ইনসাইড থট

হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও-‘না‘: শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সাধারণ মানুষের আস্থা


প্রকাশ: 31/03/2022


Thumbnail

দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত সোমবার (২৮ মার্চ, ২০২২) বাম গণতান্ত্রিক জোট সারাদেশে অর্ধবেলা হরতাল আহ্বান করেছিল। গত মঙ্গলবার (২৯ মার্চ, ২০২২) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য আরও দাবিতে ৩১ মার্চ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। হরতাল, সমাবেশ বা আন্দোলনে ডাক দেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। এখানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতাল ডাকা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য একটি আপেক্ষিক বিষয়। গ্রামে একটি গল্প প্রচলন রয়েছে। জনৈক ভদ্রলোকের ইলিশ মাছ খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে। বাজারে উনার পছন্দের ইলিশ মাছও খুব সস্তা। কিন্তু ভদ্রলোকের উপার্জন কম। ইলিশ সস্তা হলেও ক্রয় করার মত প্রয়োজনীয় টাকা পকেটে নাই। এক্ষেত্রে ঐ ভদ্রলোকের নিকট ইলিশ মাছের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু যখন বাজারে ইলিশ মাছের মূল্য অনেক বেশি, কিন্তু ক্রেতার উপার্জন বেশি, ইলিশ মাছের দামের তুলনায় পকেটের টাকার পরিমাণ বেশি। সেইক্ষেত্রে ঐ ভদ্রলোকের নিকট ইলিশ মাছ সস্তা। সুতরাং দ্রব্যমূল্য বিবেচনা করতে হবে সাধারণ মানুষের আয়-উপার্জনের উপর ভিত্তি করে। 

‘আন্তর্জাতিক লেবার আইন‘ অনুযায়ী একজন দিনমজুরের আয় হবে ঐ এলাকায় সাড়ে চার কেজি চাল বা আটার মূল্যমানের সমান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পূর্বে একজন দিনমজুরের দৈনিক আয় ছিল ১০০-১৫০ টাকা। তখন প্রতি কেজি চাউলের মূল্য ছিল ৪০ টাকা, অর্থ্যাৎ দিনের মোট আয় দিয়ে ২.৫৪ কেজি চাউল ক্রয় করা যেত। এক্ষেত্রে ঐ দিনমজুরের নিকট দ্রব্যমূল্য বেশি, প্রয়োজনের তুলনায় উপার্জন কম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে একজন রিকশাচালকের দৈনিক আয় কমবেশি ৮০০ টাকা। বর্তমান বাজারে চাউলের সর্বোচ্চ মূল্য যদি প্রতি কেজি ৮০ টাকা ধরা হয়, একজন রিকশাচালক দৈনন্দিন আয়ের টাকা দিয়ে ১০ কেজি চাউল ক্রয় করতে পারে। একজন সাধারণ দিনমজুরের আয় ৬০০-৭০০ টাকা। ঐ দিনমজুরের দৈনিক আয়ের টাকা দিয়ে ৭.৫৮.৫ কেজি চাউল পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে চাউলের দাম প্রতি কেজি ৮০ টাকা হইলেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বলা যায় না। চাউল বা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য যাই হোক না কেন, তা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে দিনমজুরেরা দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের পর তাঁদের বৃদ্ধ মা-বাবা, স্নেহের সন্তানের জন্য দেশী-বিদেশী নানাপ্রকার সুস্বাদু ফলসহ নানা বিলাসী দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করছে, অর্থ্যাৎ ক্রয়ের সক্ষমতা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারী চাকুরীজীবীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই রিক্সাওয়ালা, দিনমজুরসহ সকল স্তরের  মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে। সাধারণ মানুষ ক্রয় ক্ষমতা রয়েছে বিধায়ই দেশী-বিদেশী ফলসমূহ শহরের অভিজাত এলাকার সীমানা পেরিয়ে  রাজধানীর অলিগলিতে, গ্রামের হাট-বাজারে রিক্সা-ভ্যানে বিক্রয় হচ্ছে, যা চোখে পরার মত। 

পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী পূর্ব ঘোষিত হরতাল পালনে সকাল ৬টার দিকে হরতালের সমর্থনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দল সমূহ এবং বামপন্থী ছাত্রদের সংগঠনের জোট প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিলেও, অপেক্ষমান যানবাহনের ভীড়ে লোকের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো ছিল না। কারণ এই হরতালে জনগণের কোন সমর্থন ছিল না। আন্দোলনে সাড়া দেওয়া বা না দেওয়া জনগনের অধিকার। রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ রিক্সা চালকদের হাসির খোরাক জুগিয়েছিল বিষয়টি। হরতালের পরেরদিন (২৯ মার্চ ২০২২) একটি দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম ছিল ‘বাম জোটের ডাকা হরতালে রাজধানীতে যানজট’। অর্থ্যাৎ জনগণ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। সাধারণ মানুষ নিজ নিজ গাড়ী নিয়ে বা বিভিন্ন ধরনের বাহন নিয়ে নিজ নিজ কাজে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী হরতাল পালন করতে গিয়ে পল্টন মোড়ে রাস্তার এক পাশে জড়ো হয়ে জোট নেতারা বক্তব্য দিতে শুরু করলে, ট্রাফিক পুলিশ  জনসাধারণের স্বার্থে রাস্তার যানজট নিরসনে উনাদের সরে যেতে বললে ‘প্রায় মিনিট আটেক‘ পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বলেছে, সরে যেতে বললে হরতালকারীরা কয়েকটি ইটের টুকরা নিক্ষেপ করলে পুলিশ ধাওয়া দেয়‘। আমি মনে করি, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জন্য এই ইটের টুকরা নিক্ষেপ ও পুলিশের ধাওয়ার দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে লাগাতার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের নামে জালাও-পোড়াও সহ নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিল। পেট্রোল বোমা মেরে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সন্ত্রাসীরা হঠাৎ চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের পর পালিয়ে যেত, কিন্তু পরক্ষনেই সেই দৃশ্য ভিডিও রেকর্ডিং ও স্থিরচিত্র ধারন করার জন্য ক্যামেরাম্যান চলে আসতো এবং মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হতো। এটা অবশ্যই ফটোসাংবাদিকতার দক্ষতার পরিচয় দেয় সত্য, কিন্তু ঐ রাতে ঐ স্থানে হঠাৎ করে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারা হবে ক্যামেরাম্যানরা কিভাবে জানতে পারলেন? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙ্গালী জাতি আন্দোলনের মাধ্যমেই পাকিস্তানকে বিতারিত করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরাচার ও পাকিস্তানের দোসর বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই আওয়ামীলীগ বিজয় অর্জন করেছে। জনগনের ভোটে সরকার গঠন করে দেশসেবা করার দায়িত্ব নিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত বামজোট আহুত হরতালের চিত্র দেখে মনে হয়, ওরা ২০১৪ এর মত সন্ত্রাসী কায়দায় সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করার পরিকল্পনা করেছিল। ব্যর্থ হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিটের জন্য আন্দোলনের নাটক মঞ্চস্থ করে বিএনপি জামাতের কায়দায় ছবি তোলার আয়োজন  করে দিয়েছে।

সাধারণ মানুষ হরতালে ‘না‘ বলেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষের আয় বেড়েছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষ খেয়ে-পরে সুখে আছে। সকল স্তরের মানুষ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চয়তা পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। রাজপথে ট্রাফিক সিগন্যালে কিছু ভিক্ষুক দেখা যায়। কিন্তু বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী ছাড়া ওদের বেশিরভাগেরই ভিক্ষাবৃত্তি অভাবের তাড়নায় নয়,  অনেকেই পেশাদার ভিক্ষুক। ওদের কারও গায়ে ছেড়া কাপড় নেই। চেহারায় মলিনতা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখলে পাওয়া যাবে ওদের স্বচ্ছলতার চিত্র।

‘আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প‘এর মাধ্যমে গ্রামের চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছে শেখ হাসিনা। গৃহহীন মানুষের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। গ্রামেগঞ্জে কোথাও এখন আর কুঁড়েঘর দেখা যায় না। গ্রামেগঞ্জে কোথাও একজন মানুষও পাওয়া যাবে না, যার পায়ে জুতা নেই। পরনে ছেঁড়া কাপড় রয়েছে এমন একজন মানুষও খুজে পাওয়া যায় না। দেশের শতভাগ (৯৯.৮৫) মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। গ্রামবাংলার সকল বাড়ীতেই পাকা সেনিটারী শৌচাগার রয়েছে। বেশিরভাগ বাড়ীতেই যোগাযোগের জন্য মটরবাইক বা মটরসাইকেলসহ শহরের সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতাল ডাকা হলেও, এই কর্মসূচি জনদুর্ভোগে পরিনত হয়েছে। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন আমদানি শুল্ক হ্রাস, টিসিবির পক্ষ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে তিন হাজার ডিলারের মাধ্যমে নায্যমূল্যে ট্রাক সেল চলমান রয়েছে। রমজান উপলক্ষে সারা দেশের এক কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে রমজান শুরুর আগে ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি,  দুই হাজার ১৩টি কেন্দ্রে ওএমএসের মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিক্রি করাসহ বাজারে  নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলসহ পেঁয়াজ এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। হরতালের আগেই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমেছে। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, রোজার মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখা হবে।

কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী আসন্ন রমজানে অতিরিক্ত মুনাফা করার হীন উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি বা মজুদদারী করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ষড়যন্ত্র করছে। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজিও সাময়িকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ বিধায় সরকার এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, মজুদদারী ও চাঁদাবাজি  রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়িয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম বাজারে পণ্যের দাম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

তারপরেও ধন্যবাদ না দিয়ে হরতাল ডাকা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন আর হরতাল করে ‘কর্মঘণ্টা‘ অপচয় করতে রাজি না। দেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি, সামাজিক সমর্থন, স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা, সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা, উদারতা, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক কর্তৃক তৈরী ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস‘ রিপোর্টে বাংলাদেশ সুখী দেশ হিসেবে গত বছরের তুলনায় সাত ধাপ এগিয়ে ৯৪তম অবস্থানে পৌঁছেছে। ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান ১৩৬তম। মানুষের খুশির পরিমাণ মূল্যায়নের সাথে সাথে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করেই তৈরি হয় এই সূচক।

বাংলাদেশের মানুষ এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পক্ষে। সাধারণ মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করছে। সাধারণ মানুষ জ্বালাও-পোড়াও এর হরতাল বা আন্দোলনকে প্রত্যাখান করেছে। শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতিকে স্বাগত জানিয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭