ইনসাইড টক

‘বাংলাদেশ যানজট থেকে শুরু করে পরিবেশ দূষণেও প্রথম হয়ে যাচ্ছে’


প্রকাশ: 28/03/2022


Thumbnail

ডায়রিয়ার প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ডা. কামরুল হাসান খান বলেছেন, ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরমের বিষয়টি কাজ করে। গরমের সময় বাচ্চাদের শরীর থেকে যে ঘাম নিঃসৃত হয়, এটি শরীরে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি একটি বিষয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে শীতের সময়ে রোগ-জীবাণুগুলো নিষ্ক্রিয় থাকলেও গরমের সময়ে সতেজ হয়ে যায়। তখন যদি সঠিকভাবে বাচ্চাদের খাবার-দাবার যদি পরিষ্কার না রাখা হয়, সেই ক্ষেত্রে খুব সহজেই ডায়রিয়ার আক্রান্ত হতে পারে।

ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, ঢাকার বাতাসের দূষণ ও এর ক্ষতিকর প্রভাবসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. অলিউল ইসলাম। 

ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটি বড় বিষয়। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো আরো সচেতনভাবে এটি করতে হবে। হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখার অংশ হিসাবে একদিন দেখি একটা বাচ্চা সুস্থ আছে। কিন্তু একটু ঘুরে এসেই দেখি বাচ্চাটা মারা গেল। সেই কারণে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। 

তিনি বলেন, ডায়রিয়ার চিকিৎসা কঠিন কিছু নয়। বাচ্চার কি ধরণের ডায়রিয়া হয়েছে, সেটি একটু বুঝে নিতে হবে। যেসব শিশু মুখে স্যালাইন খেতে পারে না, তাদের জন্য রক্তনালী দিয়ে স্যালাইন দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে এটি যদি সময়মতো দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু বাচ্চা কিংবা প্রাপ্ত বয়স্ক, সবাই রক্ষা পেয়ে যায়। ডায়রিয়ার কারণে শরীরে জল স্বল্পতা যেটি হয়, সেটি কিন্তু পানি স্বল্পতা। এটি কিন্তু নানা ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করে। প্রত্যেকটি জায়গায় এটি আঘাত করে। এ কারণে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে কিন্তু গরম পড়ে গেছে। অনেক সময় এটি বেশি হয়। এর নানা কারণও অবশ্য আছে।  সব কারণ মিলিয়ে আমাদের কথা হচ্ছে বাচ্চার সব কিছু, তার পরিবেশ, তার খাবার-দাবার সবকিছুর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় অনেকক্ষণ খাবার বাহিরে রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। কেননা ওইসব খাবারে জীবাণু প্রবেশ করে ফেলে। ফলে শিশুর খাবার, তার পরিবেশ, সে যে ফিডারে দুধ খায় তা পরিষ্কার রাখতে হবে। অর্থাৎ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যদি কখনও ডায়রিয়া হয়, দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। প্রথমে তাকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শুধু শিশু না, সব বয়সের লোকদেরই স্যালাইন খেতে হবে। স্যালাইন একটি যুগান্তকারী ওষুধ ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে । আমরা দেখেছি ডায়রিয়া হওয়ার সাথে সাথে স্যালাইন খাইয়ে দিলে সাথে সাথে এটি ফল দিতে শুরু করে। কিন্তু রোগী যদি বেশিক্ষণ পানি স্বল্পতায় থাকে, তাহলে কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। এমনকি অনেক সময় রোগী মৃত্যুবরণও করেন। 

ঢাকার বিষাক্ত বাতাস এবং এর ঝুঁকি নিয়ে ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, বাংলাদেশ এখন যানজট থেকে শুরু করে পরিবেশ দূষণ, সব খানেই প্রথম হয়ে যাচ্ছে। যেমন শব্দ দূষণে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা শহরে যে পরিমাণ ধুলাবালি উড়ছে, এতে নানা রকমের ক্ষতিকারক জীবাণু রয়েছে। এর ফলে শহরের মানুষ সবচেয়ে বেশি যে ঝুঁকিতে রয়েছে, তা হল ফুসফুসের রোগের। ফুসফুসের রোগ কিন্তু আগের তুলনায় অনেক পরিমাণ বেড়ে গেছে বাংলাদেশে। করোনার কারণে এই প্রকটটা কিন্তু খুব ভালোভাবে চোখে পড়েছে। এর জন্যই আমরা নিঃশ্বাসের ব্যায়ামের কথা বার বার বলেছি। যাদের ফুসফুস দুর্বল ছিলো তারাই কিন্তু করোনায় বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের ফুসফুস শক্তিশালী ছিলো তাদের কিন্তু করোনা ঘায়েল করতে পারেনি। 

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যে ধুলাবালির বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ফলে শুধু ফুসফুসই আক্রান্ত হয় না, চর্ম রোগও দেখা দেয়। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে শ্রমজীবী মানুষের দিকে। যারা সারাদিন বাহিরে ধুলাবালিতে পরিশ্রম করছেন। তাদের কিন্তু এই ধুলাবালিতে শরীরের ঘাম বের হওয়ার জায়গা গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত শরীর পরিষ্কার বা গোসল করা না হলে এই ধুলাবালি জমে শরীরে নানারকম চর্ম রোগ দেখা দেয়। আমাদের এই শ্রমজীবী মানুষগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ যাদের অর্থের সমস্যা নেই তারা কিন্তু যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু ওরা পারে না। শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছনতার বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন দেখভাল করে থাকে। তবে আমাদের দেশে দেখা যায় এই কাজগুলো সিটি কর্পোরেশন একা একা করতে পারে না। তাদের সরকারের সাথে মিলে কাজ করতে হয়। 

তিনি আরও বলেন, সারা দুনিয়াতে বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে সিটি কর্পোরেশনগুলো কিন্তু আলাদা একটা সরকার, নগর সরকার। এটা যতদিন না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে সমস্যাগুলো সমাধান করা কঠিন হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সমন্বয়হীনতার অভাব। আজকে ড্রেন কাটছে, তো কালকে গ্যাসের পাইপ বসানোর জন্য কাটাকাটির কাজ চলছে। এটি একটি বড় কারণ। এখানে যদি সবাই সমন্বয় করে কাজ হতো তবে এই ধুলোবালির রাজ্য তৈরি হত না। তার উপর কাজগুলোতে দুর্নীতিও রয়েছে। যার ফলে বেশ সময়ক্ষেপণও হচ্ছে। এইসব কিছু মিলিয়ে এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যে আমাদের শহরগুলোতে সারা বছর ধরেই খোঁড়াখুঁড়ির কাজগুলো চলতেই থাকে, আর এর ফলে আমরা এই বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭