ইনসাইড থট

শ্রীলংকার মত সংকট এড়াতে অনেকেই আমাদেরকে অনুসরণ করতে পারে


প্রকাশ: 02/04/2022


Thumbnail

গভীর সংকটে শ্রীলংকা। জ্বালানি তেলের সংকট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট। বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট। ২৪ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ নেই। সড়ক বাতি জ্বলছে না। নিউজপ্রিন্ট নেই, স্কুলের পরীক্ষা বন্ধ। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের অভাব।  এসব আমদানি খরচের টাকা নেই। বিদেশী ঋণে জর্জরিত দেশটি। ঋণ শোধ দিতে পারছে না। চারিদিকে অভাব আর অভাব। হাহাকার। গণ অসন্তোষ বাড়ছে দিন দিন। রাস্তায় নেমে এসেছে মানুষ। বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে । কারফিউ চলছে। জরুরি অবস্থা চলছে। বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে কলম্বো।

মনে পড়ে ২০০৫ সালে কলম্বো ভ্রমণের কথা। এক মার্কিন ডলারে প্রায় ১০০ শ্রীলংকান রুপি পেয়েছি। দশ বছর পর ২০১৫ সালে ছিল ১৩০ রুপি। এক মাস আগেও ছিল ২০০ রুপি। আজ এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে শ্রীলংকান রুপি প্রায় ৩০০। কেন এত অবমূল্যায়ন ? বিশ্লেষকদের মতে, গত দেড় দশকে দেশটি অনেক উচ্চাভিলাষী, দীর্ঘমেয়াদি, ব্যয়বহুল ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বিপত্তিটা সেখানে নয়। অনেক প্রকল্পই জনকল্যাণে আসেনি।  অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়নি। এর মধ্যে হাম্বানটোটা সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর অন্যতম। হাম্বানটোটায় নতুন এয়ারপোর্ট  কার্যত অব্যবহৃত। এয়ারলাইন্সগুলো সেখানে যেতে চায় না।

একদিকে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প, অন্যদিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে উদাসীনতা  ও পরিকল্পনার অভাব। দেশটির খোদ জ্বালানি মন্ত্রীর ভাষ্যমতে, শ্রীলংকায় প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে ৮ শতাংশ। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে কোন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দেশটির সর্বমোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৬৫ শতাংশ আসে হাইড্রোপ্লান্ট থেকে। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় হাইড্রোপ্লান্ট থেকে আসছে মাত্র ২০ শতাংশ। বিদ্যুৎ সঙ্কটটি এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাকসে ক্ষমতাসীন হয়েই আয়কর এবং ভ্যাট কমান। তাতে সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে ২৫ শতাংশ। সরকার আরো ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে কোভিড মহামারীর কারণে পর্যটন ও রেমিট্যান্সখাতে ধস। দেশটি করোনাভাইরাস মহামারির আগে পর্যটন এবং রেমিটেন্স থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার আয় করতো।

পক্ষান্তরে বাংলাদেশের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো জনবান্ধব, যুগোপযোগী ও টেকসই। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে বা রাখবে। যেমন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল- কোনটাই নেতিবাচক প্রকল্প নয়। প্রকল্পগুলো সুপরিকল্পনা মাফিক। সুদূরপ্রসারী। উচ্চাভিলাষী, তবে অতি উচ্চাভিলাষী নয়। সম্পূর্ণ নিজ খরচে পদ্মা সেতু হচ্ছে। কিন্তু সরকার ভুলে যায়নি বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক যুগ আগের দুরবস্থার কথা। একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। একযুগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮টিতে। যার ফলে দেশে আজ শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে। অথচ ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎভোগী  ছিল। চলমান প্রকল্পগুলো  চালু হলে দেশের সার্বিক চিত্র বদলে যাবে। মাথাপিছু আয় বাড়বে। প্রবৃদ্ধি বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি সঞ্চার হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। সারা দেশে শিল্পায়নের ভারসাম্য রক্ষা হবে।  অর্থনীতির গতিশীল চাকা দেখতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। আর মাত্র তিন থেকে চার বছর। সবগুলো প্রকল্প ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে।

একটি অনুন্নত, উন্নয়নশীল বা মধ্যম আয়ের দেশের অতি উচ্চাভিলাষী ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প পরিহার করা উচিত। উন্নয়ন প্রকল্প হওয়া উচিত গবেষণাপ্রসূত, সুদূরপ্রসারী, টেকসই, যুগোপযোগী ও সর্বোপরি জনসম্পৃক্ত, জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধব। পাশাপাশি এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যেয়ে অতীব প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য- এগুলোর প্রতি উদাসীন হওয়া কাম্য নয়। যেমনটি শ্রীলংকা করেছে। গত আট বছরে সেদেশে কোন নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন নেই। অথচ এ সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। বিশ্লেষকদের মতে, মেগাপ্রকল্প হাতে নেয়া ও বাস্তবায়নে অন্যরা বাংলাদেশের নীতিমালা অনুসরণ করতে পারে। তাতে শ্রীলংকার মত সংকট এড়ানো সম্ভব।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭