ইনসাইড বাংলাদেশ

চার বিষয়ে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা বিপরীতমুখী অবস্থানে


প্রকাশ: 06/04/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে দেউলিয়া প্রায় শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার এই অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং ঋণগ্রস্থতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশে অনেকেই মনে করছেন যে শ্রীলঙ্কার বেলুন উন্নয়ন যেভাবে চুপষে গেছে, ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প হয়তো একদিন শেষ হয়ে যাবে। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশের হবে বলেও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান গতকাল সুস্পষ্ট বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে মিলাবেন না এবং বাংলাদেশের সাথে শ্রীলঙ্কাকে মিলানো অর্থহীন। তিনি এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তবে নির্মোহ বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার উন্নয়নের গল্পটা একরকম নয়। বরং দুই দেশের মধ্যে চারটি বিপরীতমুখী অবস্থান রয়েছে বা পার্থক্য রয়েছে এগুলো হলো,  

১. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন: বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান খাত হলো পর্যটন খাত। এছাড়া পোশাক, চামড়া এবং চা রপ্তানি করে তারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো। অন্যদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান শক্তি হলো রেমিটেন্স এবং গার্মেন্টস শিল্প। গার্মেন্টসে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের দ্বিতীয়। আর অন্যদিকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছে। 

২. কৃষি: ভুল কৃষিনীতি শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে অর্গানিক বিপ্লবের নামে কৃষিতে সার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ফলে শ্রীলঙ্কা কৃষি উৎপাদন কমেছে অর্ধেক। অন্যদিকে বাংলাদেশের কৃষিনীতি সঠিক এবং সময়োপযোগী। বাংলাদেশ করোনার সময়ও খাদ্য উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়েছে। আর এই কারণেই খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে ভালো অবস্থানে গেছে এবং খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতার কারণেই বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলায় সফল হয়েছে। আর খাদ্যের ঘাটতির কারণেই শ্রীলঙ্কা আজকের এই কঠিন অবস্থায় পড়েছে বলে অনেকে মনে করেন। 

৩. বারবার বন্ধু বদল: শ্রীলঙ্কার উন্নয়নের গল্পে বারবার বন্ধু বদল করতে দেখা গেছে এবং বন্ধুত্বের সাথে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণও লক্ষ্য করা গেছে। শ্রীলঙ্কা একসময় ভারতের ঘেষা ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভারতবিদ্বেষ দেখা যায়। পরবর্তীতে  শ্রীলঙ্কা চীনমুখী হয়ে পড়ে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য নিজের দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়। বিমানবন্দর কিংবা সমুদ্রবন্দর স্থাপন ছিল চীনের উৎসাহে। যেটি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে কোনো অবদানই রাখেনি বরং ঋণের বোঝা বড় করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বন্ধু বদল করেনি। বরং সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য রক্ষা করেছে। বাংলাদেশ একদিকে যেমন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক করেছে তেমনি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাপানের মতো দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এককভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল হয়নি। আবার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সমান্তরাল, সুন্দর একটি সম্পর্ক বজায়ে রেখেছে। ফলে বাংলাদেশ উন্নয়ন করতে গিয়ে কখনো একক একটি রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়নি কিন্তু শ্রীলঙ্কা হয়েছে। 

৪. অগোছালো পরিকল্পনা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন: শ্রীলঙ্কার আজকের অবস্থার জন্য দায়ী হলো অগোছালো পরিকল্পনা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন। যে সমস্ত মেগা প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে সে প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই কোনো প্রয়োজন ছিল না। অপ্রয়োজনীয় এবং এগুলোর সাথে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততাই ছিল না। অন্যদিকে বাংলাদেশ যতগুলো পরিকল্পনা নিয়েছে সবগুলোই জনস্বার্থে এবং পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্য থেকে। এই কারণেই বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলে যারা মনে করছেন তারা এখনও ভুল হিসেব-নিকেশ করছেন বলেই অনেকে মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭