ইনসাইড বাংলাদেশ

‘ডায়েরিগুলো বঙ্গমাতা লুকিয়ে রেখেছিলেন বলেই কারাগারের রোজনামচা পেয়েছি’


প্রকাশ: 24/03/2022


Thumbnail

বঙ্গমাতা ডায়েরিগুলো লুকিয়ে রেখেছিলেন বলেই কারাগারের রোজনামচা পেয়েছি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডায়েরিগুলো বঙ্গমাতা লুকিয়ে রেখেছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায়। যখন বঙ্গবন্ধু শাহাদত বরণ করলেন, ভবনটি তছনছ হলো। অনেক কিছু সরিয়ে নেওয়া হলো, ধ্বংস করা হলো। ডায়েরিগুলো অযত্নে এক কোণায় পড়ে থাকায় এটা বেঁচে গিয়েছিল। সেজন্যই আজকে আমরা এই দলিলটা পেয়েছি। যা পরবর্তীতে নাম হয় কারাগারের রোজনামচা।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কারাগারের রোজনামচা’ পাঠ ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের জীবনের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন জেলখানায় যেতেন বঙ্গমাতা একটা ডায়েরি তার হাতে দিয়ে দিতেন। এই ডায়েরিতে বঙ্গবন্ধু লিখতেন। তার অভিজ্ঞতার কথা লিখতেন, জেলখানার কথা লিখতেন, তার পরিকল্পনার কথা লিখতেন। বঙ্গবন্ধুর একটা ডায়েরি লেখা হলে বঙ্গমাতা আরেকটা ডায়েরি তাকে দিতেন। সেই ছোট শিশু রাসেলের কথা এই কারাগারের রোজনামচায় আসছে। যা সবার মন আকৃষ্ট করেছে।

নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তার ত্যাগের কথা জানতে হবে। বাংলাদেশকে তার ভালোবাসার কথা জানতে হবে। এমনি এমনিই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। কেউ একজন ঘোষণা করলো আর স্বাধীন হয়ে গেল, এমন নয়। এর জন্য ধাপে ধাপে আন্দোলন হয়েছে। রক্ত ঝরেছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার দৃশ্য আমি দেখেছি। দেখেছি নদীতে লাশের সারি। যুদ্ধে কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান তা জানা ছিল না। সবার রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশের কথা বঙ্গবন্ধু চিন্তা করতেন। আজকে তার কন্যা সেই জায়গায় যাচ্ছেন বলেই দ্রুততম গতি আমরা পেয়েছি। আমরা সেই গতিতেই এগিয়ে চলছি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। খুব কাছ থেকে দেখেছি বলেই আমি তাকে জানতাম, জানি কিংবা অনেক উদাহরণ আমার স্মৃতিপটে রয়েছে। আজকে যদি বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা নিয়ে কথা বলতে হয়, তাহলে প্রথমে বলতে হবে বঙ্গমাতার কথা। যিনি তাকে আগলে রেখেছিলেন, উৎসাহ দিতেন, উদ্দীপনা জানাতেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি আরও পেছনে যাই, বঙ্গবন্ধু ছোটবেলা থেকেই তার সহপাঠী, গ্রামের মানুষ কিংবা তার সঙ্গে যারা চলাফেরা করতেন তাদের নিয়েও চিন্তা করতেন। নিজের চাদরটা পর্যন্ত দিয়ে আসতেন। যেসব ছাত্ররা ভিজে স্কুলে যেতেন তাদের ছাতাটা দিয়ে দিতেন। এই হলো বঙ্গবন্ধু।

তিনি বলেন, কায়েদে আজম জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বললে তার মুখের ওপর বঙ্গবন্ধু নো নো বলে বাংলার কথা উচ্চারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই বাংলাদেশকে কীভাবে মুক্ত করবেন সেটা ভেবেছেন।

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছিলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই তাকে শাহাদত বরণ করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে একটা অকার্যকর দেশে পরিণত করা। বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বরণের পর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। তখন নিজেদের গায়ে চিমটি দিতাম আমরা বেঁচে আছি কি না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শাহাদত বরণ করলেন অথচ আমরা হুংকারও দিতে পারলাম না, চিৎকারও করতে পারলাম না। দু'একজন বিচ্ছিন্নভাবে করেছেন, কিন্তু আমরা সংঘবদ্ধভাবে কিছুই করতে পারিনি। আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তার যোগ্য উত্তরসূরী যখন এলেন, তিনি সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়ালেন। সারাদেশের মানুষকে আবার একত্রিত করলেন, যেটা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসটাকেই মুছে ফেলতে চেয়েছিল একটি চক্র। আমাদের তখনকার প্রজন্মকে মিথ্যে ভরা তথ্য দিয়ে তাদের সামনে ধরা হয়েছিল। ইতিহাস কখনো কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাস নিজের গতিতেই চলে। মীর জাফরকে যেমন ইতিহাস ক্ষমা করে নাই, এই প্রজন্মও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জেনে, বঙ্গবন্ধুর ঘাতক কারা ছিলেন, কারা দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তা জেনে তাদের করণীয়টা বেছে নিতে পারবে।

পুরস্কার বিতরণীতে দুই ক্যাটাগরিতে শতভাগ সঠিক উত্তরদাতা ৪৩৯ জনের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ২০ জনকে নির্বাচিত করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী তাদের ল্যাপটপ ও ট্যাব দেওয়া হয়। শতভাগ প্রশ্নের সঠিক উত্তরদাতা অবশিষ্ট ৪১৯ জনকেও পুরস্কার দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭