ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

জিয়া: একজন সফল গুপ্তচরের রোমাঞ্চকর কাহিনী


প্রকাশ: 25/03/2022


Thumbnail

জিয়াউর রহমানকে বলা হয় মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব এবং জীবিতদের মধ্যে সর্বোচ্চ খেতাব বীর উত্তম পেয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবেও পরিচিত। তাকে অনেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে এবং আওয়ামী লীগ সরকার যখন নতুন অনুসন্ধানে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করে তখন বিভিন্ন মহল তার প্রতিবাদ করতেও এতটুকু কার্পণ্য করেন না। কিন্তু জিয়াউর রহমান কে ছিলেন, কি ছিলেন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা কি ছিল -এই নিয়ে এখন নতুন করে বিতর্ক উঠেছে। আর এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান একজন মেজর ছিলেন এবং তার পোস্টিং ছিলো চট্টগ্রামে। এই সময় ২৫ মার্চে পাকিস্তান বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের নামে বাংলাদেশের ওপর এক গণহত্যা চাপিয়ে দেয় এবং এই নৃশংসতম গণহত্যা এবং নারকীয় তাণ্ডবের প্রেক্ষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দেন গ্রেফতার হওয়ার আগে। আর বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত এই স্বাধীনতা পুনঃপাঠ করেন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের একজন নেতা। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানকে দিয়েও ঐ ঘোষণা পাঠ করানো হয় ২৬শে মার্চ। জিয়াউর রহমান তার জীবিতকালে কখনোই নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবী করেননি। তিনি তার ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক লেখাতেও বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাই তিনি পাঠ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু পঁচাত্তরের পরবর্তীতে ইতিহাস বিকৃতির ধারায় জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার ঘোষক বলার এক ন্যক্কারজনক ইতিহাস বিকৃতির ধারা আমরা লক্ষ্য করি।

আসুন দেখি জিয়াউর রহমান কে ছিলেন:

জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তাকে তাদের এজেন্ট বানিয়েছিল ১৯৬৮ সালে। কৌশলগত কারণে তাকে চট্টগ্রামে রাখা হয়েছিল। ৭০ -এর নির্বাচনের পর যখন বাংলাদেশের রাজনীতির টালমাটাল অবস্থা  সেই সময় বাংলাদেশের ওপর সশস্ত্র হামলা করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছিল। আইএসআই এর এজেন্ট হওয়ার কারণে এবং আইএসআই এর একজন কর্মকর্তা হওয়ার কারণে সেই অস্ত্র উদ্ধারের দায়িত্ব পড়েছিল জিয়াউর রহমানের ওপর। কিন্তু জনগণের বাঁধার মুখে জিয়াউর রহমান সেই অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি বরং অস্ত্রগুলোকে আটক করা হয়। ওই সময় যে বাঙ্গালিদের ওপর গুলি করা হয়েছিল, সেই গুলি চালানোর ক্ষেত্রেও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আইএসআই এর নির্দেশে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান করেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং যুদ্ধের খবরাখবর পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থাকে সরবরাহ করার দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। আর এই কারণে আইএসআই এর ব্লু-প্রিন্ট অনুযায়ী জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা বনে যান। আসলে তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসেবেই একাত্তরে ৯ মাস কাজ করেছেন। আর এ কারণেই দেখা গেছে যে, এই ৯ মাসের যুদ্ধে একটি সেক্টরের অধিনায়ক হওয়ার পরও তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি বরং যুদ্ধের বিভিন্ন খোঁজ খবর নিয়েছেন। এই সময় কর্নেল বেগের একটি চিঠি জিয়াউর রহমানের কাছে দেওয়া হয়েছিল যে চিঠিটি জিয়াউর রহমানের আসল পরিচয় উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওই চিঠিটিতে জেনারেল বেগ জিয়াউর রহমানের কাজের প্রশংসা করেছিলেন এবং তার পরিবার ভালো আছে বলেও তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা সমর বিজ্ঞানের দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একজন গুপ্তচর ভেতরে থেকে যা যা করতে পারেন জিয়াউর রহমান তাই করেছেন। আর এই কারণে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শেষ দিকে জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে কমান্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান আইএসআই এর নিদেশেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন এবং উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে আস্তে আস্তে পাকিস্তান বানানো এবং সেই আইএসআই এর মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী জিয়াউর রহমানকে প্যারোলে রেখেছিল পাকিস্তান সরকার।

১৯৭৫ সালের ১৫ সালের আগস্টের ঘটনাকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবো যে, সেখানে যে সমস্ত সামরিক অফিসাররা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু তারা পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে অংশগ্রহণ করেছিল। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই জিয়াউর রহমানের রোমাঞ্চকর গুপ্তচরবৃত্তির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে। খুনি ফারুক, খুনি রশিদ কিংবা খুনি ডালিম -এরা সবাই পাকিস্তানে ছিল। বিভিন্ন দেশে গুপ্তচরবৃত্তির একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো, যখন তারা দেখে যে যুদ্ধে তাদের পরাজয় অনিবার্য তখন তারা কিছু কিছু লোককে প্রতিপক্ষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। জার্মানরা এটি করেছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এটা করেছিল। বিশ্বে দেশে দেশে এটি হয়ে থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে ‘র’ এর ওপর প্রকাশিত গ্রন্থে দেখা যায় ‘র’ পাকিস্তানে এরকম বহু গোয়েন্দাকে নিযুক্ত করেছিল যারা আসলে ‘র’ এর এজেন্ট কিন্তু কাজ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বা পাকিস্তান সরকারে। এই প্রক্রিয়াতেই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং তার প্রধান কাজ ছিল আইএসআই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। খুনি মোশতাক যেমন পাকিস্তানের দোসর ছিলেন, যেভাবে গুপ্তচরদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের নীলনকশা হিসেবে, ঠিক তেমনিভাবে জিয়াউর রহমানও পাকিস্তানি গুপ্তচর হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেছিলেন। আর এই পাকিস্তানি গুপ্তচররাই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সরাসরি হত্যা চক্রের সাথে জড়িত ছিল এবং যেটির মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান তার দীর্ঘ জীবনে কোনদিনই বাংলাদেশের আনুগত্য প্রকাশ করেননি। বরং পাকিস্তানের একজন পেইড এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন এবং পাকিস্তানের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করাই ছিল তার কর্মজীবনের প্রধান লক্ষ্য। সেদিক থেকে জিয়াউর রহমান একজন সফল গুপ্তচর। তার গুপ্তচরবৃত্তি রোমাঞ্চকর গোয়ন্দা থ্রিলারকেও হার মানায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭