যারা কাজ করেন আমাদের দেশীয়, এরা অনেকেই আছেন যারা সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এরাও তাদের সঙ্গে মিলে এই দূষণের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরও বলেন, এখন যেটা দরকার বলে আমি মনে করি বায়ু দূষণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে বড় ধরনের ভূমিকা নিতে হবে, তাদেরকে আরও সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে। তারা অনেক সময় বলেন যে আমাদের লোকবলের অভাব, তাই কিছু করতে পারি না। কিন্তু এত লোকবলের তো দরকার নাই। যেমন- মেট্রোরেল প্রকল্প হচ্ছে। প্রকল্পের যে কর্মকর্তা তাকে আমি বলবো যে আপনি এটা প্রতিরোধ করুন, আমি বলবো তার সিইওকে, অন্যদেরকে বলবো। আমি ওয়াসার এমডিকে বলবো, আমি তিতাসের এমডিকে বলবো। আমার তো জনে জনে বলার দরকার নেই যে, আমাদের যে আইন আছে সেভাবে আপনাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে এবং আপনি একটুও বেশি দূষণ করতে পারবেন না। করলে আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর শিল্প-কারখানা দূষণের জন্য কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৭ ধারায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে। অনেক সময় আমরা দেখেছি এটা লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত আদায় করে। এই যে মেগা প্রজেক্ট, ওয়াসা, ডেসকো, তিতাস, সিটি কর্পোরেশন যে প্রতিনিয়ত গত কয়েক বছর ধরে দূষণ করে আসছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের যারা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তাদেরও দায়িত্ব আছে, পাশাপাশি যারা এদেরকে মনিটর করবেন তাদেরও দায়িত্ব আছে। তারা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। যার জন্যই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমরা চাইবো যেন সবাই যে যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করে। আমাদের নাগরিকদেরকে প্রচুর চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন তারা এই দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হয়।

পরিবেশ দূষণ রোধে যা যা করণীয় তা কেন করা হচ্ছে না প্রশ্নে প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো যারা করছে তাঁরা প্রত্যেকে অতিরিক্ত মুনাফা চায়। হাইকোর্টেরও নির্দেশনা আছে পানি ছিটানো। তাঁরা যদি ঝর্ণার মতো সারা এলাকায় পানি ছিটিয়ে যায় তাহলে তো এই ধুলোগুলো মাটিতে পড়ে যায় এবং এই ধূলা আর হয় না। যেমন- আমি একটা বিল্ডিং ভাঙছি। আমি যদি চারদিকে চট দিয়ে সেটাকে ঘেরাও করে রাখি তাহলে তো কম ধূলা যাবে। কিন্তু সেটা আমি করছি না। এই যে আমাদের ঢাকা শহরে খোঁড়াখুঁড়ি করে। যেমন আমি পানির লাইন করব। আমার ১০ কিলোমিটার এই বছর করার কথা। আমি ১০ কিলোমিটারই একসঙ্গে করতেছি। আমি ১ কিলোমিটার শেষ করে আবার ১ কিলোমিটার করি। তাহলে তো আমার ৯ কিলোমিটারে দূষণ আর হচ্ছে না। এখানে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। যারা কাজটা করে তারা পুরোটা একসঙ্গে করে। পরে তারা ওই সংস্থাকে চাপ প্রয়োগ করে যে আমাকে টাকা দাও, নাহলে আমি করছি না। এমন অনেক ফাঁক আছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭