ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

জুয়ার টাকা লেনদেন; ভাড়া নিচ্ছে বিকাশ-নগদের এজেন্ট নম্বর


প্রকাশ: 24/03/2022


Thumbnail

অনলাইনে জুয়ার টাকা লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি বিকাশ ও নগদের কিছু এজেন্ট নম্বর ভাড়া নিচ্ছে জুয়াড়ি চক্র। ৫ হাজার টাকার কম লেনদেন হয়, এমন বিকাশ-নগদের এজেন্ট নম্বর ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় জুয়াড়ি চক্রের কাছে ভাড়া দিচ্ছে কিছু অসাধু বিক্রয়কর্মী। এই অবৈধ কাজে ব্যবহৃত বিকাশ-নগদের ১৩টি এজেন্ট নম্বরের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রতিটি নম্বরে মাসে প্রায় ৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে।

জুয়ার এই টাকা অবৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে রাশিয়া ও দুবাইয়ে পাচার হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে জুয়ার টাকা লেনদেনে এসব নম্বর ব্যবহার করছে চক্রটি। জুয়াড়ি চক্রের কাছে এজেন্ট নম্বর সরবরাহের অভিযোগে নগদ ও বিকাশের আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তাঁদের মধ্যে নগদের দুই ব্যবস্থাপকসহ চারজন জুয়ার টাকা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। বাকি চারজন বিকাশের বিক্রয়কর্মী বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডি বলছে, রাশিয়ায় বসে ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেশে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করছে ৭০ জনের একটি চক্র। চক্রের মূল হোতা বিদেশে বসে টেলিগ্রামের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গত এক বছর চক্রের ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো এজেন্ট নম্বরে মাসে কত টাকা লেনদেন হয়, সেটার তথ্য মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির স্থানীয় ব্যবস্থাপক ও এসআরদের কাছে থাকে। প্রতিটি এজেন্ট নম্বরের বিপরীতে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা লেনদেনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে এজেন্ট নম্বর বাতিল করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, বিকাশের এজেন্ট নম্বরে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়। তবে নগদ তুলনামূলক নতুন হওয়ায় এ লক্ষ্য কিছুটা কম। তিনি বলেন, ঢাকায় এই লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন নয়। তবে গ্রামে এত টাকা লেনদেন করা কঠিন।

কম টাকা লেনদেন হয়, এমন এজেন্টদের নম্বর অন্য এলাকায় চালানোর কথা বলে নিয়ে নেন নগদ ও বিকাশের স্থানীয় দায়িত্বশীলরা। বিনিময়ে ওই এজেন্টকে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নগদের স্থানীয় ব্যবস্থাপক ও এসআর এবং বিকাশের স্থানীয় ডিএসআর ও ডিএসও হিসেবে কাজ করেন।

সিআইডি বলছে, এই এজেন্ট নম্বরগুলো জুয়ার টাকা লেনদেনে ব্যবহার করা হয়, সেই বিষয়ে কোনো কোনো এজেন্ট জানেন; আবার কেউ জানেন না। পরে নম্বরগুলো মোটা অঙ্কের টাকায় জুয়াড়ি চক্রের হাতে তুলে দেন অসাধু ওই কর্মকর্তারা। চুয়াডাঙ্গার এজেন্ট নম্বর মেহেরপুরে ভাড়া দেওয়া হয়েছে—এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

গত সপ্তাহে রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম এলাকা থেকে অনলাইন জুয়া পরিচালনায় জড়িত মো. ইব্রাহিম ও রাজীব হোসেন নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের কাছে বিকাশের এজেন্ট নম্বর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি এজেন্ট নম্বর ভাড়া নিয়ে অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেনে ব্যবহার করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে, এজেন্টদের লেনদেন নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং অবৈধ লেনদেনে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নগদ ও বিকাশের কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস মো. শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, বিকাশ তার এজেন্টদের লেনদেন কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে। কোনো এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর বা কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে, বিকাশ নিজ উদ্যোগে তদন্ত পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

নগদের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কয়েক কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং তাঁরা কেউই নগদের কর্মী নন। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭