সাইক্লিংয়ে এক নারী স্বাধীনতার গল্প

'মেয়ে হয়েও আবার সাইক্লিং  করবে !', 'ছেলেদের সাথে তাল মিলাবে কি করে?' এমনই সব কটু কথা প্রতিনিয়তই শুনতে হয় রাজধানীর সাইকেলিষ্ট তাসলিমাকে। 

স্বাধীনতার ৫১ বছরে সময় হয়েছে আধুনিক, পাল্টেছে জীবন যাত্রার ধরন। এখন ছেলে-মেয়ে উভয় চাকরি করছে, দায়িত্ব নিচ্ছে পরিবারের এছাড়াও অনেক কর্মক্ষেত্রে এখন মেয়েদের উপস্থিতি বেশ ভালো। যেটা গত কয়েক বছর আগেও ছিলো না। বলা হয় ছেলে-মেয়ের সমান অধীকার। এরকমই একটা স্বাধীন দেশ সবাই প্রত্যাশা করে। তবে এখনো মেয়েদের ছেলেদের থেকে আলাদা এবং দুর্বল করে উপস্থাপন করে দেখা হয় বেশ কিছু ক্ষেত্রেই। মেয়েদের কর্ম ক্ষেত্র থেকে শুরু করে বেশিরভাগ জায়গায়।

মেয়েরা একটু ভিন্ন কিছু করতে চাইলেই সেটা নিয়ে হয় আলোচনা-সমালোচনা। একটা মেয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, রাস্তায় পাশ দিয়ে যাওয়া বাস থেকে দুটো অরুচিকর কথা শুনিয়ে দিচ্ছে।  এর মানে কি বলতে পারবেন?  এর মানে একটাই স্বাধীন দেশে মেয়েরা এখনো স্বাধীন নয়। কিন্তু তাই বলে মেয়েরা থেমে গিয়েছে বা তাদের কাজ থেকে পিছিয়ে এসেছে?

 

একদমই না,  এখনকার সময়ের মেয়েরা লড়তে জানে,  লড়াই করে টিকে থাকতে জানে,  দুটো অরুচিকর কথা পালটা জবাব দিতে জানে। 

রং পুরের মেয়ে তাসলিমার কথাই ধরা যাক। সাইক্লিং করছে প্রায় ৩ বছর হলো। পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁর শখের সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে নিয়মিতই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদেরই বেশি আদিপত্য দেখা যায়। এর মধ্যে মেয়েরা যে সাইকেলং করছে না তা নয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই সাইক্লিং করতে গিয়ে তাকে শুনতে হয়েছে সমাজের সাধারন মানুষের অনেক কথা। তাই তাঁর মতে বাংলাদেশে মেয়েরা এখনো স্বাধীন না। কিন্তু তাঁর মধ্যে রয়েছে উস্যম আর চেষ্টা। আর এই চেষ্টা থেকেই গত ২৫ মার্চ সাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাঁর কয়েকজন সঙ্গীদের নিয়ে ২৪ ঘন্টায় সাইকেল চালিয়ে ৩০০ কিলোমিটার পারি দেওয়ার মত এক  চ্যালেঞ্জের পরিকল্পনা করে। 

গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় ৪ জনের একটি টিম নিয়ে ঢাকা ভিসি চত্বর থেকে শুরু হয় তাদের এই যাত্রা। তাসলিমা ছাড়াও বাকিরা হলেন মিসাম, সিজান এবং ইমরান। তাদের পরিকল্পনায় যাত্রায় রুটটা ছিলো ঢাক-কমিল্লা-ফেনী। একই পথে তাদের ফিরে আসে। তবে যাত্রা পথে কয়েকটি স্থানে তাদের বিরতি নিতে হয়েছে রাতের খাবার, দুপুরের খাবার আর বিশ্রামের জন্য। এই যাত্রায় তারা যথাক্রমে কাচপুর, কমিল্লা শহর আর চৌদ্দগ্রামে বিরতি নেয়। ফেনীতে খাওয়া-দাওয়া পর্ব সেরে ঢাকা ফিরে আসার পূর্বে ঘন্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়ে নেয় তারা। ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্গম পথ পারি দিয়ে অবশেষে রাত ১০ টায় তারা ঢাকা ফিরে। তাদের এই পুরো যাত্রা পথে মোট ১৬ ঘন্টা সাইকেল চালায় তারা। তবে সব মিলিয়ে সময় নেয় একদিনেরও বেশি। 

পরিকল্পিত এ যাত্রা শেষ করে তাসলিমা ছিলেন দারুন উচ্ছসিত। যাত্রা সঙ্গীদের সহযোগীতা আর প্রবল ইচ্ছা শক্তি না থাকলে এই যাত্রা কখনোই সম্ভব হহতো না বলেও বাংলা ইনসাইডারকে  জানান তিনি। 

সমান অধিকারের সমাজে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নারীরা আজও উপেক্ষিত। তবে তাসলিমার মত উদ্যমী তরুনীরাই দেখাবে সামনে বিজয়ের পথ, এমনটিই আশা নারী সমাজের।