ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

শ্রীলঙ্কায় প্রত্যাহার করা হলো জরুরি অবস্থা


প্রকাশ: 06/04/2022


Thumbnail

দেশজুড়ে জারি করা জরুরি অবস্থা তুলে নিলেও ক্ষমতাসীন জোট ও দলে ভাঙন ঠেকাতে পারেননি শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজপক্ষে। কয়েক ডজন এমপি ক্ষমতাসীন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই দেশে জারি করা জরুরি অবস্থা অবসানের ঘোষণা দেন তিনি। 

মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) রাতে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজপক্ষে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।  

বিবৃততে প্রেসিডেন্ট জানান, গত শুক্রবার (০১ এপ্রিল) জারি হওয়া জরুরি অবস্থার নির্দেশ প্রত্যাহার করেছেন।

শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থার ঘোষণা হয়েছিল গত ১ এপ্রিল। জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার ফলে সেনা ও পুলিশের হাতে প্রচুর ক্ষমতা চলে আসে। তারা বিনা বিচারে যে কোনো মানুষকে আটকে রাখার ক্ষমতা পায়। কিন্তু তারপরেও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলিও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। সাধারণ মানুষ পথে নেমেছে। এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজপক্ষে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এদিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসীন জোট ছেড়ে ৪১ জন পার্লামেন্ট সদস্য বেরিয়ে গেছেন। তারাও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন। ফলে পার্লামেন্টে জোট সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে গোতাবায়া।  

বিরোধীরা পার্লামেন্টে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। এর আগে বিরোধীরা সবাই রাষ্ট্রপতি রাজপক্ষের প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে যোগ দিতে অস্বীকার করে।

সংকটে জর্জরিত দেশটির নতুন নিয়োগকৃত অর্থমন্ত্রীও মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন নিয়োগকৃত অর্থমন্ত্রী আলী সাবরি দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন।  

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ ও অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে তার জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসার কথা ছিল সাবরির। কিন্তু আলোচনার আগেই তিনি দায়িত্ব ছাড়লেন।

আইএমএফ জানিয়েছে, তারা শ্রীলঙ্কার আর্থিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে।

অন্যদিকে, প্রবল আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে সরকার দুইটি কনসুলেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দুইটি দূতাবাস হলো, নরওয়ে ও ইরাক। এছাড়া সিডনির কনসুলেট অফিসও বন্ধ করা হয়েছে। 

শ্রীলঙ্কায় নজিরবিহীন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মাঝে দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা নির্বাহী রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দেশটির সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় একটি নতুন নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, গত ২০ বছর ধরে দেশের প্রত্যেক নেতা নির্বাহী রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কেউই সেটি করেননি।

খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র ঘাটতির পাশাপাশি ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর সময় থেকে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে; বর্তমানে তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

তীব্র অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকটের জেরে শ্রীলঙ্কায় ফলমূল এবং শাকসবজির দাম এখন আকাশচুম্বী। দেশটির খাদ্যপণ্য বিক্রেতা ফারুখ বলেন, ৩-৪ মাস আগে আপেল প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৫০০ রুপি। এখন তা ১ হাজার রুপি বিক্রি হচ্ছে। আগে প্রতি কেজি নাশপাতি ৭০০ রুপি দরে বিক্রি হতো, এখন প্রতি কেজি দেড় হাজার রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। মানুষের কাছে টাকা নেই।

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর তীব্র ঘাটতি দেখা দেওয়ায় বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর কাছে সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা। অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘিরে সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান জনরোষের মধ্যে রোববার শ্রীলঙ্কার মন্ত্রীসভার ২৬ মন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭