ইনসাইড আর্টিকেল

"দেশের স্বাধীনতার আলো আমাগো উঠানে আহে না"


প্রকাশ: 25/03/2022


Thumbnail

"দেশে স্বাধীনতার আলো আনতে সাহায্য করছে আমার বাপে, কিন্তু এই আলো আমাগো উঠানে আহে না।" এইভাবেই হতাশা প্রকাশ করলেন এক মুক্তিযোদ্ধার দুই সন্তান। 

দারিদ্যতা এবং জীবন ব্যবস্থা নিয়ে বাংলা ইনসাইডার কথা বলেছিল ঢাকা উদ্যানের বস্তিতে বসবাসরত এক যৌথ পরিবারের সাথে, তখন তারা জানিয়েছিলেন এই কথা। কথা প্রসঙ্গে উঠে এসেছিল সেই পরিবার একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। দ্বিতীয় প্রজন্ম হয়েও কেমন আছেন তারা? 

পরিবারে আছেন মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দার বেপারীর দুই ছেলে,  স্ত্রী এবং সন্তানেরা। প্রায় এক যুগ ধরে তারা একই জায়গায় বসবাস করছেন এবং এই এক যুগে তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি তেমন। অনেক বড় আশা-আঙ্ক্ষার স্বপ্ন দেখতে ভয় পান তারা। তাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশের হাজার উন্নয়ন সম্ভব, অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু তাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে না।  

পরিবারের দুইজন পুরুষ পিকআপ ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছেন বিগত কয়েক বছর ধরে। এর আগে রিকশা চালাতেন। সংসারের মাসিক আয়ের একটা বড় অংশ তাদের এখনো দিয়ে দিতে হয় চওড়া সুদের গাড়ির কিস্তির পেছনে, মাস শেষে এত বড় পরিবার চালোনা কষ্টকর হয়ে যায় তাদের। এর মধ্যে উপরি পাওয়া হিসেবে বর্ধনশীল দ্রব্যমূল্য। উৎসবও কোনো কোনো বছর ফিঁকে হয়ে যায় তাদের অর্থসংকটের কবলে পরে। বাবার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট তুলতে গিয়েও তাদের হতে হয়েছিল হেনস্তা। তারা বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন, " সব তথ্য প্রমাণ দিলাম, ত্রিশ হাজার টাকা গেল, লাভের লাভ কিছু হলো না। এখন খেয়ে পরে বেঁচে থাকতেই কষ্ট হয়ে যায়।" 

করোনা পরিস্থিতির পর তাদের অবস্থা যেন এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। ঘরের ভাড়া, বাড়তি সামগ্রী মূল্য আর বর্ধনশীল পরিবারের চাহিদা যোগান দিয়ে চলা যেন রীতিমতো যুদ্ধ। সন্তানদের পড়ালেখার ক্ষেত্রেও অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তারা। সামর্থ্য না থাকার কারণে তাদের সন্তানদের পড়ালেখা বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেনি তারা। প্রাথমিক শিক্ষাটুকু শেষ করেই প্রায় সকলের লেখাপড়া বন্ধ। তাদের অভিযোগ করার কোনো স্থান নেই। বাসা ভাড়া, কিস্তির টাকা,  চাহিদা যোগান ইত্যাদির যোগানের পর চার সন্তানের পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়া যেন তাদের কাছে বিলাসিতার সমান। এই অভিযোগ জানানোর কেউ নাই ভেবে তারা বলেন, "কাকে বলবো? বললে লাভ কি হবে?"

সেকান্দার বেপারীর মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট তোলার থেকে তারা বঞ্চিত। চাকরির ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান নগন্য। তাদের সব তথ্য প্রমাণ থাকলেও তাদের অভ্যস্ত হতে হচ্ছে নিজেদের আশাকে মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত এই জীবনে। ৯ নং সেক্টর এ যুদ্ধ করছিলেন সেকান্দার বেপারী এমনটিই জানিয়েছেন তার পরিবার। 

কোম্পানি থেকে কিস্তিতে যে গাড়ি চালায়, সেই গাড়ির কিস্তিতে সুদ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রতিমাসে সুদের টাকার জন্য মাসিক আয়ের বিশাল অংশ তাদের দিতে হয়। সংসারের অন্যান্য খরচ চালানো মুশকিল হয়ে পরছে দিনের পর দিন। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও তারা সরকারি কোনো সুবিধা ভোগ করছেন না এই রাষ্ট্র থেকে। এই পরিবারের অবস্থা আজ তাদের দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা মানুষদের কাতারে নিয়ে যোগ করেছে। তাদের মতে, এই অভিযোগ করার কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই তাদের জন্য। তাই জীবনকে মেনে নিচ্ছেন এইভাবেই। খাওয়া আর নুন এর যোগানে যখন তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে তখন বাড়তে থাকা মূল্য যেন তাদেরই পিঠে চাবুকের আঘাত। হতাশা প্রকাশ করে তারা বলেন, " যার লাগবে তারা পায় না, যাদের আছে তাদেরই দেওয়া হয় বেশি। " 

ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের মতামত জানতে চাইলে তারা নিরপেক্ষ অবস্থানের জানান দেন। যে রাষ্ট্রব্যবস্থাপনাতে তাদের উপকার হতে পারে, সে ব্যবস্থাপনার প্রত্যাশাই তাদের মনে।

তবু দিন শেষে সুখের হাসি হেসে এই মানুষগুলো বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন তারা ভালো আছেন। এই জীবনে অভ্যস্ত হয়ে আছেন, সুবিধাবঞ্চিত হয়ে, তবে ভালো না থাকার বুলি যেন তাদের জন্য না। সংগ্রামের পাশাপাশি বেঁচে থাকাটাই যেন ভালো থাকার অংশ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭