ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসেব: কঠোর অবস্থানে সরকার


প্রকাশ: 31/03/2022


Thumbnail

সাত মাস আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসেব দেওয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তারা তাদের সম্পদের হিসাব দেননি। বরং এ নিয়ে নানারকম গড়িমসি তারা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে সরকার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছে। ইতিমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আচরণবিধি-১৯৭৯ সংশোধন করা হয়েছে এবং এই সংশোধনীটি খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সংশোধিত হওয়ার পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসেব প্রদান করার ক্ষেত্রে একটি আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে একটি জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে চাইছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানামুখী তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই অতি আওয়ামী লীগ হয়ে নানারকম দুর্নীতি এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদেরকে তাদের দায়িত্বের বাইরে অযাচিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জেলা প্রশাসকদের কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এমনকি বরিশালে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের আচরণ নানা প্রশ্নের তৈরি করেছে। এই প্রেক্ষিতেই সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি শৃঙ্খলা মধ্যে আনতে চায়, তাদের লাগাম টেনে ধরতে চায়। আর এই কারণেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসেব দেওয়ার পুরনো বিধানটি নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমলারা নানা কৌশলে তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়া থেকে নিজেদেরকে বিরত রেখেছিল। সরকারকে তারা এটিও বোঝাতে চেয়েছিল যে, নির্বাচনের আগে এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার প্রভাব পড়বে নির্বাচনের উপরও।

কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে অনড় অবস্থানে গেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী প্রথম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যান এবং সেখানে তিনি জানিয়ে দেন যে, দুর্নীতির ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করা হবে। যারাই দুর্নীতি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছিলেন যে, এখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন অনেক বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে দুর্নীতিকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানারকম দুর্নীতি এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এটির ব্যাপ্তি বাড়ছে। এখন সরকারি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে-বেনামে বিভিন্ন রকম ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। অনেকের আত্মীয়-স্বজন নানা রকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। এ কারণে সম্পদের শুধু হিসেবে নয় একটি সামগ্রিক আচরণবিধি তৈরি করতে চায়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর আচরণবিধি-২০২২ সালে যে খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে তাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার-পরিজনদের ব্যবসা-বাণিজ্য তথ্য তাদের দিতে হবে, তাদের আত্মীয়-স্বজনদের রাজনৈতিক পরিচয়ও উপস্থাপন করতে হবে। এই সমস্ত তথ্য গুলো না দেওয়া হলে তাদের বিচার শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সম্পদের হিসেবসহ এ ধরনের তথ্যগুলো দিবেন কিনা, তা নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। কারণ এখন আমলারা অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিজেদের বাঁচানোর জন্য তারা অন্য কোনো অজুহাত দাঁড় করাতে পারেন বলেও বিভিন্ন মহল মনে করছেন। এর আগেও একাধিক জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও পরবর্তীতে আমলাতান্ত্রিক কৌশলে তাদেরকে তাদের দণ্ড মকুফ করে দেওয়া হয়। এখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসেব এবং আচরণবিধি শেষ পর্যন্ত কার্যকর হবে কিনা সেটাই হলো দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭