ইনসাইড থট

দেশপ্রেম তৈরিতে শিক্ষার্থীদের গৌরবের ইতিহাস জানাতে হবে


প্রকাশ: 28/03/2022


Thumbnail

একটি আধুনিক রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থার একদম গোঁড়া থেকেই ওই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে পড়ানো হয়। এর ফলে কোমলমতি শিশুদের অন্তরে, মস্তিষ্কে তাদের ইতিহাস গাঁথা থাকে। যা সে সারাজীবন মনে রাখে। একদম গোঁড়া থেকে ইতিহাস পড়ানোর কারণেই শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে দেশের গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা, বীর সেনানীদের আত্মদান গেঁথে থাকে। তাদেরকে পড়ানো হয়, তাদের দেশ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ এবং এর প্রসঙ্গিকতার জন্য উদাহরণের পর উদাহরণও টানা হয়। পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর আমরা উদযাপন করলাম ঠিকই, কিন্তু একদম গোঁড়া থেকে সত্যিকারের ইতিহাস পড়ানো বলতে যা বুঝায়, তা আমরা এখনও চালু করতে পারিনি। বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ার কল্যাণে এমনকি বাংলা ইনসাইডারের মাধ্যমেও আমরা জানতে পেরেছি যে, পাঠ্য বইয়ে ভুল ইতিহাস লেখা হয়েছে, সংশোধন দরকার। ফলে আবার পয়সা খরচ। আমার কাছে পাঠ্য বইয়ে এরকম ভুলে ভরা ইতিহাসের অর্থ হচ্ছে যারা স্বাধীনতার ইতিহাসসহ দেশের ইতিহাস সার্বিকভাবে লেখেন, তারা এটাকে খুব গুরুত্ব দেন না। মোটামুটিভাবে লেখেন। মনে করেন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর বেশি কিছু জানতে হবে না। ফলে কোনো রকমভাবে লেখা হয়। কিন্তু ভুলভাল ইতিহাস জেনে তো একটি জাতি এগুতে পারে না। সুতরাং আমার মতে, আমাদের যত দ্রুত সম্ভব পারলে এক বছরের মধ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থার একদম গোঁড়া থেকেই সঠিক ইতিহাস লিখতে হবে এবং প্রাথমিক থেকে শুরু করে অন্ততপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দেশের সঠিক ইতিহাস শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। যাতে তারা যেকোনো জায়গায় দেশের পতাকা দেখলেই মন থেকে স্যালুট দেয়, সম্মান প্রদর্শন করে। এই ভেবে গর্ব অনুভব করে যে, আমরা এই দেশের অধিবাসী। কিন্তু এখন এই কাজটি কে করবেন? অতীব জরুরি এই কাজটি যদি তারাতারি করা না হয়, তাহলে সত্যিকারে যারা ইতিহাস জানেন এবং বুঝেন বা এখনও ইতিহাস চর্চা করে যাচ্ছেন, তারা অনেকেই বেশিদিন আর থাকবেন না। তাহলে কিন্তু সঠিক ইতিহাসও লেখা হবে না। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা কুলায়, তাই আমি এখন উপস্থাপন করবো। এটিই যে শিরোধার্য বা শোনতে হবে, এমনটি নয়। বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া ও সকলের নজরে আনার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবেই আমি এটি উপস্থাপন করতে চাই। 

আমার মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন একজন সত্যিকারের ইতিহাস বিশারদ। যেহেতু তিনি শিক্ষকতা এবং গবেষণা করেন, অনেক টাকা পয়সার মালিকও না এবং বিভিন্ন সময়ে অন্যায়ভাবে তার উপর অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। অত্যাচারের একমাত্র কারণ তিনি সঠিক ইতিহাস বুঝেন ও চর্চা করেন। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি তিনি ইতিহাস বুঝেন। তাকে সত্যিকারের ইতিহাস প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া যায়। আরেকজনও আছেন, যিনি বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘন্টা নিমগ্ন থাকেন। তিনি হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ড. সরোয়ার আলী। এছাড়া আমার জানা মতে নতুন প্রজন্ম থেকে আরেকজন আছেন সৈয়দ বোরহান কবীর। সৈয়দ বোরহান কবীরের নামটি আমি নিজে জেনে বলছি। তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেন এবং সত্যিকারের ইতিহাস জানেন ও বুঝেন। একমাত্র শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন অফিস করেন। এ কারণে শুক্রবারে সাধারণত তাকে আমি বিরক্ত করতে চাই না। কেননা অন্য ছয়দিন তিনি অসম্ভব খাটুনি খাটেন। মেঝে বাদে বোরহান কবীরের অফিসের সব জায়গায় খালি বই আর বই। তবে অন্যান্যদের মতো সাজিয়ে তাকে তুলে রাখা না, প্রত্যেকটি বই তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন আলাপে দেখা যায়, তিনি সেই বই সম্বন্ধে জানেন। দেশের মাত্র দুইজন লোককে দেখেছি, নতুন বই বের হওয়ার সাথে সাথেই তাদের সংগ্রহে বইটি চলে আসে। একজন হচ্ছেন সৈয়দ বোরহান কবীর। আরেকজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। গুরুত্বপূর্ণ নতুন বইয়ের প্রতি এই দুইজনেরই একটি গভীর আকর্ষণ ও ঝোঁক আছে। এমনটি নয় যে তারা বিরাট টাকার মালিক, কিন্তু সত্যিকারের ইতিহাস নিয়ে তাদের আগ্রহ আছে। তারা প্রত্যেকেই ইতিহাসের দায় অনুভব করেন। এইসব কারণে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সৈয়দ বোরহান কবীর যেভাবে ইতিহাসের বিষয়ে বিভিন্ন যুক্তি ও তথ্য দিতে পারবেন, অন্য কেউ পারবেন না। সুতরাং আমার মতে  মুনতাসীর মামুন, ড. সরোয়ার আলী এবং সৈয়দ বোরহান করীর, এই তিনজনকে নিয়ে একটি কমিটি করা যায়।

তাদের দায়িত্বের কথা পুনরায় উল্লেখ করতে চাই। কেননা কিছু কথা বার বার বলতে হয়। না হওয়া পর্যন্ত বলে যেতেই হয়। সেটি হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই দেশের সঠিক ইতিহাস লেখা এবং তা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো। শিক্ষার্থীদের জানা দরকার তাদের দেশ সর্বশ্রেষ্ঠ। এ সর্বশ্রেষ্ঠ দেশটি অর্জনে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ও নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ লোক তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। অনেক মা-বোন তাদের ইজ্জত-সম্ভ্রম হারিয়েছেন। অনেক আত্বত্যাগ ও প্রাণ বলিদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এর আগে ও পরে অবশ্য অনেক ইতিহাস আছে। এই সাধারণ, সত্য, নির্ভেজাল ইতিহাস প্রণয়নে জন্য দুইশ পৃষ্ঠার মতো একটি বই হবে এবং সব শিক্ষার্থীদের বইটি পড়া মোটামুটিভাবে বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে। এভাবে প্রাথমিক থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যায় পর্যান্ত পড়ানো হবে। হয়তো স্তরে স্তরে জটিল থেকে জটিল জিনিসগুলো বিভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরা হবে। এই তিনজনকে দিয়ে যদি অন্তত প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বই প্রণয়ন করা যায়, তাহলে বাকি ইতিহাসও আস্তে আস্তে আসবে। কথায় আছে, কান টানলে মাথা আসে। এর সাথে কিছু মৌখিক ইতিহাসও লাগবে। এটা হয়তো কোথাও লেখা নেই। তবে এই মৌখিক ইতিহাস কে জানেন? 

বর্তমানে যারা আছেন তাদের মধ্যে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার কাছে থাকার জন্যসহ বিভিন্ন কারণে আমরা সকলেই জানি যে, তিনি অনেক ইতিহাস জানেন। তিনি কিছু বই লিখলেও নতুন অনেক কিছু জানা যাবে। তবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে তার পক্ষে সবকিছু লেখা তো সম্ভব না। এই মৌখিক ইতিহাস প্রধানমন্ত্রীর সাথে যারা কাজ করেন, তাদের অনেকটা সুযোগ হয় জানার। এই মূহুর্তে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব হচ্ছেন আহমেদ কায়কাউস। কায়কাউসের কথা বললাম এই কারণে যে, তার সাথে যখন আমার আলাপ হয়, আমি দেখেছি সে মৌখিক ইতিহাস জানে। কিন্তু সে অত্যন্ত ব্যস্ত একজন লোক। স্বাভাবিকভাবেই তার সাথে বসে গল্প করার মতো পরিবেশও নেই। তার সে সময়ও নেই এবং তার সময় নষ্ট করাও অন্যায়। কিন্তু এই যে তিনজনের কমিটি, তারা যদি মাসে একবার কিংবা দুই মাসে একবার কায়কাউসের সাথে বসেন এবং কায়কাউস সাহেব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যে মৌখিক ইতিহাস জেনেছেন, সেটা এই কমিটিকে জানাতে পারেন। কমিটির পছন্দ হলে তাদের বইয়ে সেটা যোগ করবেন। অবশ্য যদি এটা ইতিহাসের অংশ হওয়ার যোগ্যতা রাখে তখন। আর না হলে হবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি অবশ্যই সাহায্য করতে পারেন। আমার মূল বক্তব্য এটাই যে, বাংলা ইনসাইডারে যে কয়জন সাংবাদিক আছেন, তারা বয়স অনুযায়ী অত্যন্ত পরিপক্ক লেখা লেখেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস বিনির্মাণে তাদের অবদান স্বীকার করতে হবে। আমি নিয়মিতভাবে বাংলা ইনসাইডার পড়ি এবং দেখি তারা কোনো রকম ধ্রুম্রজাল সৃষ্টি করেন না। যুক্তি দিয়ে ইতিহাসের বিভিন্ন অংশকে সবার সামনে উপস্থাপন করেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বাংলা ইনসাইডারের যে লক্ষ লক্ষ পাঠক, তারা সবাই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। সাধারণ লোকজন যারা বাসে চড়েন, রিক্সায় উঠেন, কৃষিকাজ করেন, তারা কিন্তু বাংলা ইনসাইডার পড়তে পারেন না। বাংলা ইনসাইডার কর্তৃপক্ষেরও ভাবতে হবে, কি করে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছানো যায়। আমি একটি কথা বলেই লেখাটি শেষ করতে চাই। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করার মতো ইতিহাস এখনও ঠিকমতো লেখা হয়নি। এটি লেখার জন্য আমি যে তিন জনের নাম বলেছি, তাদেরকে দিয়ে কমিটি করে এবং মৌখিক ইতিহাসের জন্য কাউকাউসদেরকে নিয়ে বছর খানেক চেষ্টা করে যদি একটি সত্যিকারের ইতিহাস খাঁড়া করা যায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাতে লাভবান হবে এবং সঠিক ইতিহাস লোকে জানতে পারবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭