ইনসাইড টক

‘রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সত্যিকারের সমঝোতা দরকার’


প্রকাশ: 29/03/2022


Thumbnail

ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার বৈঠক প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার বৈঠকের অনেক কারণ থাকতে পারে। একটি হলো খুব তাড়াতাড়ি এ সংকট শেষ হয়ে যাক বা একটি সমাধান হোক, এটি আমেরিকা না-ও চাইতে পারে। কারণ জো বাইডেনের মধ্যবর্তী নির্বাচন এ বছরের নভেম্বরে। সে স্বাভাবিকভাবেই চেষ্টা করবে এ সংকটকে নভেম্বর পর্যন্ত টানতে। কারণ আমেরিকার মিডিয়া এখন প্রচার করছে যে, রাশিয়া পারছে না। ইউক্রেন প্রতিহত করতে পারছে। অন্যদিকে রাশিয়ার দিক থেকে যেটি হচ্ছে সেটি হলো, রাশিয়া চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষের ক্ষয়-ক্ষতি যেন কম হয়। এখন রাশিয়া কিভাবে কি করবে, সেটিও দেখা দরকার। রাশিয়া বলছে যে, ইউক্রেনের সেনা ঘাঁটি তারা দখল করে নিয়েছে। তারপরে কি করবে, সেটি এখন দেখতে হবে।

ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার বৈঠক, আফ্রিকার ১৭ টি দেশের জাতিসংঘের ভোটদানে বিরত থাকা, রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান সংঘাত, সমঝোতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।

ইউক্রেনের পক্ষে বাংলাদেশের ভোটের প্রসঙ্গে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এবার ভোটদানে বিরত থাকেনি। কিন্তু প্রথমবারের বিরত থাকার সাথে দ্বিতীয়বার পক্ষে থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। অন্তত আমার কাছে মনে হয়েছে। বাংলাদেশ ভোট দিয়েছে মানবিক কারণে। কারণ প্রথমবার ভোটাভুটিতে রাশিয়াকে যেভাবে সরাসরি আক্রমণ করে করা হয়েছিল, দ্বিতীয় ভোটাভুটিতে কিন্তু এমনটি হয়নি। দ্বিতীয় ভোটাভুটির বিষয়টি ছিল মূলত ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণের বিষয়ে। একটি মানবিক সঙ্কট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দেয়।

আফ্রিকার ১৭ টি দেশের ভোটদানে বিরত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটদানে বিরত থাকার অর্থ তো এটা নয় যে, তারা রাশিয়ার পক্ষে। আমার কাছে এটি সহজ সরলীকরণ মনে হয়। এটা বরং তারা বলতে চাচ্ছে যে, এটি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বিষয়। তাদের বসার মাধ্যমেই সমাধান আসবে এবং এভাবেই সমাধান দরকার। বিশেষ করে জাতিসংঘে প্রথম যে ভোটাভুটি হলো সেখানে যারা ভোটদানে বিরত ছিল, তাদের মধ্যে চীন তো আছেই, সাথে ভারত ও বাংলাদেশও ছিল। পাশাপাশি পাকিস্তানও ছিল। আমার মনে হয় না সবগুলো দেশ একেবারে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সত্যিকারের সমঝোতা দরকার। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে শেষ পর্যন্ত রাশিয়া এবং ইউক্রেনকেই ভুগতে হবে। কারণ তারা প্রতিবেশী দেশ। অন্যরা যতই হইচই করুক না কেন, রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন কেউই তো প্রতিবেশী পরিবর্তন করতে পারবে না। বাইরের কেউ কিছু করতে পারবে না। তারা যখন মিলিত হবে, সমঝোতায় আসবে তখনই সমাধান হবে। আমাদের নজর রাখা দরকার যে, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার বৈঠকগুলোতে  কি ধরণের সিদ্ধান্ত আসে, সেটার উপরই নির্ভর করবে এই যুদ্ধ কতদিন থাকবে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে এখনও আমরা সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখছি না।

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় সমঝোতার মধ্যে একটি বড় বিষয় থাকবে ন্যাটোর সম্প্রসারণ। কারণ, আমেরিকা বা ইউরোপের হয়তো একজন দুইজন দেখাতে চাচ্ছে ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ রাশিয়া আগ্রাসন চালাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ইউরোপে আমেরিকার অনেক মিলিটারি বেইজ আছে। জার্মানিতেই আছে ১১৯টির মতো মিলিটারি বেইজ। এখন প্রশ্ন দুইদিক থেকেই উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় থেকেই এটি শুরু হয়েছে। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিল যে এতগুলো মিলিটারি বেইজ রাখা হয় এবং এর যে খরচ হয় সেটি তো আমেরিকা বহন করে। তারা প্রশ্ন করেছে, ইউরোপ কেন সেটি বহন করবে না। এখন ইউরোপ চাচ্ছে না আমেরিকার মিলিটারি বেইজকে সে পয়সা দিক, স্বাভাবিকভাবে সে এটা চাচ্ছে না। এখন সেই জায়গায় সমস্যা দাঁড়িয়েছে।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এ অবস্থায় জেলেনেস্কি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পশ্চিমা দেশের বিরুদ্ধে যেতে পারবে কি না, এটি একটি বড় প্রশ্ন। কারণ সে যদি এখন রাশিয়ার সাথে সমঝোতায় যায়, তাহলে ভবিষ্যতে তার যে সমস্যা হবে, সেটি সে ভালো করেই জানে। সে এখন একটি জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। তবে বিষয়টি যতই জটিল হউক না কেন, শেষ বিচারে মনে রাখতে হবে ইউক্রেন আর রাশিয়ার জনগণ আজ নাহয় কাল একসাথে বসতেই হবে। কারণ তারা প্রতিবেশী। বন্ধু অথবা শত্রু পাল্টানো যায়। কিন্তু প্রতিবেশী পাল্টানো সম্ভব না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭