ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

অশান্ত হয়ে উঠছে আন্ডারওয়ার্ল্ড?


প্রকাশ: 27/03/2022


Thumbnail

রাজধানীতে আবারও বেড়েছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদক পাচার, অস্ত্র চোরাচালান, খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই, যার সঙ্গে এই সমস্ত সন্ত্রাসীরা যুক্ত নয়। সময়ের সাথে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরাই হয়ে ওঠেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার। এদের অনুসারীরাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে রাজধানীসহ সারা দেশের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। কেউ বিদেশে বসে আবার কেউ জেলখানায় বসে নিয়ন্ত্রণ করছে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। মাঝে এই সন্ত্রাসীদের তৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করেছিলো সরকার। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশেই এইসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। সেই সাথে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও লাগাম টেনে ধরা হয়। তবে সম্প্রতি এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আবারও তৎপর হয়ে ওঠেছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব সন্ত্রাসীরা একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে প্রকাশ্যেই। সেই সাথে প্রতিপক্ষসহ জনসাধারণের মনেও ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে।

মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু কি আধিপত্য বিস্তার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণের শিকার? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে প্রকাশ্যে এলোপাথাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। সেই গুলিতে নিহত হন সরকারি বদরুন্নেসা কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতিও। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে টেন্ডার, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এমনকি পুরনো দ্বন্দ্বকে সামনে রেখে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারিগর বা নির্দেশদাতা হিসেবে নাম উঠে আসছে আত্মগোপনে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিপু হত্যাকাণ্ডের পেছনে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হাত থাকতে পারে। কারণ তাদের নিজে স্বার্থে আঘাত লাগলেই, তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রথম তালিকায় ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই ২৩ জনের মধ্যে ১৩ জনই দেশের বাইরে পলাতক। তাদের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি রয়েছে। বেশিরভাগই বিভিন্ন দেশে পলাতক জীবনযাপন করছে। কেউ রয়েছে কারাগারে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অনেকটা আড়ালে থেকে তারা রাজধানীর নিজস্ব জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে।

এদিকে, রোববার সকালে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ছুরিকাঘাতে দন্ত চিকিৎসক ডা. আহমেদ মাহী বুলবুল নিহত হয়েছেন। পুলিশের ধারণা, ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে তিনি মারা গেছেন। তবে এই ঘটনার নেপথ্যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রভাব বিস্তার একটি কারণ কিনা, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্র রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও ও যাত্রাবাড়ী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে এখনও সক্রিয় রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান। ২০০৩ সালে মালিবাগের একটি হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যা করে জিসান বাহিনী। তারপর দুবাইয়ে আত্মগোপনে যায় জিসান। আর তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক এখন রয়েছে ভারতে। টিপু হত্যার দিন সজীব ও মুসা নামে দুজনকে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মুসার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানাসহ একাধিক থানায় হত্যা মামলা রয়েছে। মুসা কিলিং মিশনেও পারদর্শী। এ ছাড়া আরেকজন হলো মগবাজারের সজীব। এই দুজনই জিসান ও মানিকের হয়ে কিলিং মিশনে কাজ করে।

২০১৩ সালে ২৯ জুলাই রাতে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর থমথমে ছিল আন্ডারওয়ার্ল্ড। দীর্ঘসময় এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা শান্ত থাকলেও এখন টিপু-প্রীতি হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এইসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশের বাইরে ও জেলে থেকেই ওই পরিচালনা করেন শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী। তাই সব মিলিয়ে এখন আবার প্রশ্ন উঠেছে যে, অশান্ত হয়ে উঠছে আন্ডারওয়ার্ল্ড?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭