ইনসাইড পলিটিক্স

কাউন্সিল না করেই কি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বিএনপি?


প্রকাশ: 27/03/2022


Thumbnail

নির্বাহী কমিটির কাউন্সিল নিয়ে কোনো ধরণের তৎপরতা নেই বিএনপিতে। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দলটির কাউন্সিল কবে হবে, আদৌ হবে কি না তা নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। তৃণমূল থেকে শুরু করে সভা-সেমিনারে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিভিন্ন সময় কাউন্সিলের প্রস্তুতির কথা বললেও আদতে দলে এর কোনো লক্ষণ নেই।

তিন বছর পরপর বিএনপির সম্মেলন (কাউন্সিল) করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটি ইতোমধ্যে পার করেছে অর্ধযুগ বা ছয় বছর। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত এবং সরকারের অনুকম্পায় বর্তমানে জামিনে আছেন। পাশাপাশি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে পলাতক এবং তিনিও আদালত কর্তৃক দণ্ডিত। তাদের অনুপস্থিতিতে কোন প্রক্রিয়ায়, কার নেতৃত্বে কাউন্সিল হবে তা নিয়ে দলটির তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। সেসময় ৫০২ জনকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে ১৯টি পদ রাখা হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান থাকলেও বিএনপির তিন বছর মেয়াদি কেন্দ্রীয় কমিটি ইতোমধ্যে পার করেছে অর্ধযুগ বা ছয় বছর। দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ থাকলেও কাউন্সিল নিয়ে কোনও ভাবনা নেই দলটির হাইকমান্ডের। একই সঙ্গে বর্তমানে নির্বাহী কমিটির অর্ধশতাধিক পদও রয়েছে ফাঁকা। 

তবে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনো কারণে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত না হলে বর্তমান কমিটি দায়িত্ব পালন করতে পারবে, যা এখন চলছে। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল না হওয়ায় বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন নিজদলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পরও তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে।

তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, নিয়মিত কাউন্সিল হলে অনেকেই নেতা হওয়ার সুযোগ পেতেন। তারা বলছেন, পদ-পদবি না পেয়ে অনেকেই দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এভাবে চলতে থাকলে রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়া ছাড়া আর উপায় দেখছেন না তারা। নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, গত ছয় বছরে বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও নিষ্ক্রিয় নেতারা এখনও পদ আকড়ে আছেন। কিন্তু তারা আসলে ঘরে বসে আছেন। গত কয়েক বছর ধরেই তাদের ঠিক মতো দেখা পাওয়া যায় না। এসব নেতাকর্মীদের জন্যই বিএনপি কোনো আন্দোলন সফল করতে পারছে না। তাদের নিষ্ক্রিয়তা দলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। কমিটি থেকে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটির আকার করতে হবে ছোট। এ জন্য ছোট পরিসরে হলেও কাউন্সিল করার তাগিদ মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপি কাউন্সিলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় কোন্দল, অর্থ বাণিজ্য, হাইকমান্ডে সিন্ডিকেট ইস্যুসহ নানাদিক। একদিকে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অসুস্থ ও আদালত কর্তৃক দণ্ডিত। অন্যদিকে তার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আদালত কর্তৃক দণ্ডিত এবং বর্তমানে দেশে আসতে অনীহা উনার। এ অবস্থায় কাউন্সিল দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না। কেননা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের একটি পক্ষ নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার অনুসারী আরেক পক্ষ চাইছে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন মহাসচিব পদে নিজেদের লোককে বসাতে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলা এ অচলাবস্থার জন্য নেতাকর্মীরা দায়ী করছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে। মির্জা ফখরুল ও রিজভী দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিন ধরে না হওয়া এই কাউন্সিলের প্রভাব আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে বলে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭